করোনার চিকিৎসায় আশা জাগাচ্ছে যে ওষুধ !!
খ্যাতনামা অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে নভেল করোনাভা’ইরাসের ডিএনএ ভেক্টর ভ্যাকসিন বানাচ্ছে ব্রিটিশ-সুইডিশ ওষুধ নির্মাতা প্রতিষ্ঠান অ্যাস্ট্রজেনেকা। পাশাপাশি,করোনাজনিত কোভিড-১৯ চিকিৎসায় নানা রকম ওষুধের পরীক্ষাও চালাচ্ছে এ জৈবপ্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান। এ প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব উদ্যোগে ব্লাড ক্যানসারের ওষুধ কোভিড-১৯ রোগীদের ওপর পরীক্ষামূলকভাবে প্রয়োগ করা হয়েছিল। প্রাথমিক ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের ফলাফল ইতিবাচক বলে দাবি করেছে অ্যাস্ট্রজেনেকা। বার্তা সংস্থা রয়টার্স ও সংবাদমাধ্যম দ্য ওয়াল এ খবর জানিয়েছে।
অ্যাস্ট্রজেনেকার ট্রায়ালের প্রতিবেদন ‘সায়েন্স ইমিউনোলজি’ জার্নালে প্রকাশিত হয় গত শুক্রবার। অ্যাস্ট্রজেনেকার গবেষকরা জানিয়েছেন, ব্লাড ক্যানসারের ওষুধ ‘ক্যালকুয়েন্স’ দেওয়া হয়েছিল কোভিড-১৯ রোগীদের। তাঁদের মধ্যে ১১ জনই ছিলেন ভেন্টিলেটর (কৃত্রিম শ্বাসপ্রশ্বাস ব্যবস্থা) সাপোর্টে। অ্যাস্ট্রজেনেকার দাবি, ‘ক্যালকুয়েন্স’ ওষুধ দেওয়ার পরে দেখা যায়, সংকটাপন্ন রোগীদের শরীরে নভেল করোনাভা’ইরাস সংক্রমণজনিত শ্বাসকষ্ট ও তীব্র প্রদাহ ধীরে ধীরে কমেছে। করোনায় আ’ক্রান্ত ১১ জনের মধ্যে ৯ জন রোগীই নাকি সংক্রমণ থেকে সেরে উঠেছেন এবং তাঁদের হাসপাতাল থেকে ছেড়েও দেওয়া হয়েছে।
অ্যাস্ট্রজেনেকার রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট সেন্টার রয়েছে কেমব্রিজে। তা ছাড়া মেরিল্যান্ড ও সুইডেনেও অ্যাস্ট্রজেনেকার রিসার্চ ইউনিট আছে। ক্যানসার, কার্ডিওভাস্কুলার রোগ, খাদ্যনালীর সংক্রমণ, নিউরোসায়েন্স, ইনফ্ল্যামেশন বা প্রদাহজনিত রোগ নিয়ে গবেষণা করে এ বায়োটেক কোম্পানি। কোভিড-১৯-এর ভ্যাকসিন নিয়ে অক্সফোর্ডের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে অনেকদিন ধরেই গবেষণা চালাচ্ছে এ সংস্থা।
কোভিড-১৯ সংক্রমণে রোগীদের মধ্যে যে ধরনের উপসর্গ দেখা যাচ্ছে, তার মধ্যে বেশিরভাগের শরীরেই ‘সাইটোকাইন স্টর্ম’ বা তীব্র প্রদাহজনিত রোগ দেখা গেছে। সংকটাপন্ন ভেন্টিলেটর সাপোর্টে থাকা রোগীদের মধ্যে এ প্রদাহ সবচেয়ে বেশি দেখা গেছে। অ্যাস্ট্রজেনেকা জানিয়েছিল, এ ধরনের রোগ সারাতে ব্লাড ক্যানসারের ওষুধ কাজে আসতে পারে। গত ১০-১৪ দিনের ডোজে সে ওষুধেরই ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল চালাচ্ছিল তারা।
ক্যালকুয়েন্সের জেনেরিক নাম হল অ্যাকালাব্রুটিনিব। এ ওষুধটি আসলে ‘কাইনেজ ইনহিবিটর’। ক্যানসার কোষে এ কাইনেজ এনজাইমের পরিমাণ বাড়তে থাকে। একে আটকাতে এ ওষুধ ব্যবহার করা হয়।
গবেষকদের দাবি ‘অ্যাকালাব্রুটিনিব’ ওষুধ সাইটোকাইন স্টর্ম আটকাতে পারে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, সার্স-কোভ-২ ভা’ইরাসের সংক্রমণে শরীরে যে অধিক প্রদাহ তৈরি হয়, তার কারণ হল ‘সাইটোকাইন’ নামক প্রোটিনের অধিক ক্ষরণ। এ প্রোটিনের কাজ হলো বাইরে থেকে কোনো সংক্রামক ব্যাকটেরিয়া, ভা’ইরাস বা প্যাথোজেন ঢুকলে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গের কোষে সে বিপদ সংকেত পৌঁছে দেওয়া। অজানা সংক্রামক প্রোটিন দেখলেই ঝড়ের গতিতে কোষে কোষে বিপদবার্তা পৌঁছে দেয় এ সাইটোকাইন প্রোটিন।
এ প্রোটিন ক্ষরণেরও একটা নির্দিষ্ট মাত্রা আছে। যদি দেখা যায় সাইটোকাইন ক্ষরণ বেশি হচ্ছে বা কম হচ্ছে, তাহলে শরীরের ভারসাম্য ক্ষতিগ্রস্ত যায়। কোভিড-১৯ সংক্রমণ হলে এ সাইটোকাইনের ক্ষরণ প্রয়োজনের চেয়ে বেশি হয়। এত বেশি প্রোটিন নিসৃত হয় যে বিপদবার্তা পৌঁছে দেওয়ার বদলে সে নিজেই কোষের ক্ষতি করে ফেলে। এ ঘটনাকে বলা হয় ‘সাইটোকাইন ঝড়’। যার কারণে রোগীর শরীরে অ্যাকিউট রেসপিরেটারি ডিস্ট্রেস সিন্ড্রোম দেখা দেয়। তীব্র শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। রোগীকে ভেন্টিলেটর সাপোর্টে রাখার দরকার পড়ে।
অ্যাস্ট্রজেনেকার গবেষকরা বলছেন, অ্যাকালাব্রুটিনিব ওষুধের নির্দিষ্ট ডোজে এ সাইটোকাইনের বেশি ক্ষরণ আটকানো সম্ভব। বিশেষত, সাইটোকাইনের বেশি ক্ষরণের জন্য দায়ী এনজাইম ‘ব্রুটন’স টাইরোসিন কাইনেজ’কে লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করে এ ওষুধ। গবেষকরা দাবি করছেন, যে কোভিড-১৯ পজিটিভ রোগীদের এ ওষুধ দেওয়া হয়েছিল, তাঁরা অল্প দিনেই ভেন্টিলেটর সাপোর্ট থেকে বেরিয়ে আসতে পেরেছেন। স্বাভাবিক বাতাসে শ্বাসও নিতে পেরেছেন। তবে প্রাথমিক ট্রায়ালের ভিত্তিতেই কোনো সিদ্ধান্তে আসতে রাজি নয় অ্যাস্ট্রজেনেকা। দ্বিতীয় পর্যায়ের ট্রায়ালে ২০০ জন কোভিড-১৯ রোগীর শরীরে এ ওষুধ দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে তারা। সে ট্রায়ালের ফলাফল সন্তোষজনক হলেই কোভিড-১৯ চিকিৎসায় এ ওষুধের ব্যবহার নিয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ নির্ধারণ করা হবে।