এই বছরে পৃথিবী থেকে বিদায় নিলেন যারা !!
সমাপ্তির দিকে ২০১৯ সাল। তবে এ বছরেই পৃথিবী থেকে চিরতরে বিদায় নিয়েছেন বাংলাদেশের অনেক রাজনীতিবিদ। দেশ গড়ার পেছনে যাদের অনেক অবদান ছিল।
হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ
বাংলাদেশের রাজনীতিতে আলোচিত নাম হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। গত ১৪ জুলাই সকাল ৭টা ৪৫ মিনিটে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন জাতীয় পার্টির সাবেক এ চেয়ারম্যান। এর আগে ২৬ জুন তাকে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটলে ৪ জুলাই তাকে নেওয়া হয় লাইফ সাপোর্টে। এরপর ১৪ জুলাই সকালে মৃত্যু হয় তার।
১৯৩০ সালে পশ্চিমবঙ্গের কুচবিহার জেলায় জন্মগ্রহণ করেন এরশাদ।। এরপর ১৯৫২ সালে তৎকালীন পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে যোগ দেন, এরপরে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে বিভিন্ন পদে কর্মরত থেকে ১৯৭৮ সালে সেনাবাহিনীর প্রধান পদে অধিষ্ঠিত হন।এরপরে ১৯৮১ সালের ৩০ মে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের হত্যাকাণ্ডের পরে আবদুস সাত্তার নির্বাচিত হয়ে সরকার গঠন করে। ওই সরকারকে ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ উৎখাত করে জেনারেল এরশাদ রাষ্ট্র ক্ষমতা দখল করেন। এরপরে তিনি ১৯৮৩-১৯৯০ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি ছিলেন। তবে ১৯৯১ সালে গ্রেপ্তার হন এরশাদ। ছয় বছর জেলে থাকার পর ১৯৯৭ সালের ৯ জানুয়ারি তিনি জামিনে মুক্ত হন। এরপর থেকে বিভিন্ন জাতীয় নির্বাচনে জোট ও ভোটের রাজনীতিতে তিনি গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে রাষ্ট্রের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে ছিলেন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। উপজেলা পরিষদ প্রতিষ্ঠায় তার ভূমিকার কারণে এরশাদের অনুসারীরা তাকে ‘পল্লীবন্ধু’ খেতাবে ভূষিত করেছেন।
সাদেক হোসেন খোকা
গত ৪ নভেম্বর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের ম্যানহাটনে স্লোয়ান ক্যাটারিং ক্যানসার সেন্টারে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন সাবেক মন্ত্রী এবং অবিভক্ত ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের সর্বশেষ মেয়র সাদেক হোসেন খোকা। এরপর ৭ নভেম্বর তাকে জুরাইন কবরস্থানে সমাহিত করা হয়। এর আগে ১৯৫২ সালের ১২ই মে ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন তিনি। ১৯৭১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হিসেবে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন খোকা। ১৯৯১ সালের জাতীয় নির্বাচনে ঢাকা-৭ আসন (সূত্রাপুর-কোতোয়ালি) থেকে বিএনপির মনোনয়নে জয়ী হন তিনি। এর পর তাকে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী করা হয়।
১৯৯৬ সালের নির্বাচনে ঢাকার আটটি আসনের মধ্যে সাতটিতে বিএনপি প্রার্থী পরাজিত হলেও একমাত্র খোকা নির্বাচিত হন। ২০০১ সালের নির্বাচনেও সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে মৎস্য ও পশুসম্পদমন্ত্রী হন। পরে তাকে ঢাকার মেয়র পদে মনোনয়ন দেয়া হয়। তিনি বিপুল ভোটে অবিভক্ত ঢাকার মেয়র নির্বাচিত হন। ২০১১ সাল পর্যন্ত টানা ১০ বছর ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ছিলেন তিনি। ২০০৮ সালে তার বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে একটি মামলা করে দুদক। ২০১৪ সালের ১৪ মে সাদেক হোসেন খোকা চিকিৎসার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে যান। এরপর থেকে সেখানেই চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি। এ সময়কালে দেশে তার বিরুদ্ধে কয়েকটি দুর্নীতি মামলা হয়। এর কয়েকটিতে সাজাও দেয়া হয় তাকে।
মইন উদ্দীন খান বাদল
জাসদ নেতা, চট্টগ্রাম-৮ আসনের সংসদ সদস্য ও মুক্তিযোদ্ধা মইন উদ্দীন খান বাদল গত ৭ নভেম্বর ভারতের বেঙ্গালুরুতে নারায়ণ হৃদ্রোগ ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। এর আগে তিনি ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রামের বোয়ালখালীতে জন্মগ্রহণ করেন। ষাটের দশকে ছাত্রলীগের ‘নিউক্লিয়াসে’ যুক্ত বাদল একাত্তরে ভারতে প্রশিক্ষণ নেন এবং পরে যোগ দেন মুক্তিযুদ্ধে। চট্টগ্রাম বন্দরে অস্ত্র বোঝাই জাহাজ সোয়াত থেকে অস্ত্র খালাস প্রতিরোধের অন্যতম নেতৃত্বদাতা ছিলেন মইন উদ্দীন খান বাদল।
মুক্তিযুদ্ধের পর সমাজতান্ত্রিক রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হন তিনি। জাসদ হয়ে বাসদ এবং পরে আবারো জাসদে ফেরেন। এরশাদের সামরিক শাসনের সময় তাকে কারাগারে যেতে হয়। ২০১৬ সালের ১২ মার্চ জাসদের জাতীয় কাউন্সিলে আবার দুই ভাগ হয় দলটি। হাসানুল হক ইনু ও শিরীন আখতার নেতৃত্বাধীন অংশটি ইসির স্বীকৃতি পাওয়ার পর শরীফ নুরুল আম্বিয়া ও সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হক প্রধান নেতৃত্বাধীন অংশটি বাংলাদেশ জাসদ নামে আলাদা দলের স্বীকৃতি চায়। তবে ইসি তাদের নিবন্ধন দেয়নি। এই অংশের কার্যকরী সভাপতির দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন মইন উদ্দীন খান বাদল।
চট্টগ্রাম ৮ (চাঁদগাও-বোয়ালখালী) আসনের তিনবারের সাংসদ মইন উদ্দীন খান বাদল সর্বশেষ একাদশ জাতীয় সংসদের ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা এবং মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সদস্য ছিলেন।