পেঁয়াজের ঝাঁঝ না কাটতেই ‘লবণের কেজি ১০০ টাকা’ গুজব !!
গত কয়েক মাস ধরেই পেঁয়াজের আকাশচুম্বি দামের কারণে সারাদেশের মানুষ দিশেহারা। পেঁয়াজের দাম নিম্মমূখী করতে সরকারি ভাবো ইতোমধ্যে পদক্ষেপ নিয়েছে। আগামীকাল মিশর থেকে বাংলাদেশে আনা হচ্ছে পেঁয়াজ। পেঁয়াজের বাজার যখন গরম ঠিক সেই মুহূর্তে সিলেটের জেলা শহরে লবণের দাম কেজি প্রতি ১শ টাকা নেয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
সিলেটে বিভিন্ন খুচরা ও পাইকারী বাজারে ‘লবণ’র দাম বেড়েছে বলে গুজব ছড়িয়েছে এক শ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ী। এমন খবর পেয়েই ক্রেতারা আগেবাগে লবণ ক্রয় করতে ভিড় জমিয়েছেন বিভিন্ন দোকানে। তবে এমন খবর গুজব বলে জানিয়েছে ভ্রাম্যমান আদালত।
সোমবার (১৮ নভেম্বর) সিলেট শহরে যখন টিসিবি ৪৫ টাকা দরে পেঁয়াজ বিক্রি করছে ঠিক তখনই বিভিন্ন উপজেলার বাজারে ‘লবণ’ নিয়ে চলে তেলেসমাতি। একশ্রেণীর ব্যবসায়ী সিলেটে লবণের দাম বেড়েছে প্রচার করলে মুহুর্তের মধ্যে ভিড় জমে যায় বিভিন্ন দোকানে।
এদিকে, প্রশাসন ও সিলেটের ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে বাজারে প্রচুর পরিমাণের লবণ মজুদ রয়েছে। দাম বাড়ার কোন কারণ নেই। গুজব ছড়িয়ে যারা বেশি দামে লবণ বিক্রি করবে তাদের বিরুদ্ধে আনানুগ ব্যবস্থা নিবে প্রশাসন।
জানা গেছে, প্রতি কেজি লবণের দাম ১০০-১২০ টাকা হয়ে গেছে, এমন গুজব ছড়াচ্ছে একটি অসাধু চক্র। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বলছে, এ ধরনের গুজব কেউ ছড়ালে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এমন গুজবে বিভ্রান্ত হয়ে বেশি মুনাফার লোভে বিভিন্ন বাজারে লবণ বিক্রি করা বন্ধ করে দিয়েছে এক শ্রেণির ব্যবসায়ী। এতে সাধারণ মানুষের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিচ্ছে। লবণের দাম বেড়ে যাচ্ছে, এমন গুজবে সাধারণ মানুষ লবণ কিনতে ভিড় করছেন বিভিন্ন হাটবাজারে।
আর দাম বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কায় অনেক ব্যবসায়ীও লবণ গুদামজাত করতে শুরু করেছেন।এদিকে, বিয়ানীবাজার উপজেলার সারপার, পাতাড়িপাড়াসহ মুড়িয়া ইউনিয়নের পূর্বদিক সীমান্ত এলাকার হাট-বাজারে লবন বিক্রি হচ্ছে ১শত থেকে ১২০ টাকায়। লবনের দাম বৃদ্ধির গুজব তুলে সাধারণ মানুষকে শংকায় ফেলে লাভবান হচ্ছে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী।
লবনের দাম বৃদ্ধির আতংক তুলে বেশি দামের লবন বিক্রির বিষয়টি নিশ্চিত করেন ওই এলাকার আলীম উদ্দিন আল মামুন নামে এক ক্রেতা। তিনি বলেন, একটি মহল পেঁয়াজের মতো লবনের দাম বাড়ার গুজব তুলেছে এলাকায়। এতে করে সারপারবাজার ও স্থানীয় গ্রামের দোকানের সব লবন কয়েক ঘন্টার মধ্যে বিক্রি হয়েছে। এ সুযোগে ব্যবসায়ীরা কেজি প্রতি ১শত থেকে ১২০ টাকায় লবন বিক্রি করেছেন।
বিয়ানীবাজার মধ্যবাজারের ব্যবসায়ী কয়ছর আহমদ বলেন, লবনের দাম বৃদ্ধির গুজব আমাদের কাছেও এসেছে। আমার সিলেটে যোগাযোগ করে এর কোন সত্যতা পাইনি। এছাড়া লবন কোম্পানির সংশ্লিষ্টদের কাছে এ নিয়ে যোগাযোগ করা হলে তারা এটি হুজব বলে উড়িয়ে দেন। তিনি জানান, আগের দামে (৩০ ও ৪০ টাকা) বিয়ানীবাজারে লবন বিক্রি হচ্ছে।
একইভাবে লবনের দাম বৃদ্ধির গুজবে বেশি দামে লবন বিক্রি করছেন বৈরাগীবাজারের ব্যবসায়ীরা। বৈরাগী ব্যবসায়ী আহমদ হোসেন বলেন, আগামী সপ্তাহে দাম বৃদ্ধির পাবে এমন খবর ছড়িয়ে দিয়েছে কে বা কারা। এ খবরটি ছড়িয়ে পড়লে লোকজন লবন কিনতে দোকানে ভীড় করেন এবং ব্যবসায়ীরা প্রতি কেজি ৫০ টাকা করে বিক্রি করছেন।
অপরদিকে, বৈরাগীবাজারে বেশি দামে লবন বিক্রি করায় ভ্রাম্যমান আদালত অভিযান চালিয়ে সিদ্দিক আহমদ নামের এক ব্যবসায়ীকে আটক করেছে।
সোমবার সন্ধ্যায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মৌসুমী মাহবুব এ ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করেন। এ সময় তাঁর সাথে ছিলেন বিয়ানীবাজার থানার ওসি অবনী শংকর কর।
এরআগে দুপুর থেকে লবনের দাম বাড়ার গুজব ছড়ায় একটি মহল। এ নিয়ে পুরো উপজেলায় লবনের দাম বাড়ার খবর পেয়ে সাধারণ মানুষ আতংকিত হয়ে দোকানে লবন কিনতে ভীড় করেন। এই সুযোগে ব্যবসায়ীরা লবনের নির্ধারীত দামের চেয়ে দ্বিগুণ ও তিনগুণ বেশি নিয়ে লবন বিক্রি করেছেন।
বিয়ানীবাজার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মৌসুমী মাহবুব বলেন, আটক ব্যবসায়ীকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তার বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি বলেন, উপজেলার কোথাও কোন ব্যবসায়ী বেশি দামে লবন বিক্রি করছেন এমন তথ্য পেলে আমরা আইনী ব্যবস্থা নেব। বেশি দামে লবন কিনলে দোকানের রশিদ সংগ্রহে রাখার আহবান করেন তিনি।
জকিগঞ্জের কয়েকজন ব্যবসায়ী বলেন, ‘শুনেছি লবণের দাম বেড়ে প্রতি কেজি ১০০ থেকে ১২০ টাকায় দাঁড়িয়েছে। এমন খবরে আমরা লবণ বিক্রি আপাতত বন্ধ রেখেছি।’কোথা থেকে এমন খবর পেয়েছেন, এর জবাবে তারা ‘শুনেছেন’ বলে জানান।
এ নিয়ে জকিগঞ্জ শহর বণিক সমিতির সদস্য সচিব বেলাল আহমদ বলেন, ‘এটা একটা নিছকই গুজব। বিভ্রান্তি সৃষ্টি করতে কেউ এ ধরণের গুজব ছড়াতে পারে।’
স্থানীয় কয়েকজন রাজনৈতিক নেতা বলছেন, সরকারবিরোধী একটি কুচক্রী মহল দেশের উন্নয়ন কর্মকান্ডগুলোকে আড়াল করতে গুজব ছড়িয়ে সাধারণ মানুষকে বিক্ষুব্ধ করতে চাচ্ছে। দেশের শান্তিপূর্ণ পরিস্থিতিকে অশান্ত করে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের জন্য এসব মিথ্যা বানোয়াট অপপ্রচারের আশ্রয় নিয়েছে একটি রাজনৈতিক মহল।
এ নিয়ে জকিগঞ্জ থানার ওসি মীর মো. আব্দুন নাসের বলেন, ‘গুজব সৃষ্টিকারীদের ধরতে আমরা মাঠে নেমেছি। বিভিন্ন হাট বাজারের ব্যবসায়ী সমিতির নেতৃবৃন্দের সাথে আমরা কথা বলে তাদেরকে জানিয়ে দিয়েছি, লবণের দাম বাড়েনি, কেউ লবণের দাম নিয়ে কারসাজি যাতে না করেন। এরপরও কোন ব্যবসায়ী গুজবে কান দিয়ে কারসাজি করলে কঠোর হস্তে দমন করা হবে।’
জকিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিজন কুমার সিংহ বলেন, ‘লবণের দাম বৃদ্ধির বিষয়টি সম্পূর্ণ গুজব। এ ধরণের গুজব ছড়িয়ে কেউ বিভ্রান্তি ছড়ানোর চেষ্টা করলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। আমরা বাজার মনিটরিং করে লবণের দাম স্বাভাবিক রাখবো।’
জকিগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান লোকমান উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘একটি মহল গুজব ছড়িয়ে ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের চেষ্টা করছে।’ গুজবে কান না দিতে তিনি সাধারণ মানুষের প্রতি আহবান জানান।
সূত্রঃ বিডি মর্নিং