একটুখানি হাসিঠাট্টা – এত্তবড় কবীরাহ গোনাহ !!
একটা ঘটনা বলি। আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. ছিলেন ছোটখাটো এবং জীর্ণশীর্ণ দেহের অধিকারী। পায়ের গোছা কাঠখড়ির মত খুব সরু। একবার মদীনায় তুফান বইছিল। কোনো কারণে আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. দাড়ালেন।
ব্যস। বাতাস তাকে উল্টে ফেলে দেয়। উপস্থিত সবাই তখন হো হো করে হেসে দেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওসাল্লাম বললেনঃ তোমরা তার চিকন পা দেখে হাসছো? এই পা দুইটা যদি বিচার দিবসে নেকির পাল্লায় ওজন করা হয়া, আল্লাহর কসম! তা অহুদ (মদীনার সবচেয়ে বড়) পাহাড়ের চেয়েও ভারী হবে!নবীপত্নী উম্মে সালামাহ রা. ছিলেন খর্বকায়। একবার আইশা রা. কথা প্রসঙ্গে বললেন, ঐ যে খাটো মহিলাটা..? এতে উম্মে সালামাহ বেশ মর্মাহত হোন।
তখন এ আয়াত নাযিল হয়ঃ
يٰٓأَيُّهَا الَّذِينَ ءَامَنُوا لَا يَسْخَرْ قَوْمٌ مِّن قَوْمٍ عَسٰىٓ أَن يَكُونُوا خَيْرًا مِّنْهُمْ وَلَا نِسَآءٌ مِّن نِّسَآءٍ عَسٰىٓ أَن يَكُنَّ خَيْرًا مِّنْهُنَّ ۖ وَلَا تَلْمِزُوٓا أَنفُسَكُمْ وَلَا تَنَابَزُوا بِالْأَلْقٰبِ ۖ بِئْسَ الِاسْمُ الْفُسُوقُ بَعْدَ الْإِيمٰنِ ۚ وَمَن لَّمْ يَتُبْ فَأُولٰٓئِكَ هُمُ الظّٰلِمُونَ
“হে মু’মিনগণ! কোন পুরুষ যেন অন্য পুরুষকে ঠাট্টা-বিদ্রূপ না করে, হতে পারে সে বিদ্রূপকারীর চেয়ে উত্তম। আর নারীরা যেন অন্য নারীদের ঠাট্টা-বিদ্রূপ না করে, হতে পারে তারা বিদ্রূপকারিণীদের চেয়ে উত্তম। তোমরা একে অন্যের নিন্দা করো না, একে অপরকে মন্দ নামে ডেকো না। ঈমান গ্রহণের পর (ঈমানের আগে কৃত অপরাধকে যা মনে করিয়ে দেয় সেই) মন্দ নাম কতই না মন্দ! (এ সব হতে) যারা তাওবাহ না করে তারাই যালিম।”
[ সূরা হুজরাতঃ ১১]
তাফসীর : আলোচ্য আয়াতে তিনটি বিষয়কে হারাম করা হয়েছে। কঠোরভাবে নির্দেশ দেয়া হয়েছে, যেন মুমিন নরনারীগণ এ থেকে বেঁ’চে থাকে।
১। একে অন্যকে নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করা। ২। দোষ চর্চা করা। ৩। একে অন্যকে মন্দ নামে ডাকা।
এখন আমরা ১ নং পয়েন্ট নিয়ে আলোচনা করব।
কাউকে মানুষের সামনে এমনভাবে উপস্থাপন করা বা তার দোষ বর্ণনা করা যে, লোকেরা হেসে উঠে। কিংবা মানুষকে হাসানোর জন্য কাউকে টার্গেট করা। র্যাগ দেয়া। উপহাস মুখে বলার দ্বারা যেমন হতে পারে, তেমনি হতে পারে অঙ্গভঙ্গির মাধ্যমেও।
আল্লাহ তা’আলা বিষয়টার গুরুত্ব বুঝাতে অতিরিক্ত দুইটা বিষয় যুক্ত করেছেন।
(ক) তিনি বলে দিলে পারতেন, “তোমরা একে অপরকে উপহাস কর না”। কিন্তু সেটা না করে তিনি ভেঙ্গে ভেঙ্গে বলেছেন। কোনো পুরুষ যেন অপর পুরুষকে নিয়ে মশকারা না করে। কোনো নারী যেন অপর নারীকে নিয়ে মশকারা না করে।
এখন প্রশ্ন হতে পারে, তাহলে লিঙ্গ ভিন্ন হলে কি উপহাস করা বৈধ? মানে নারী পুরুষকে, পুরুষ নারীকে উপহাস করতে পারবে? যদি তা না হয়, তাহলে নারীকে নারী এবং এবং পুরুষকে পুরুষের সাথেই কেন সীমাবদ্ধ রাখলেন?
আসলে এর দ্বারা আল্লাহ জাল্লাশানুহু এই দিকে ইশারা করেছেন, মুমিন নর-নারীর জন্য তো পর্দা করা ফরজ। তাদের মেলামেশাই নিষেধ। এখন মেলামেশা বা দেখা সাক্ষাতই যখন হবে না, তখন উপহাস করার সুযোগ আসবে কোত্থেকে!!
(খ) উপহাসের ভিত্তিটা হল ছোট-বড়, উঁচু-নীচু এর মানসিকতা। সাধারণত উপহাসকারী নিজেকে বড় এবং উপহাসের শিকার ব্যক্তিকে তুচ্ছ জ্ঞান করে থাকে। কেউ তার তার চেয়ে বড় বা সম্মানিত ব্যক্তি সচারাচর উপহাস করে না। তো মানুষ বড়-ছোট ক্যাটাগরি নির্ধারণ করে বাহ্যিক অবস্থা বিবেচনা করে। আল্লাহ তা’আলা সেই ক্যাটাগরির ধার ধারেন না। তিনি মানুষে বাহির দেখেন না, দেখেন ভেতর। তিনি মানুষের সম্পদ দেখেন না, দেখেন আমল। তাই মানুষের বানানো “ক্যাটাগরি” বাতিল করতঃ উপহাসের মূলে আঘাত করে আয়াতে যুক্ত করেছেনঃ
“হতে পারে যাকে উপহাস করা হয়, সে উপহাসকারী বা উপহাসকারিনী অপেক্ষা (আল্লাহর নিকট) উত্তম।”আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. বলতেনঃ “আমি যদি কোনো কুকুরকেও উপহাস করি, আমার ভয় হয়, এ জন্য আমাকে কুকুর বানিয়ে দেয়া হয়।”
আমর ইবনে শুরাহবিল রহি. বলতেনঃ “বকরির ওলানে মুখ লাগিয়ে কাউকে দুধ পান করতে দেখে যদি আমার হাসি চলে আসে, ভয় হয় না জনি কখন আমাকেও অনুরূপ করে দেয়া হয়।”
উপহাস বা ট্রল কতটা গর্হিত কাজ, ভাবা যায়?
[ সূত্রঃ তাফসীরে কুরতুবী। তাফসীরে মা’আরিফুল কুরআন]
বাকি দুই পয়েন্টের আলোচনা মূল বইয়ে থাকবে ইনশাআল্লাহ।
বইয়ের নামঃ একটি মজার তাফসীর বলি” (প্রকাশিতব্য)
লেখকঃ মাসউদ আলিমী।