এখন চীন থেকে কাউকে ফেরত আনা সম্ভব নয় – পররাষ্ট্রমন্ত্রী !!
প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব আতঙ্কে চীনের হুবেই প্রদেশ থেকে দেশে ফিরতে চাওয়া ১৭১ বাংলাদেশিকে আপাতত দেশে আনা সম্ভব হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। তবে তিনি জানান, নিজ ব্যবস্থায় তারা চাইলে আসতে পারবেন। প্রয়োজনে খরচ বহন করবে সরকার।
শনিবার ঢাকার সোনারগাঁও হোটেলে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এমন মন্তব্য করেন। ড. মোমেন বলেন, ‘যারা এখন আসতে চাচ্ছেন, তাদের জন্য আমরা অনেক খরচ করেছি। তারপরও সম্ভব হচ্ছে না। বিমানের ক্রুরা কেউ বাইরে যেতে পারছেন না, বিমান কোথাও যেতে পারছে না। সিঙ্গাপুর পর্যন্ত যেতে পারছে না।’
তিনি বলেন, ‘একমাত্র চাইনিজ চার্টার্ড ফ্লাইটে তাদের আনা সম্ভব হতো। একপর্যায়ে চীন রাজিও হয়েছিল। কিন্তু পরে তারা না করে দিয়েছে। আমরা তো কোনো ফ্লাইট পাঠাতে পারছি না, কোনো ক্রুও যেতে চাচ্ছেন না।’চীনে থাকা বাংলাদেশি নাগরিকদের আরও কিছুদিন অন্তত সেখানে থেকে তারপর দেশে ফেরার পরামর্শ দেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে আটকে পড়া বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা খাদ্য সংকটে পড়েছে বলে জানানো হয়েছে। এ প্রসঙ্গে ড. মোমেন বলেন, তাদের খাওয়া-দাওয়া চাইনিজরা এনশিওর (নিশ্চিত) করছে। ২৩টি জায়গায় বাংলাদেশিরা থাকে, সব জায়গায়ই খাবার-পানি সময়মতো পাঠিয়ে দিচ্ছে তারা। তারা খাবার সংকটে আছে বলে যেসব কথা শোনা যাচ্ছে, তা সঠিক নয়।
মন্ত্রী আরও বলেন, ‘আমাদের দূতাবাস ওদের সঙ্গে সবসময় যোগাযোগ রাখছে। ৩৮৪ জনের একটা গ্রুপ কনটিনুয়াসলি খোঁজ নিচ্ছে তাদের।’উল্লেখ্য, করোনাভাইরাসের উৎপত্তিস্থল চীনের উহান শহর থেকে গত ১ ফেব্রুয়ারি বিমানের একটি উড়োজাহাজে ৩১২ বাংলাদেশিকে দেশে ফেরত আনা হয়।
কিন্তু উহানে যাওয়া ওই পাইলটদের ঢুকতে দিচ্ছে না অন্য দেশ। ফলে বিপাকে পড়েছে বাংলাদেশ বিমান। এদিকে চীনের বিভিন্ন শহরে অবরুদ্ধ অবস্থায় দিন কাটানো বাংলাদেশিরা তাদের দেশে ফেরত আনার আকুতি জানাচ্ছেন বারবার।
হুবেই প্রদেশের উহান থেকে করোনাভাইরাস ছড়ানোর পর এতে আক্রান্ত হয়ে এখন পর্যন্ত ৭২৩ জনের মৃত্যু হয়েছে চীনে। এদের মধ্যে একজন মার্কিন নাগরিক। চীনের বাইরে ফিলিপাইনে একজন ও হংকংয়ে একজনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ৩৪ হাজার ৫৪৬ জন।
চীনসহ বিশ্বের ২৮টি দেশ ও অঞ্চলে এ ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। বাকি ২৭টি দেশ ও অঞ্চল হলো- অস্ট্রেলিয়ায়, বেলজিয়াম, কম্বোডিয়া, কানাডা, ফিনল্যান্ড, ফ্রান্স, জার্মানি, হংকং, ভারত, ইতালি, জাপান, ম্যাকাও, মালয়েশিয়া, নেপাল, রাশিয়া, সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ কোরিয়া, স্পেন, শ্রীলঙ্কা, সুইডেন, তাইওয়ান, থাইল্যান্ড, ফিলিপাইন, আরব আমিরাত, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র এবং ভিয়েতনাম।
এর আগে চীনে বাংলাদেশ দূতাবাস কী করেছে, তা ভিডিওবার্তা ও ই-মেইলের মাধ্যমে তুলে ধরেন রাষ্ট্রদূত মাহবুব উজ জামান। সেখানে তিনি উল্লেখ করেন, উহান সিটি থেকে ৩১২ বাংলাদেশি শিক্ষার্থীকে সরিয়ে নেয়ার ক্ষেত্রে দূতাবাস সফলভাবে কাজ করছে। বাকিদের ফেরানোর প্রক্রিয়া কখন শুরু হতে পারে তা পরিস্থিতির বাস্তবতার ওপর নির্ভর করছে।বাংলাদেশের নাগরিকদের কল্যাণ এবং সুরক্ষা নিশ্চিত করতেই দূতাবাস কাজ করছে বলে জানান তিনি।
প্রবাসী বাংলাদেশিদের নিয়ে আয়োজিত ওই সেমিনারে অংশ নিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রবাসী সরকারের নানা উদ্যোগের কথা জানান। পরীক্ষামূলকভাবে চালু হওয়া দূতাবাস অ্যাপের মাধ্যমে দূতাবাস-সংক্রান্ত সেবা গ্রহণের জন্য প্রবাসীদের আহ্বান জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী। এছাড়া প্রবাসী বাংলাদেশি যারা ভালো অবস্থানে আছেন তাদের দেশে বিনিয়োগ ও বাণিজ্য বাড়ানোর আহ্বান জানান তিনি। একই সঙ্গে রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে যার যার অবস্থান থেকে পাবলিক ডিপ্লোম্যাসি বাড়ানোরও কথা বলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।