বিদেশি বন্ধুর ব্যাগভর্তি টাকার ফাঁদে সর্বস্বান্ত হলেন বাংলাদেশী
দিনাজপুরের বাসিন্দা আপন রায়। বাবার কৃষি কাজ দিয়েই চলে তাদের সংসার। সংসারের হিমশিম মেটাতে আয়ের জন্য কিছু করতে চান আপন রায়। আপ্নের একদিন পরিচয় হয় আমেরিকান এক নারী সেনার সাথে। যার নাম এলিজাবেথ।
আপনের আর্থিক অবস্থার কথা শুনে তাকে ব্যবসার জন্য পুঁজি দিতে আগ্রহ প্রকাশ করেন এলিজাবেথ। এ যেন আপনের স্বপ্নের বাস্তবায়ন হতে চলেছে। আপনকে শর্ত দেওয়া হয়েছিলো কোন রকম অবৈধ ব্যবসা করা যাবে না। আপনও রাজি। এরপর আপনের জন্য ওই নারী বাক্সভর্তি ২ মিলিয়ন ডলার পাঠান। যা বিমানবন্দরে এলেও কাস্টমস নানা ছুতোয় টাকা চাইছে।
বক্সের জন্য ধারদেনা করে ৩০ হাজার টাকাও দিয়েছেন আপন। তারপরও বুঝতে পারেনি আপন। প্রতারণার এই কৌশলটি মোটামুটি পুরনো হলেও গেল কয়েক বছর ধরেই এই কৌশলে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে প্র’তারক চ’ক্র। ইংল্যান্ড-আমেরিকার নাগরিক পরিচয়ে বন্ধুত্ব করে ফাঁদ পাতা হয়। উপহার, টাকা দেওয়ার লোভ দেখালে; যিনি লোভে পড়েন তিনি হন স’র্বস্বান্ত। আর এই প্র’তারক চ’ক্রে বিদেশি নাগরিকদের পাশাপাশি আছে বাংলাদেশিও।
ভুক্তভোগী আপন জানায়, এই নারীর সাথে আমার প্রতিনিয়ত কথা হত। সে আমার সাথে দুই মাস ধরে প্রায়ই ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপে যোগাযোগ করতেন। আমাকে ছবিও দিয়েছিলো সে। আমার আর্থিক সমস্যার কথা শুনে তিনি নিজেই আমাকে ব্যবসার প্রস্তাব দেন। শর্ত দেন, টাকার বৈধ ব্যবহার করতে হবে। আর মু’ফা হলে তাকে শেয়ার দিতে হবে। তাতে আমি রাজি হই।
বক্সটাকে আনতে গত ৩ আগস্ট প্র’তারক চক্রের ডাচ বাংলা ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ৩০ হাজার টাকা জমা। পরে আবার যখন ১ লক্ষ টাকা চান তখনি আমার সন্ধে লাগে। এছাড়া অনেকেই আমাকে এটা ফাঁদ বলেছে। এই টাকা আমি এখন কিভাবে শোধ করবো বুঝতেছিনা। আমার পরিবার এমনিতেই অনেক অভাবে।
আপনের মতো গোপালগঞ্জের মাসুদ মিয়া দিয়েছেন ২ লাখ টাকা এবং চট্টগ্রামের জাফর দিয়েছেন ৮০ হাজার টাকা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বন্ধুত্ব করার পর প্রতারণার ফাঁদে ফেলে অর্থ হাতিয়ে নেওয়া এই চ’ক্রের কমপক্ষে ১৫ সদস্যকে গ্রেফতার করেছে সিআইডি, বিমানবন্দর আর্মড পুলিশ। আর এই চ’ক্রে বাংলাদেশিদের পাশাপাশি আছে নাইজেরিয়ান নাগরিক। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তারা আমেরিকান সেনা পরিচয় দিয়ে বন্ধুত্ব করে। কাউকে ডলার, কাউকে দামি উপহারের লোভ দেখিয়ে লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়।
এ প্রসঙ্গে ঢাকা কাস্টম হাউজের ডেপুটি কমিশনার (প্রিভেন্টিভ) মোহাম্মদ আবদুস সাদেক বলেন, এ ধরনের অ’ভিযোগ আমরাও পেয়েছি। কাস্টমস কখনও গ্রাহক’কে তার পণ্যের শুল্ক বা অন্য কোনও প্রয়োজনে টেলিফোন করে না। আর কাস্টমস শুল্ক নেয় সরকারি চালানে, কোনও ব্যক্তি’র নামের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে নয়। সবাই সচেতন হলেই এ ধরনের প্র’তারণা থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব।