অবৈধপথে ইউরোপ যাওয়া – যাত্রাপথের লোমহর্ষক বর্ণনা !!
‘বাংলাদেশ থেকে প্রথমে আজারবাইজানে আসি। আজারবাইজান থেকে ইরান, ইরান থেকে তুরস্ক, তুরস্ক থেকে গ্রিস, অবেশেষে। গ্রিস থেকে মেসিডোনিয়া হয়ে সার্বিয়াতে প্রবেশ করেছি। সার্বিয়াতে প্রবেশের পর আমার লক্ষ্য ছিলও হাঙ্গেরি কিংবা ক্রোয়েশিয়া হয়ে স্লোভেনিয়ার মধ্য দিয়ে ইতালিতে প্রবেশ করা’৷কথাগুলো প্রতিবেদককে বলছিলেন সার্বিয়ার নিকটবর্তী শরণার্থী ক্যাম্পে অবস্থান করা এক বাংলাদেশি। সার্বিয়া ও হাঙ্গেরির সীমান্তবর্তী একটি শহর সুবোটিচা। হাঙ্গেরির স্থানীয় ভাষায় এ শহরটিকে ডাকা হয় সাবাদকা নামে।
যাত্রাপথের বর্ণনা দিতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন ধরনের আদম দালাল আছে এখানে। নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকার চুক্তির মাধ্যমে দালালদের সহায়তায় হাঙ্গেরি কিংবা ক্রোয়েশিয়া পৌঁছানোর পর সেখানে দালাল কর্তৃক পূর্ব থেকে নির্ধারিত গাড়িতে করে ইতালির উদ্দেশ্যে পাড়ি জমানো যায়। আর এজন্য রুট ভেদে বিভিন্ন রকম প্যাকেজ আছে। সেক্ষেত্রে টাকার অঙ্কের হেরফের হয়’।
বিস্তারিত জানতে চাইলে বলেন, ‘সাধারণত ২০০০ থেকে ৬০০০ ইউরো দালালকে দিতে হয়। জঙ্গলের মধ্য দিয়ে পায়ে হেঁটে বর্ডার পার হতে কয়েকদিন লাগে। পানি ও কয়েকদিনের শুকনো খাবার তারা সঙ্গে নিয়ে রাজা-বাদশাহদের রাজ্য জয়ের মতো বর্ডার জয় করতে বেরিয়ে পড়েন। পথিমধ্যে জঙ্গলেই রাত কাঁটান’।
এত কষ্ট করে সীমান্তে পৌঁছানোর পর বর্ডার পুলিশের হাতে ধরা পড়লে পুনরায় ফিরিয়ে দেয়। কেউ কেউ পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে ঢুকতে পারে। কেউবা কয়েকবার চেষ্টার পর অবশেষে সফল হয়। অনেকে পথিমধ্যে মারাও যায়। সার্বিয়া কিংবা ক্রোয়েশিয়া অথবা হাঙ্গেরিতে পুলিশের হাতে ধরা পড়লে অনেক সময় নির্যাতনের শিকার হতে হয় বলে তিনি জানিয়েছেন।
তিনি জানান, তার এক ভাই আছেন যিনি সম্প্রতি বাংলাদেশ থেকে নর্থ সাইপ্রাসে পাড়ি জমিয়েছেন এবং তারও উদ্দেশ্যও নর্থ সাইপ্রাস থেকে পরবর্তীতে কোনও এক সময় গ্রিক সাইপ্রাস হয়ে ইউরোপের দিকে পা বাড়ানো। বলকান এবং নর্থ সাইপ্রাসের এ রুট দুটি বর্তমানে ইউরোপে প্রবেশের দ্বার হিসেবে অনেকের কাছে পরিচিত হয়ে উঠেছে। বাংলাদেশ থেকে এয়ারপোর্ট কন্ট্রাক্টের মাধ্যমে ইউরোপে পাঠানোর অভিযোগ করেন এ বাংলাদেশি।
ক্যাম্পে বসবাসের পরিবেশ সম্পর্কে জানতে চাইলে বলেন, ‘ক্যাম্পে তেমন কোনো সুবিধা নেই। সামান্য কয়েক বর্গইঞ্চি তাবুর মধ্যে তাদেরকে রাত কাঁটাতে হয়। রাতের বেলার ঠাণ্ডা বাতাসকে নিবারণ করার জন্য পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেই সেখানে। এছাড়া খাদ্য সমস্যা তো আছেই। তবে আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশসহ আফগান ও পাকিস্তানি শরণার্থীদের দ্বারা তাদের অনেককে মাঝে-মাঝে ছিনতাই-চাঁদাবজির শিকার হতে হয়’।
‘টাকা না দিলে তারা অনেককে ছুরিকাঘাত করে আহত করে। এছাড়াও সার্বিয়ার পুলিশ প্রশাসন বিভিন্ন সময় তাদের অনেককে বিভিন্নভাবে হয়রানি করে। তিনি আমাদেরকে জানান সার্বিয়া, ক্রোয়েশিয়া কিংবা হাঙ্গেরি ইউরোপের এ সকল দেশে রেসিজম সমস্যা রয়েছে এবং তাকেও স্থানীয় অনেক অধিবাসীদের থেকে মাঝে-মধ্যে হেনস্তার শিকার হতে হয়েছে’।
বলকান দেশগুলোকে ঘিরে বর্তমানে ইউরোপে হিউম্যান ট্রাফিকিং এর এক বিশাল নেটওয়ার্ক গড়ে উঠেছে। পায়ে হেঁটে, ঘন বন-জঙ্গল পাড়ি দিয়ে কিংবা পাহাড় বেয়ে এমনকি খরস্রোতা নদীতে সাঁতার কেঁটে রাতের অন্ধকারে কাঁটা তারের সীমানা পেরিয়ে অনেকে স্বপ্নের ইউরোপে পা রাখতে চায়। এক একটা দিন যেনও তাদের জীবনের এক একটি দুঃস্বপ্নের নাম। অর্ধাহারে কিংবা অনাহারে এমনকি গাছের পাতা খেয়েও অনেকে একেক দিন অতিবাহিত করেন।
ভাগ্য খারাপ হলে অনেক সময় কোনও কোনও দিন এক গ্লাস পানিও জোটে না। পথিমধ্যে বিভিন্ন কারণে অনেক প্রাণ ঝরে যায়। পরিবারের সদস্যদের কাছে প্রিয় মানুষটির লা’শও পৌঁছায় না অনেক সময়। পাওনা টাকা পরিশোধ না করতে পারলে অনেক সময় দালালদের হাতে পাশবিক নির্যাতনের স্বীকার হতে হয়।
সার্বিয়া মূলত বলকান রুটের মধ্য দিয়ে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন এবং একই সাথে ইউরোপের বিভিন্ন দেশের সমন্বয়ে গঠিত কমন বর্ডার ফ্রেম অর্থাৎ সেনজেনের অন্তর্ভুক্ত কোনও রাষ্ট্রে অবৈধভাবে প্রবেশের প্রধান কেন্দ্রবিন্দু। বাংলাদেশ থেকে আরম্ভ করে এশিয়া কিংবা এ অঞ্চলের স্থানীয় অনেকে এ হিউম্যান ট্রাফিকিং এর সাথে জড়িত এবং এটি একটি সুবিশাল নেটওয়ার্ক যার জাল বিশ্বব্যাপী রয়েছে।
প্রতিদিন শতশত কোটি টাকার ব্যবসা হয় এ রুটে। দুর্বল সামাজিক ও অর্থনৈতিক কাঠামো, আইনের অনুশাসনের অভাব ও স্থানীয় প্রশাসনের দুর্নীতিপরায়ণতার কারণে সার্বিয়া, মেসিডোনিয়া, আলবেনিয়া, কসোভো, মন্টিনিগ্রো, বসনিয়া অ্যান্ড হার্জেগোভিনা এ দেশগুলো হিউম্যান ট্রাফিকিং এর এক অভয়াশ্রম হিসেবে গড়ে উঠেছে।
সম্প্রতি লিবিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর মিজদাহতে মানবপাচারকারী চক্রের সাথে জড়িত সদস্যদের ছোঁড়া গুলিতে ২৬ জন বাংলাদেশি নিহত হওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের গণমাধ্যমে অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে নিউজ প্রকাশিত হয়েছে।
এমনকি বেশ কিছু গণমাধ্যমে দাবি করা হয়েছিল এ ঘটনায় নিহত কিংবা আহতদের অনেকেরই ভূ-মধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইতালিতে প্রবেশের জন্য লিবিয়াকে ব্যবহার করতে চেয়েছিলেন। এ ঘটনার প্রেক্ষিতে বিভিন্ন গণমাধ্যমে আবারও উঠে এসেছে বিশ্বব্যাপী জালের মতো ছড়িয়ে থাকা হিউম্যান ট্র্যাফিকিং এর কথা।
উন্নত জীবনের আশায় বাংলাদেশসহ পৃথিবীর স্বল্পোন্নত বিভিন্ন দেশ থেকে প্রতি বছর হাজারো মানুষ ইউরোপ, আমেরিকাসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে পাড়ি জমান। এদের মধ্যে অনেকের বৈধ ভিসা থাকলেও একটি বড় অংশের মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বিদেশ নামক মরীচিকার স্বপ্নে বিভোর হয়ে কোনও কিছু চিন্তা না করেই ছুটে পড়েন অজানার উদ্দেশ্যে।
বিশেষত অবৈধপথে যারা ইউরোপে পাড়ি জমাতে চান তাদের অনেকে একটা সময় লিবিয়া হয়ে ভূ-মধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইতালি অথবা গ্রিস কিংবা আজারবাইজান থেকে তুরস্ক হয়ে গ্রিস এবং গ্রিস থেকে ভূ-মধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইউরোপের অন্যান্য দেশ বিশেষত ইতালি কিংবা স্পেনে পৌঁছানোর চেষ্টা করতেন।
সম্প্রতি ইতালি ও গ্রিসের কোস্টগার্ড বাহিনীর তৎপরতার কারণে এবং একই সাথে পালেরমো প্রটোকলের কারণে এখন সহজে কেউ সাগরপথে এ রুট দিয়ে ইতালিতে কিংবা গ্রিসে প্রবেশ করতে পারে না। যদিও এ রুট দিয়ে প্রতিনিয়ত এখনও অনেক মানুষ ইউরোপের মাটিতে অনুপ্রবেশের চেষ্টা করেন।
বর্তমানে এ দুইটি রুটের পাশাপাশি আরও একটি রুট ইউরোপের বিভিন্ন দেশ বিশেষত ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন এবং একই সাথে ইউরোপের বিভিন্ন দেশের সমন্বয়ে গঠিত কমন বর্ডার ফ্রেম অর্থাৎ সেনজেনের অন্তর্ভুক্ত কোনও রাষ্ট্রে অবৈধভাবে প্রবেশের জন্য মোক্ষম হাতিয়ার হয়ে উঠেছে। আর এ রুটটি হচ্ছে বলকানের রুট।
তুরস্ক হয়ে অবৈধভাবে বর্তমানে যারা গ্রিসে প্রবেশ করছেন তাদের বেশির ভাগই ক্ষয়িষ্ণু অর্থনীতি এবং একই সাথে প্রধানমন্ত্রী কিরিয়াকোস মিস্তোতাকিসের অভিবাসন বিষয়ে অতি ডানপন্থী কিছু নীতির কারণে খুব বেশিদিন গ্রিসে স্থায়ী হতে পারছেন না। বাধ্য হয়ে তাদেরকে গ্রিস থেকে ইউরোপের অন্য কোনও দেশ বিশেষ করে ইতালি, ফ্রান্স, পর্তুগাল কিংবা স্পেন এ সকল দেশে পাড়ি জমানোর চিন্তা করতে হচ্ছে।
যেহেতু এখন চাইলে পূর্বের ন্যায় গ্রিস থেকে ভূ-মধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইতালিতে পৌঁছানো সম্ভব হচ্ছে না তাই তাদেরকে বিকল্প পথে ইতালি, ফ্রান্স, পর্তুগাল কিংবা স্পেন এ সকল দেশে পৌঁছানোর কথা চিন্তা করতে হচ্ছে। আর এজন্য বর্তমানে তাদের অনেকে বলকান অঞ্চলকে ব্যবহার করছেন গ্রিস হয়ে ইতালি, ফ্রান্স, পর্তুগাল কিংবা স্পেন এ সকল দেশে পৌঁছানোর রুট হিসেবে।
ইতালি, ফ্রান্স, পর্তুগাল কিংবা স্পেন এ সকল দেশের সরকারের অভিবাসন বিষয়ে নমনীয় বেশ কিছু নীতির কারণে সবার লক্ষ্য থাকে ইউরোপের এ চারটি দেশ। অবৈধভাবে ইউরোপে প্রবেশের পর সবাই প্রথমে চেষ্টা করে অ্যাসাইলাম বা রাজনৈতিক আশ্রয়ের জন্য আবেদন করতে। যদিও সম্প্রতি ইতালির প্রাক্তন ডেপুটি প্রধানমন্ত্রী ম্যাতেও সাল্ভিনি প্রশাসনের গৃহীত বেশ কিছু নীতির কারণে ইতালি অভিবাসন বিষয়ে এখন আর আগের মতো নমনীয় নেই বললেই চলে।
বলকান অঞ্চলটি দক্ষিণ-পূর্ব ইউরোপের একটি ঐতিহাসিক অঞ্চল হিসেবে পরিচিত। এশিয়া এবং ইউরোপের সমঙ্গস্থলে অবস্থিত হওয়ায় এ অঞ্চলটি ইউরোপের প্রবেশদ্বার হিসেবে পরিচিত। বুলগেরিয়া থেকে পূর্ব সার্বিয়া পর্যন্ত বিস্তৃত বলকান পর্বতমালার নামে এ অঞ্চলটির নামকরণ করা হয়েছে ‘বলকান’। সমগ্ৰ আলবেনিয়া, বসনিয়া অ্যান্ড হার্জেগোভিনা, মেসিডোনিয়া, মন্টিনিগ্রো, গ্রিস, কসোভো, সার্বিয়া, ক্রোয়েশিয়া এবং রোমানিয়া ও হাঙ্গেরির সামান্য অংশ বলকানের অন্তর্গত।
গ্রিস থেকে মেসিডোনিয়া হয়ে কিংবা গ্রিস থেকে আলবেনিয়া ও কসোভো, মন্টিনিগ্রো, বসনিয়া অ্যান্ড হার্জেগোভিনা হয়ে প্রথমে সবাই সার্বিয়াতে পা রাখার চেষ্টা করেন। সার্বিয়াতে পা রাখার পর সেখান থেকে দুই ভাবে ইতালি, স্পেন, ফ্রান্স, পর্তুগালসহ সেনজেনের অন্তর্ভুক্ত কোনও রাষ্ট্রে প্রবেশ করা যায়।
প্রথমটি হচ্ছে হাঙ্গেরি হয়ে যেহেতু হাঙ্গেরির সাথে সরাসরি সার্বিয়ার সীমান্ত সংযোগ রয়েছে, অন্যটি হচ্ছে সার্বিয়া থেকে ক্রোয়েশিয়া হয়ে স্লোভেনিয়া। এছাড়াও বসনিয়া অ্যান্ড হার্জেগোভিনা কিংবা মন্টিনিগ্রো থেকে ক্রোয়েশিয়া ও অতঃপর ক্রোয়েশিয়া থেকে স্লোভেনিয়া এভাবেও অনেকে সেনজেনের অন্তর্ভুক্ত কোনও রাষ্ট্রে প্রবেশ করার চেষ্টা করে।
সেনজেনের অন্তর্ভুক্ত কোনও রাষ্ট্রে কোনোভাবে প্রবেশ করতে পারলে সহজে এই তালিকার অন্তর্ভুক্ত কোনও রাষ্ট্রে যাতায়াত করা যায়। বিশেষ করে সীমান্ত উন্মুক্ত থাকার কারণে এবং একই সাথে সীমান্তবর্তী এলাকায় বিশেষ কোনও কারণ ছাড়া চেক পড়ার সম্ভাবনা না থাকায় সড়কপথ এবং রেলপথে সহজে সেনজেনের অন্তর্ভুক্ত এক রাষ্ট্র থেকে অন্য রাষ্ট্রে চলাচল করা যায়।
অনেকে তুরস্ক থেকে গ্রিসে না গিয়ে বুলগেরিয়াতে প্রবেশের চেষ্টা করে এবং বুলগেরিয়া থেকে রোমানিয়া অথবা ইউক্রেন হয়ে হাঙ্গেরি কিংবা বুলগেরিয়া থেকে সার্বিয়া হয়ে হাঙ্গেরি অথবা ক্রোয়েশিয়ার উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করে।বাংলাদেশের মানুষের মাপকাঠিতে ইউরোপ যেমন বলকান অঞ্চলগুলোর ক্ষেত্রে সে জিনিসটি সম্পূর্ণ ভিন্ন। প্রথমত ইউরোপের অন্যান্য অংশের তুলনায় বলকান দেশগুলো অর্থনৈতিক দিক থেকে সবচেয়ে দুর্বল। একই সাথে দুর্নীতি ও আইনের অনুশাসনের অভাবে এ অঞ্চলে অপরাধ প্রবণতার মাত্রা ইউরোপের অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক বেশি। বিশেষত সার্বিয়ার অবস্থান এ সূচকে সবার নিচে।
ভঙ্গুর অর্থনীতির সার্বিয়া, বসনিয়া অ্যান্ড হার্জেগোভিনা, আলবেনিয়া, কসোভো, মেসিডোনিয়াতে সেনজেন দেশগুলোর তুলনায় অনেক সহজে ভিসা মিলে আর এ সুযোগটি বর্তমানে কাজে লাগানোর চেষ্টা করছে অনেকে।
ঐতিহাসিকভাবে স্লোভেনিয়া, ইতালি ও ক্রোয়েশিয়া একে-অপরের সাথে নিবিড়ভাবে সংযুক্ত। স্লোভেনিয়ার রাজধানী লুবলিয়ানা হলেও প্রকৃতপক্ষে ইতালির ত্রিয়েস্তে ছিল প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পূর্ববর্তী সময় পর্যন্ত সবচেয়ে বড় শহর ছিল যেখানে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক স্লোভেনিয়ান জাতিগোষ্ঠীর মানুষের বসবাস ছিল।
এছাড়াও স্লোভেনিয়া এবং ক্রোয়েশিয়ার আড্রিয়াটিক সাগরের উপকূলবর্তী এলাকা যেমন: কপার, ইজোলা, পোর্তোরস কিংবা ক্রোয়েশিয়ার পুলা অথবা পরেচ এ সকল জায়গায় প্রচুর ইতালিয়ানদের বসবাস রয়েছে। এমনকি এ সকল জায়গায় যারা স্থায়ী হন তাদেরকে স্লোভেনিয়ান অথবা ক্রোয়েশিয়ান এবং ইতালিয়ান দুইটি ভাষায় দক্ষ হতে হয় এবং এ সকল জায়গার শিক্ষা-প্ৰতিষ্ঠানগুলোও উভয় ভাষায় পাঠদান করে থাকে।
সার্বিয়া, বসনিয়া অ্যান্ড হার্জেগোভিনা ও মন্টিনিগ্রো থেকে ক্রোয়েশিয়া হয়ে এভাবে অনেকে এখন স্লোভেনিয়ায় প্রবেশের চেষ্টা করছেন এবং স্লোভেনিয়া থেকে এ রুটে সহজে ইতালি পৌঁছানো যায়।
করোনাভাইরাস পরিস্থিতির ফলে ধংসপ্রাপ্ত হওয়া অর্থনৈতিক খাতকে পুর্নবাসন করতে ইতালি সম্প্রতি কৃষিখাতসহ বেশ কিছু সেক্টরে কাজ করা বারো লাখ অবৈধ অভিবাসীদেরকে বৈধ করার ঘোষণা দিয়েছে। স্পেন ও ফ্রান্সের পার্লামেন্টে দেশটিতে বসবাস করা অবৈধ অভিবাসীদেরকে বৈধ করার ব্যাপারে আলোচনা চলছে।এ ইস্যুকে পুঁজি করে অবৈধভাবে ইউরোপ প্রবেশের বিভিন্ন রুটে হিউম্যান ট্রাফিকিং আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে যেতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা মতামত দিয়েছে করেছে।
সূত্র- জাগো নিউজ