করোনার টিকা পাওয়া যাবে কবে ??
নতুন করোনাভা’ইরাসের টিকা পেতে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে বিশ্বের সাতশ’ কোটি মানুষ। কিন্তু কবে করোনার টিকা পাওয়া যাবে তা নিশ্চিত নয়। টিকা নিয়ে কাজ করছেন এমন বিশেষজ্ঞদের দাবি, আগামী বছরের আগে টিকা পাওয়া কঠিন হবে। তবে পরাশক্তি দেশগুলোর মধ্যে কে আগে বাজারে টিকা নিয়ে আসবে তা নিয়ে রীতিমতো মর্যাদার লড়াই শুরু হয়েছে।
বিশ্বব্যাপী করোনাভা’ইরাসের টিকা তৈরির সর্বশেষ অবস্থা নিয়ে মঙ্গলবার একটি প্রতিবেদন ছেপেছে সিনেট। তাতে বলা হয়েছে, টিকা আবিষ্কার, অনুমোদন, উৎপাদন এবং বিশ্বব্যাপী বাজারজাতকরণে এক থেকে ১০ বছর পর্যন্ত সময় লেগে যেতে পারে। তবে আশার খবরও আছে। বিশ্বজুড়ে করোনাভা’ইরাসের টিকা আবিষ্কার নিয়ে যে তোড়জোড় চলছে তা স্মরণকালের ইতিহাসে অন্য কোনো রোগের টিকা আবিষ্কারের ক্ষেত্রে দেখা যায়নি।
আলজাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, করোনাভা’ইরাস ছড়িয়ে পড়ার মাত্র তিন মাসের মাথায় যুক্তরাষ্ট্রে প্রথম রোগটির টিকার পরীক্ষামূলক প্রয়োগ শুরু হয়। এত কম সময়ে টিকা আবিষ্কার করে তা পরীক্ষামূলক প্রয়োগের পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার সে ঘটনায় অনেকে বিস্মিত হয়েছিলেন। যুক্তরাষ্ট্রের সিয়াটলে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব হেলথের অর্থায়নে ওই টিকা কর্মসূচির কার্যক্রম শুরু হয়েছিল।
তিন মাসের কম সময়ের মধ্যে করোনার টিকা তৈরি করে এপ্রিলে তার পরীক্ষামূলক প্রয়োগ শুরু করে যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা। লন্ডনের ইম্পেরিয়াল কলেজের গবেষকরা বলেছেন, কম খরচে আগামী বছরের শুরুতেই তারা করোনার টিকা বাজারে আনতে পারবেন।
চীনে তৈরি কমপক্ষে পাঁচটি টিকার পরীক্ষামূলক প্রয়োগ শুরু হয়েছে মানুষের শরীরে। দেশটির প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং বলেছেন, চীনের তৈরি টিকা সফলতা পেলে তা সবার জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে।
তবে কেউই নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না ঠিক কবে করোনার টিকা পেতে শুরু করবে মানুষ। যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ এবং দেশটির করোনা টাস্ক ফোর্সের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ডা. অ্যান্থনি ফুচি সিএনএনকে বলেছেন, আগামী বছরের প্রথম ভাগে টিকা পাওয়ার ক্ষেত্রে তিনি আশাবাদী।
তবে টিকা উদ্ভাবনে চলা গবেষণাগুলোর মধ্যে কোনটির কার্যক্রমের ভিত্তিতে ডা.ফুচি ওই কথা বলেছেন তা তিনি স্পষ্ট করেননি।ওষুধ কোম্পানি মডার্নাকে টিকা তৈরি কার্যক্রমে সব ধরনের সহায়তা করে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। কোম্পানিটির টিকার কার্যকারিতা প্রমাণিত হলে সঙ্গে সঙ্গে তা বাজারে আনতে প্রস্তুত দেশটি।ডা. ফুচি বলেছেন, ২০২১ সালের শুরুতেই কয়েক কোটি ডোজ টিকা হাতে পাওয়ার ব্যাপারে তিনি আশাবাদী।তবে অনেক চিকিৎসক আগামী বছরের প্রথম দিকে টিকা হাতে পাওয়ার লক্ষ্যমাত্রাকে ‘অত্যন্ত উচ্চাভিলাষী লক্ষ্য’ বলে উল্লেখ করেছেন।
এর কারণ হলো একটি টিকা মানুষের শরীরে ব্যবহার উপযোগী কিনা তা জানতে অনেকগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রয়োজন হয়। প্রথমে কোনো প্রাণীর ওপর টিকার প্রাথমিক পরীক্ষামূলক প্রয়োগ শুরু হয়। সেখানে সফলতা মিললে তিন ধাপে মানুষের শরীরে পরীক্ষামূলক প্রয়োগ শুরু হয়। এটি এতটাই দীর্ঘস্থায়ী প্রক্রিয়া যে একটি টিকা হাতে পেতে ১০ বছর পর্যন্ত সময় লেগে যেতে পারে।
দ্রুত টিকা পেতে চাইলে তার ফল ভালো হওয়ার থেকে খারাপ হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। ২০১৭ সালে একটি ভয়ানক অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়েছিল বিশ্ব। ওই বছর দ্রুত ডেঙ্গুর টিকা ব্যবহার করতে গিয়ে ফিলিপাইনে ১০ শিশুর মৃত্যু হয়েছিল। এরপর টিকাটির পরীক্ষামূলক কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হয়। দেশটির সরকার ১৪ কর্মকর্তাকে অভিযুক্ত করে বলেছিল, তাড়াহুড়ো করে টিকার কার্যকারিতা পরীক্ষার ফলেই এমনটা ঘটেছে।
১৯৭৬ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সতর্কবার্তা উপেক্ষা করে দ্রুততার ভিত্তিতে সোয়াইন ফ্লুর টিকার প্রয়োগ শুরু করেছিল যুক্তরাষ্ট্র। চার কোটি ৫০ লাখ মানুষকে টিকা দেওয়ার পর দেখা যায় যে, ৪৫০ জনের শরীরে বিরল রোগ দেখা দিয়েছে। তার মধ্যে ৩০ জন মারা যান।
তবে সার্বিকভাবে বলা যায়, টিকার মাধ্যমে অনেক রোগ এবং অপরিণত মৃত্যু রোধ করা সম্ভব। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলেছে, প্রতি বছর ২০ থেকে ৩০ লাখ মানুষের জীবন বাঁচায় টিকা।নিরাপদে কীভাবে টিকা তৈরির গতি বাড়ানো যায় তার উপায় খোঁজার চেষ্টা করছেন বিজ্ঞানীরা। এই উপায় খোঁজার প্রক্রিয়া চলমান থাকার মধ্যেই বিশ্বজুড়ে অনেকগুলো গবেষণা দল করোনাভা’ইরাসের টিকা তৈরি বা পরীক্ষার কাজ করছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে, জুনের শুরুর দিকেও ১২০টির বেশি দল করোনার টিকা নিয়ে কাজ করছিল। ৪ জুন পর্যন্ত ১০টি দল মানুষের শরীরে টিকার পরীক্ষামূলক প্রয়োগ শুরু করেছে। এদের মধ্যে পাঁচটি চীনে, চারটি যুক্তরাষ্ট্রে এবং একটি যুক্তরাজ্যে।পরাশক্তি এই দেশগুলোর নেতারা একজন আরেকজনের আগে করোনার টিকা পেতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন।