উত্তপ্ত পরিস্থিতি বাংলাও, শান্তির আহ্বান মমতা-ধনখড়ের !!
ভারতের সিএবি বিরোধিতার আঁচ এবার পশ্চিমবঙ্গেও। প্রায় গোটা রাজ্যেই ছড়িয়ে পড়ছে বিক্ষোভ। হাওড়ার উলুবেড়িয়া, মুর্শিদাবাদের বেলডাঙা, বহরমপুর-সহ বিভিন্ন এলাকায় অশান্তি শুরু হয়েছে। অশান্তি ছড়িয়েছে কলকাতাতেও। কোথাও রেললাইন, কোথাও জাতীয় সড়ক অবরোধ করে আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছেন বিক্ষোভকারীরা। রাজ্যে শান্তি বজায় রাখার আহ্বান জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আইনকে সম্মান জানানোর আহ্বান জানিয়েছেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়।
হাওড়ার উলুবেড়িয়া এবং মুর্শিদাবাদের বেলডাঙার পরিস্থিতি সবচেয়ে উত্তপ্ত। এ দিন প্রথমে ৬ নম্বর জাতীয় সড়ক অবরোধ করা হয় উলুবেড়িয়ায়। কয়েক হাজার বিক্ষোভকারী রাস্তা আটকে আগুন জ্বালিয়ে দেন। পরে অবরোধ শুরু হয়েছে রেল লাইনে। হাওড়া-খড়্গপুর শাখায় ট্রেন চলাচল সম্পূর্ণ বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। হাওড়া থেকে দক্ষিণ ভারতের দিকে যাওয়া বিভিন্ন দূরপাল্লার ট্রেন আটকে পড়েছে। হাওড়ায় ফেরার পথেও আটকে রয়েছে একাধিক দূরপাল্লার ট্রেন। দক্ষিণ-পূর্ব রেলের ওই শাখায় লোকাল ট্রেন পরিষেবাও বন্ধ হয়ে গিয়েছে। রেল লাইনের উপরে আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছেন বিক্ষোভকারীরা। পাথর ছুড়ে হামলা চালানো হচ্ছে আটকে থাকা ট্রেনগুলিতে। একটি ট্রেনের চালক এবং এক রেল পুলিশ কর্মী হামলায় জখম হয়েছেন বলে জানা গিয়েছে। আটকে পড়া যাত্রীরা জানাচ্ছেন যে, তাঁদের অনেকেও জখম হয়েছেন।
মুর্শিদাবাদের বেলডাঙাও শুক্রবার সকাল থেকেই উত্তপ্ত। জাতীয় সড়ক এবং রেললাইনে অবরোধ চলছে বেলডাঙায়। সেখানেও রেললাইনে আগুন জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে। জাতীয় সড়ক থেকে পুলিশ অবরোধ হঠানোর চেষ্টা করতেই রণক্ষেত্রের চেহারা নেয় গোটা এলাকা। ফলে অবরোধও সরানো যায়নি বলে জানা যাচ্ছে। শিয়ালদহ-লালগোলা শাখায় ট্রেন চলাচল বিপর্যস্ত। মুর্শিদাবাদের জেলা সদর বহরমপুরেও গোলমাল ছড়িয়েছে বলে জানা গিয়েছে। সেখানেও জাতীয় সড়ক অবরোধ হয়েছিল। পরে অবশ্য অবরোধ উঠে যায়। তবে জেলার আরও উত্তরে উমরপুরে পরিস্থিতি উত্তপ্ত বৃহস্পতিবার থেকেই। পার্শ্ববর্তী জেলা বীরভূম থেকেও অবরোধ বিক্ষোভের খবর আসতে শুরু করেছে।
এ ব্যাপারে এডিজি রেল অধীর শর্মা বলেন, ‘উলুবেড়িয়াতে কেবিন লক্ষ্য করে পাথর ছোড়ার ঘটনা ঘটেছে। লাইনে টায়ার জ্বালানো হয়। দুটো ট্রেন আটকে রয়েছে ওই স্টেশনে। হাওড়া এবং খড়্গপুরের রেল পুলিশ সুপার বাহিনী নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছছেন। বেলডাঙাতেও রেললাইনের উপর টায়ার জ্বালানো হয়। তবে কোথাও কেউ আহত হননি বলেই জানতে পেরেছি।’
কলকাতার পার্ক সার্কাস এলাকাও উত্তপ্ত হয়েছে। পার্ক সার্কাস সেভেন্ট পয়েন্ট অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখান কয়েকশো লোক। রাস্তায় টায়ার জ্বালানো হয়। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অশান্তির বিরুদ্ধে বার্তা দিয়েছেন। রাজ্যবাসীর উদ্দেশে তাঁর আহ্বান— বাংলায় শান্তি বহাল রাখুন। সিএবি-র প্রতিবাদ করতে হলে গণতান্ত্রিক উপায়ে তা করার পরামর্শ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
এদিকে রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়ও শান্তির আবেদন জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘সংসদে পাশ হওয়া আইনে ভরসা রাখুন। দেশের সংবিধানে ভরসা রাখুন। পশ্চিমবঙ্গের মানুষ শান্তিপ্রিয়। রাজ্যপালের এই অনুরোধ তাঁরা নিশ্চয়ই মানবেন। আইন নিজের হাতে তুলে নেবেন না।’ পশ্চিমবঙ্গের পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়। পশ্চিমবঙ্গ থেকে যে খবর আসছে তা নিয়ে রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়ের সঙ্গে ফোনে কথাও বলেছেন তিনি। সুত্রঃ আনন্দবাজার পত্রিকা।