উৎসব ও শঙ্কার ভোট আজ – ৬৪ শতাংশ কেন্দ্রই ঝুঁকিপূর্ণ !!
ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশেনে ভোটগ্রহণ আজ। নিকট অতীতের মধ্যে সবচেয়ে উৎসবমুখর পরিবেশে প্রচারণা শেষে এবার জনরায়ের পালা। প্রথমবারে মত রাজধানী বাসী ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোট দিয়ে নগর পিতা ও কাউন্সিলর নির্বাচিত করবে। তবে এ ভোটে উৎসবের পাশাপাশি শঙ্কাও রয়েছে। আধুনিক যন্ত্রে ভোট হলেও এ নিয়ে সংশয় প্রকাশ করছে বিএনপি। তবে নির্বাচন কমিশন (ইসি) বলছে ভোট সুষ্ঠু হবে।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদা বলেছেন, সকালে বিভিন্ন কেন্দ্র ঘুরে দেখেছি, নির্বাচনের সামগ্রী বিতরণ দেখেছি। রিটার্নিং কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেছি। কোনো অসুবিধা নেই। মালামাল পৌঁছে গেছে। ভোটগ্রহণ কর্মকর্তারা বলেছেন কোথাও কোনো রকমের নির্বাচনে বিষয়ে কোনো আশঙ্কা নেই। সবাইকে ভোটরদের কেন্দ্রে আসার আহ্বান জানান সিইসি।
তিনি বলেন, ভোটাররা নির্বিঘ্নে অবাধে অংশগ্রহণ করবেন। তাদের কোনো অসুবিধা নেই। প্রচারের সময় যেভাবে প্রার্থীরা অংশ নিয়েছেন, ভোটার সমর্থকরা যেভাবে রাস্তায় নেমেছে এসেছে, ওটা একটা পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। সব দল অংশ নিয়েছে। ভোট প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক হলে পরিবেশ সুন্দর হয়।
সিইসি বলেন, প্রস্তুতি শেষ। সামগ্রী চেলে গেছে। আইন-শৃক্সখলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ সকলে যার যার দায়িত্ব গ্রহণ করেছে। সব ধরণের বাহিনী তারা নিয়োজিত রয়েছে। তারা তাদের কাজ পরিচালনা করছে।অবৈধভাবে ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোট দিলে প্রচলিত আইনে সর্বোচ্চ শাস্তি দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটির ভোটে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সময়ের জন্য গঠিত মনিটরিং সেলের প্রধান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাইদুল ইসলাম।
শুক্রবার ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা, ইভিএমসহ সব শেষ প্রস্তুতির বিষয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে তিনি এসব কথা বলেন। সাইদুল ইসলাম বলেন, অনেক সময় ফিঙ্গার প্রিন্ট নিয়ে কনফিউশন থাকে। প্রিজাইডিং অফিসার অথবা অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রিজাইডিং অফিসফিসার ভোটারের আঙ্গুলের ছাপ নিয়ে সমস্যা চিহ্নিত করার পরও ভোট দিতে পারবে না, তিনি শুধু সমস্যা চিহ্নিত করার পর ব্যালট ওপেন করে দিতে পারবেন। কারণ তার দায়িত্ব কেন্দ্রের নির্বাচন পরিচালনা করা। তবে যাদের সমস্যা তাদের জন্য বলেছি তারা ১ শতাংশ ভোটারের সহযোগিতা করার জন্য ব্যালট ওপেন করে ভোটারকে ভোটের অনুমতি দিতে পারবে।
তিনি বরেন, ঢাকা দুই সিটিতে ২৮ হাজার ৮৭৮টি ইভিএম সেট প্রস্তুত রয়েছে। একটা অবাধ সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনে আমরা বদ্ধ পরিকর ।
সাইদুল ইসলাম বলেন, যদি কেউ অবৈধভাবে কারো ভোট দিতে চায় সেক্ষেত্রে আমাদের সতর্কতা থাকবে। কারণ যাদের ভোটের জন্য অফিসার ব্যালট ওপেন করে ভোটের অনুমতি দেবেন তাদের ফিঙ্গার প্রিন্ট ক্যাপচার করে রাখা হবে। পরে আমরা এটা চেক করব, ভার্চুয়াল চেকিংয়ের পর মূল সার্ভারের সঙ্গে পরীক্ষা করে দেখব। কেউ অবৈধভাবে ভোট দিয়েছে প্রমাণ পেলে আইন অনুযায়ী সর্বোচ্চ শাস্তি দেয়া হবে। বৈধ ভোটারকে ভোট প্রদানে সহযোগিতা করার জন্য কমিশন বদ্ধ পরিকর। আমরা প্রমাণ করতে চাই। আমরা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করতে চাই।
ভোটার চিহ্নিত করার প্রক্রিয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, একজন ব্যক্তি চিহ্নিত করার জন্য তার এনআইডি নাম্বার দিলে তাকে চিহ্নিত করতে পারব। স্মার্ট কার্ড নিয়ে আসলেও ভোটারকে শনাক্ত করতে পারব। পোলিংদের সামনে শনাক্তের প্রক্রিয়া দৃশ্যমান হবে। তবে কোন ভোটারের কাছে যদি কিছুই না থাকে সেক্ষেত্রে ভোটার তালিকা দেখে নম্বর দিলে কন্ট্রোল ইউনিটে তথ্য বের হবে। এছাড়াও প্রয়োজন অনুযায়ী নিয়ম অনুসরণ করে ১ শতাংশ ভোটারের ব্যালট ওপেন করতে পারবেন প্রিজাইডিং অথবা সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার। এর বেশি লাগলে রিটার্নিং কর্মকর্তা দেখেবে। প্রয়োজনে এরপর ইসির মাধ্যমে সমাধান করতে পারবে।
জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন (এনআইডি) অনুবিভাগের মহাপরিচালক বলেন, কমিশনের নির্দেশনা অনুযায়ী সব প্রস্তুতি নিয়েছি। আশা করি সুষ্ঠু নির্বাচন করতে পারব। ভোটকেন্দ্র চিহ্নিত করে ভোটের জন্য উপযোগী করতে সব কার্যক্রম সম্পন্ন করেছি। ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের সবাইকে প্রশিক্ষণ দিয়েছি।
ইসি কর্মকর্তারা জানান, ঢাকার দুই সিটি নির্বাচনে আইনশৃক্সখলা রক্ষায় ৬৫ প্লাটুন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) মাঠে নেমেছে। এ ছাড়া ১০ প্লাটুন বিজিবি রিজার্ভ থাকবে। সব বাহিনী মিলে ৫০ হাজারের মতো ফোর্স নিয়োজিত থাকবে। বিধি অনুযায়ী, ভোটের ৩২ ঘণ্টা আগে প্রচারণা শেষ হয়েছে। কাল (১ ফেব্রুয়ারি) দুই সিটিতে ভোট রয়েছে। এ দিন সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত একযোগে সব কেন্দ্রে ভোট চলবে ইভিএমে। ভোটের দুই দিন আগে ৩০ জানুয়ারি থেকে ১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করছে মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্স। ইসি কর্মকর্তারা জানান, দুই সিটিতে মোট প্রিসাইডিং অফিসার থাকবেন ২ হাজার ৪৬৮, সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার থাকবেন ১৪ হাজার ৪৩৪, পোলিং অফিসার থাকবেন ২৮ হাজার ৮৬৮ জন। এ ছাড়া কারিগরি সহায়তায় (সেনাবাহিনী) থাকবেন ৪ হাজার ৯৩৬। সব মিলে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা থাকবেন ৫০ হাজার ৭০৬ জন।
দুই সিটিতে আইনশৃক্সখলায় থাকবেন পুলিশের মোবাইল টিমের ১ হাজার ২৯০ সদস্য, পুলিশের স্ট্রাইকিং ফোর্সের ৪৩০ সদস্য, ৫২ জন রিজার্ভ পুলিশ, ১ হাজার ৪৩০ র্যাব সদস্য, ২ হাজার ২৫০ বিজিবি সদস্য, ভোটকেন্দ্রে আইনশৃক্সখলা বাহিনীর ৪১ হাজার ৯৫৬ সদস্য দায়িত্ব পালন করবেন। সব মিলিয়ে আইনশৃক্সখলা বাহিনীর ৪৭ হাজার ৮৭৬ ভোটগ্রহণকে কেন্দ্র করে দায়িত্ব পালন করবেন। এ ছাড়া নৌপুলিশও থাকবেন বলে ইসি সূত্রে জানা গেছে। এ নির্বাচনে শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশ, বিজিবি, আনসার ও ভিডিপি নিয়োগ করা হয়েছে। সাধারণ কেন্দ্রে ১৬ জন করে ও গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে ১৮ জন করে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য নিয়োজিত থাকবেন।
ইসি কর্মকর্তারা জানান, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে মোট সাধারণ ওয়ার্ড সংখ্যা ৫৪টি ও সংরক্ষিত ওয়ার্ড ১৮টি। এ সিটিতে মোট ভোটার সংখ্যা ৩০ লাখ ১০ হাজার ২৭৩ জন। এখানে সম্ভাব্য ভোটকেন্দ্র রয়েছে ১ হাজার ৩১৮টি ও ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা ৭ হাজার ৮৪৬টি। দক্ষিণ সিটিতে মোট সাধারণ ওয়ার্ড ৭৫, সংরক্ষিত ওয়ার্ড ২৫। এখানে মোট ভোটার সংখ্যা ২৪ লাখ ৫৩ হাজার ১৯৪ জন। সম্ভাব্য ভোটকেন্দ্র রয়েছে ১ হাজার ১৫০টি ও ভোটকেন্দ্র ৫ হাজার ৫৮৮টি।
ঢাকার ভোটে ৬৪ দশমিক ৭১ শতাংশ কেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ: আসন্ন ঢাকার দুই সিটি নির্বাচনে ৬৪ দশমিক ৭১ শতাংশ কেন্দ্রই ঝুঁকিপূর্ণ (গুরুত্বপূর্ণ)। তাই এসব কেন্দ্রে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় অতিরিক্ত ফোর্স নিয়োগ করবে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
ঢাকা উত্তর সিটি নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. আবুল কাসেম জানিয়েছেন, উত্তর সিটিতে ১ হাজার ৩১৮টি ভোটকেন্দ্রে ভোটগ্রহণ করা হবে। এর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র ৮৭৬টি। আর সাধারণ কেন্দ্র ৪৪২টি।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. আবদুল বাতেন জানান, দক্ষিণ সিটিতে ভোটকেন্দ্র আছে ১ হাজার ১৫০টি। এর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র ৭২১টি। আর সাধারণ কেন্দ্র ৪২৯টি।
দুই রিটার্নিং কর্মকর্তার দেওয়া তথ্য একীভূত করলে দেখা যায়, দুই সিটিতে ২ হাজার ৪৬৮ কেন্দ্রের মধ্যে ১ হাজার ৫৯৭টি কেন্দ্র গুরুত্বপূর্ণ। আর সাধারণ কেন্দ্র রয়েছে ৮৭১টি। অর্থাৎ ৬৪ দশমিক ৭১ শতাংশ কেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ।রিটার্নিং কর্মকর্তারা জানান, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দেওয়া তথ্যানুযায়ী গুরুত্বপূর্ণ ও সাধারণ কেন্দ্রের তালিকা করেছেন।
এবারের নির্বাচনে মেয়র পদের লড়াইয়ে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে রয়েছেন ছয়জন, দক্ষিণে রয়েছেন সাতজন।
উত্তরের মেয়রপ্রার্থীরা হলেন- আওয়ামী লীগের আতিকুল ইসলাম, বিএনপির তাবিথ আউয়াল, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের শেখ মো. ফজলে বারী মাসউদ, সিপিবির আহম্মেদ সাজেদুল হক রুবেল, এনপিপির আনিসুর রহমান দেওয়ান ও পিডিপির শাহীন খান।
আর দক্ষিণে রয়েছেন আওয়ামী লীগের শেখ ফজলে নূর তাপস, বিএনপির ইশরাক হোসেন, জাতীয় পার্টির সাইফুদ্দিন আহমেদ মিলন, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আব্দুর রহমান, এনপিপির বাহারানে সুলতান বাহার, গণফ্রন্টের আব্দুস সামাদ সুজন ও বাংলাদেশ কংগ্রেসের আকতারুজ্জামান ওরফে আয়াতুল্লাহ।এবার দুই সিটিতে মেয়র, সাধারণ কাউন্সিলর এবং সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলরসহ মোট ৭৪৯ প্রার্থী প্রতিদ্ব›িদ্বতা করছেন। এরমধ্যে মেয়র ১৩জন।
সূত্রঃ বিডি২৪লাইভ