করোনা থেকে বাঁচতে যে দুই বিষয়ে অবহেলা করবেন না, জেনে নিন এখুনি !!
বেশিরভাগ মানুষই করোনাভা’ইরাসের সংক্রমণ থেকে বাঁচতে সামাজিক দূরত্ব, মাস্কের ব্যবহার, ঘন ঘন হাত ধোয়া এসব দিকেই গুরুত্ব দিচ্ছেন। কিন্তু খুব কম সংখ্যক মানুষ এমন দু’টি বিষয়ে গুরুত্ব দিচ্ছেন যার একটি করোনাভা’ইরাসের সংক্রমণ এড়াতে এবং অন্যটি বাড়াতে সাহায্য করে।
এই বিষয় দু’টি হলো ইমিউনিটি বা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা, যা বাড়ানো উচিত এবং ইনফ্লামেশন বা প্রদাহ, যা দূর করা উচিত। মহামারী-সম্পর্কিত বিধিনিষেধের কয়েক মাস পর এখন লক্ষ লক্ষ মানুষের জীবনকে তা প্রভাবিত করেছে। কারা বেশি আ’ক্রান্ত হচ্ছে বা মারা গেছে সেই হিসাব-নিকাশ করে ইমিউনিটি এবং ইনফ্লামেশনের দিকে নজর দিতে বলা হচ্ছে।
বয়স্ক ব্যক্তিরা এই রোগের সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে। আমেরিকার ফেডারেশন ফর অ্যাজিং রিসার্চের বৈজ্ঞানিক পরিচালক ডঃ নীড় বারজিলাই বলেছেন যে, আশির উপরে বয়স এমন ব্যক্তির করোনাভা’ইরাসে আ’ক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি ২০ বছর বয়সী কোনো ব্যক্তির চেয়ে ১৮৪ গুণ বেশি। শারীরিক নানা দুর্বলতার শুরু হয় বয়স ৫৫ হলেই।
বয়সের সাথে প্রতিরোধের প্রতিরক্ষা হ্রাস পায়। এটি জীববিজ্ঞানের একটি মৌলিক সত্য। উদাহরণস্বরূপ, বয়স বাড়ার সাথে সাথে প্রাকৃতিক ঘাতক কোষ ভা’ইরাস-সংক্রামিত কোষগুলো ধ্বংস করতে কম কার্যকর হয়। তবে এর অর্থ এই নয় যে ইমিউনোলজিকাল পতনকে ঠেকাতে কিছুই করা যায় না, বলছিলেন ডঃ নীড় বারজিলাই।বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সারা শরীরের টিস্যুতে ইনফ্লামেশন বা প্রদাহ বেড়ে যায়। এটি করোনাভা’ইরাসকে শরীরে প্রবেশে সাহায্য করে। ভােইরাসটি তখন ফুসফুসে বাসা বেঁধে আরও ধ্বংসাত্মক হয়ে উঠতে পারে।
অতিরিক্ত মেদ কিংবা ওজনযুক্ত ব্যক্তিকে করোনাভা’ইরাস সংক্রমণের পরে তুলনামূলক বেশি দুর্বল হয়ে পড়ে। ইনফ্লামেশন কমানোর মাধ্যমে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর বেশকিছু স্বীকৃত উপায় আছে। সঠিক ডায়েট, শরীরচর্চার কার্যকারিতার কথা কম-বেশি সবাই জেনে থাকবেন। জীবনযাত্রা কোনো ব্যক্তির রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থায় আরও বেশি প্রভাব ফেলতে পারে, হোক তা ভালো কিংবা খারাপ।
স্কেলেটাল পেশীর সংকোচনের ফলে মায়োকাইনস নামে একটি ছোট প্রোটিন তৈরি হয়। যা প্রদাহকে কমিয়ে দেয়ার ফলে বড় ধরনের স্বাস্থ্য উপকার হয়। স্কেলেটাল পেশীর ব্যায়াম শরীরের মেদ হ্রাস করতে সাহায্য করে এবং প্রাকৃতিক ঘাতক কোষগুলোর শক্তি বাড়িয়ে তোলে তা আপনার বয়স যাই হোক না কেন। ৮৫ বছর বয়সী একজন মাংসপেশীর ভর বাড়িয়ে নিজেকে করোনাভা’ইরাস থেকে পুনরুদ্ধার করতে সক্ষম।
শরীরচর্চা যত বেশি ব্যাপক বা জোরালো, ইনফ্লামেশন তত কম হবে। যারা দিনে তিন হাজার ধাপের চেয়ে কম হাঁটেন তাদের মধ্যে সর্বোচ্চ মাত্রায় প্রদাহ হয়, অন্যদিকে যারা প্রতিদিন দশ হাজার বা তার বেশি ধাপ হাঁটেন তারা এই সমস্যা থেকে দূরে থাকেন। তবে বাড়িতে সারাদিন শুয়ে-বসে কাটালে শেষ পর্যন্ত করার আর কিছুই থাকবে না।
শরীরচর্চার জন্য আপনার কোনো বিশেষ সরঞ্জামের দরকার নেই। তাই কোনো জিম বা বাইরে যাওয়ারও প্রয়োজন নেই। বিশেষজ্ঞরা হিল উত্থাপন, লেগ উত্থাপন এবং বসে থেকে করা যায় এমন শরীরচর্চার প্রতি গুরুত্ব দিতে বলছেন। এমনকি বাহুর পেশী শক্তিশালী করতে আপনি সামান্য ভারি কোনো বস্তু ব্যবহার করতে পারেন। অথবা সিঁড়ি দিয়ে ওঠানামার মাধ্যমেও শরীরচর্চার কাজ অনেকটা সেরে ফেলা সম্ভব। আপনার অবস্থা যাই হোক না কেন, শরীরচর্চা আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা উন্নত করবে।
নিয়মিত শরীরচর্চা আপনার ঘুমকেও উন্নত করতে পারে। যা ইনফ্লামেশন দমন করতে পারে এবং আপনার রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে বজায় রাখতে পারে। রাতে সাত থেকে আট ঘণ্টা ঘুমানোর চেষ্টা করুন। এই সময়ে মানসিক চাপ অনুভব করলে মনকে শান্ত রাখার চেষ্টা করুন। সেজন্য নিজ নিজ ধর্মীয় প্রার্থনা, ইয়োগা ইত্যাদির আশ্রয় নিতে পারেন। রাতের খাবার যেন খুব বেশি ভারি না হয় সেদিকে নজর রাখবেন। পাশাপাশি কফি খুব বেশি পান করবেন না। চেষ্টা করুন প্রতিদিন একটি কলা খেতে। ঘুমানোর আগে একগ্লাস গরম দুধ পান করুন।
করোনোভা’ইরাস সংকটের সময় নিজেকে সুস্থ রাখাটাই আমাদের কাছে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। সেজন্য বৈচিত্র্যময়, পুষ্টিকর সমৃদ্ধ ডায়েট গ্রহণ এবং ক্যালোরি গ্রহণ নিয়ন্ত্রণে রাখা জরুরি। এই সময়ে এর বিকল্প নেই।