দেশের খবর

কোন ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেলে, কোটি টাকা জমা থাকলেও গ্রাহক পাবে মাত্র ১ লাখ !!

কোন ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেলে বা অবসায়িত হলে সেই ব্যাংকের বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের আমানতকারীরা তাদের জমানো সব টাকা ফেরত পাবেন না। শুধু তাই নয়, গ্রাহকের নামে কোটি টাকা জমা থাকলেও তাকে মাত্র এক লাখ টাকা ফেরত দেয়ার বিধান রেখে ‘আমানত সুরক্ষা আইন’ এর প্রস্তাবনা তৈরি করা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের ওয়েবসাইটে এটি তুলে ধরা হয়েছে।

প্রস্তাবনায় ‘তহবিল এর দায়’ বিষয়ক ধারা-৭ এর (১) উপধারায় বলা হয়েছে, কোন ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান এর অবসায়নের আদেশ হলে, বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক ওই অবসায়িত ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রত্যেক আমানতকারীকে তার বীমাকৃত আমানতের সম পরিমাণ (যা সর্বাধিক এক লাখ টাকা অথবা সরকারের পূর্বানুমোদনক্রমে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক সময়ে সময়ে নির্ধারিত টাকার বেশি হবে না), তহবিল হতে প্রদান করবে। প্রস্তাবনার ৭ এর (২) এর ধারায় বলা হয়েছে, অবসায়িত ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানে কোন আমানতকারীর একাধিক হিসাব থাকলে ওই হিসাবে যদি একত্রে এক লাখ টাকার বেশি স্থিতি থাকে তবুও তাকে সর্বাধিক এক লাখ টাকা কিংবা সরকারের পূর্বানুমোদনক্রমে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক সময়ে সময়ে নির্ধারিত টাকার বেশি পরিশোধ করা হবে না। এ প্রসঙ্গে গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘আমানতকারীরা তখনই সুরক্ষিত থাকবে, যখন ব্যাংক থেকে লুটপাট বন্ধ হবে।’ তিনি বলেন, ‘কোন ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান বন্ধ হলে এক লাখ টাকার বেশি পাবে না। এটা ঠিক আছে, অন্যান্য দেশেও আমানত সুরক্ষা আইনে এমনটি থাকে। তবে অন্যান্য দেশে ব্যাংক থেকে এভাবে টাকা লুটপাট হয় না।’

তিনি বলেন, ‘বর্তমান প্রেক্ষাপটে আমানত সুরক্ষা পেতে হলে গ্রাহকদের নিজেদের সচেতন থাকতে হবে। নিজের টাকা ঝুঁকিপূর্ণ ব্যাংকে না রেখে ভাল ব্যাংকে রাখতে হবে। বিশেষ করে যেসব ব্যাংক ভাল, দেখেশুনে সেই সব ব্যাংকে টাকা রাখতে হবে। আর যেসব ব্যাংক দুর্বল, সুশাসন নেই, দুর্নীতির আখড়া, লুটপাট করে টাকা বের করে নেয়া হয়, সেসব ব্যাংক থেকে দূরে থাকতে হবে। মনে রাখতে হবে, সব ব্যাংক সমান নয়।’ এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংকের কেউ মন্তব্য করতে রাজি হননি। অবশ্য বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা নাম প্রকাশ না করে বলেছেন, ‘আগের আইনেও এক লাখ টাকার কথাই আছে। এখন আমানত সুরক্ষায় আইনটি সংশোধন করা হচ্ছে। তারা বলছেন, আগেও অবসায়িত ব্যাংকে আমানতকারীর সর্বোচ্চ এক লাখ টাকা ফেরত দেয়া হতো। কোন আমানতকারীর এক লাখ টাকা জমা থাকলে তিনি পুরো অর্থই ফেরত পেতেন। তবে বেশি থাকলেও সর্বোচ্চ এক লাখ টাকা দেয়া হতো।’ জানা গেছে, বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর গ্রাহকের আমানতের সুরক্ষা দিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের তত্ত্বাবধানে ‘ব্যাংক আমানত বীমা’ নামে একটি তহবিল আছে। এই তহবিলে প্রতি ছয় মাস পর ব্যাংকগুলোকে মোট আমানতের ওপর নির্দিষ্ট হারে প্রিমিয়াম জমা দিতে হয়। কোন ব্যাংক নির্ধারিত সময়ে প্রিমিয়াম পরিশোধে ব্যর্থ হলে বাংলাদেশ ব্যাংকে তার রক্ষিত হিসাব থেকে প্রিমিয়ামের সমপরিমাণ অর্থ কেটে নেয়া হয়। ব্যাংকের আর্থিক অবস্থা ভাল হলে কম প্রিমিয়াম এবং খারাপ হলে বেশি হারে প্রিমিয়াম দিতে হয়। স্বাভাবিক ব্যাংকগুলোকে প্রতি ১০০ টাকা আমানতের বিপরীতে ৮ পয়সা হারে প্রিমিয়াম জমা দিতে হচ্ছে। এছাড়া সতর্কতামূলক অবস্থায় (আরলি ওয়ার্নিংয়ে) থাকা ব্যাংকের ক্ষেত্রে ৯ পয়সা হারে এবং সমস্যাগ্রস্ত (প্রবলেম) ব্যাংকের ক্ষেত্রে ১০ পয়সা হারে প্রিমিয়াম জমার বিধান করা হয়েছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, আমানত সুরক্ষায় আইন দিয়ে এই তহবিল পরিচালিত হয়। আগের আইনের মতো সংশোধিত আইনেও সর্বোচ্চ ১ লাখ টাকা পর্যন্ত আমানত বীমার প্রিমিয়াম দ্বারা সুরক্ষিত করা হবে। কোন ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান বন্ধ হলে এ আইনের ক্ষমতাবলে গ্রাহককে সর্বোচ্চ ১ লাখ টাকা পর্যন্ত ফেরত দেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এ প্রসঙ্গে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, বর্তমান প্রেক্ষাপটে কোন ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান বন্ধ হলে আমানতকারীদের সুরক্ষা দেয়ার কোন বিধান নেই, আর্থিক খাতের এটাই হলো বড় দুর্বলতা। তিনি বলেন, আইনে এক লাখ টাকা ক্ষতিপূরণের বিধান হলে গ্রাহকদের মধ্যে অনাস্থা তৈরি হতে পারে। এ কারণে বুঝেশুনে আইনটি করা উচিত। অর্থনীতিবিদদের মতো কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারাও মনে করেন আমানত সুরক্ষার এই আইন বাস্তবায়ন হলে বন্ধ হওয়া ব্যাংকের ৯৫ শতাংশ আমানত বেহাত হবে। প্রসঙ্গত, ব্যাংকের আমানতের সুরক্ষা দিতে ১৯৮৪ সালে সর্বপ্রথম একটি অধ্যাদেশ জারি করা হয়। অধ্যাদেশকে ২০০০ সালে ব্যাংক আমানত বীমা আইন ২০০০-এ পরিণত করা হয়। এতে আর্থিক প্রতিষ্ঠানের আমানত এ আইনের বাইরে ছিল। ২০১৭ সালে আইনটি সংশোধনের উদ্যোগ নেয়া হয়।

সম্প্রতি আর্থিক প্রতিষ্ঠান পিপলস লিজিং অবসায়নের উদ্যোগ নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। কিন্তু আমানতকারীদের অর্থ ফেরতের কোন নিশ্চয়তা নেই। এর আগে ওরিয়েন্টাল ব্যাংক এবং দ্য ফারমার্স ব্যাংকের ক্ষেত্রেও একই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছিল। জানা গেছে, ভারত বিভক্তির পর দেউলিয়া হওয়া পাইওনিয়ার ব্যাংক এবং ক্যালকাটা মর্ডান ব্যাংকের লিকুইডেশনের সমস্যা এখনও সমাধান হয়নি। তবে সর্বশেষ ২০০৬ সালে দেউলিয়া হয় ওরিয়েন্টাল ব্যাংক। মালিকপক্ষের লুটপাটের কারণে অতিরুগ্ণ হয়ে পড়লে ওই বছরের ১৯ জুন ব্যাংকটির দায়িত্ব নেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। পরে মালিকপক্ষের ৮৬ শতাংশ শেয়ারের বড় অংশ কিনে নেয় আইসিবি গ্রুপ। তারপর ব্যাংকটির নাম পরিবর্তন করে করা হয় আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক। কিন্তু গ্রাহকরা এখনও টাকা ফেরত পাননি। ১৯৯২ সালে ব্যাংক অব ক্রেডিট এ্যান্ড কমার্স ইন্টারন্যাশনাল (বিসিসিআই) বিলুপ্ত হয়ে ইস্টার্ন ব্যাংক গড়ে উঠেছিল। যদিও বিসিসিআইর বিভিন্ন দেশের গ্রাহকরা এখনও টাকা ফেরত পাননি। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, এক লাখ টাকা পর্যন্ত জমা আছে এমন এ্যাকাউন্টে আমানতের পরিমাণ ৬১ হাজার ৩৬ কোটি টাকা। অর্থাৎ এ পরিমাণ টাকা বর্তমানে বীমা আইন দ্বারা সুরক্ষিত। বাকি টাকা অরক্ষিত।

এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, গত বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৫৯টি ব্যাংকে জমাকৃত আমানতের পরিমাণ ১১ লাখ ৫৯ হাজার ২৮৯ কোটি টাকা। প্রায় ১০ কোটি ২৯ লাখ এ্যাকাউন্টে এ অর্থ জমা আছে। এর মধ্যে ৭৯ হাজার ৮৭৭ জনের এ্যাকাউন্টে রয়েছে এক কোটি টাকার বেশি আমানত। শুধু ৫০ কোটি টাকার বেশি আমানত রাখা ব্যক্তি রয়েছেন ১ হাজার ২২১ জন। ৪০ কোটি টাকার বেশি আমানত রাখা ব্যক্তি রয়েছেন ৩৭১ জন। ৩৫ কোটি টাকার বেশি আমানত রেখেছেন ২৪২ জন। ৩০ কোটি টাকারও বেশি আমানত রেখেছেন ৩৪৪ জন। ২৫ কোটি টাকার বেশি আমানত রেখেছেন ৫১৯ জন। ২০ কোটি টাকার বেশি আমানত রেখেছেন ৯৫৩ জন। ১৫ কোটি টাকার বেশি আমানত রেখেছেন ১ হাজার ৩২৬ জন। ১০ কোটি টাকার বেশি আমানত রেখেছেন ২ হাজার ৯৮৬ জন। পাঁচ কোটি টাকার বেশি আমানত রেখেছেন ৮ হাজার ৯৫২ জন।

প্রতিবেদনে দেখা যায়, ব্যাংকগুলোয় মোট আমানতের মধ্যে বেসরকারী খাতের ব্যক্তি ও ব্যক্তিমালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের মোট আমানতের পরিমাণ ৯ লাখ ৪৩ হাজার ৬০৫ কোটি টাকা। মোট ১০ কোটি ২৫ লাখ এ্যাকাউন্টে ওই অর্থ জমা আছে। আমানত সুরক্ষা আইনের খসড়ায় বলা হয়েছে, কোন ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান পরপর দুবার বীমার প্রিমিয়ামের অর্থ পরিশোধে ব্যর্থ হলে গ্রাহকের কাছ থেকে আমানত সংগ্রহ করতে পারবে না। টানা দুইয়ের অধিক প্রিমিয়াম দিতে ব্যর্থ হলে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে অবসায়ন করা হবে। গ্রাহকদের ক্ষতিপূরণ দিতে, তহবিল পরিচালনা ও প্রশাসনের জন্য আমানত সুরক্ষা আইনের আওতায় বাংলাদেশ ব্যাংকে আমানত সুরক্ষা ট্রাস্ট তহবিল নামে একটি তহবিল গঠন করা হবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিচালকরা এ তহবিলের ট্রাস্টি বোর্ড হবেন। খসড়ায় আরও বলা হয়, কোন ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান অবসায়নের পর তার আমানতকারীদের যে অর্থ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ট্রাস্ট তহবিল পরিশোধ করবে, সেটি সংশ্লিষ্ট দেউলিয়া হওয়া ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের নিট সম্পদের বিপরীতে যে তারল্য থাকবে তা থেকে সমন্বয় করা হবে।

J A Suhag

Local News: J A Suhag writes Local News articles for industries that want to see their Google search rankings surge. His articles have appeared in a number of sites. His articles focus on enlightening with informative Services sector needs. he holds the degree of Masters in Business and Marketing. Before he started writing, he experimented with various professions: computer programming, assistant marker, Digital marketing, and others. But his favorite job is writing that he is now doing full-time. Address: 44/8 - North Dhanmondi, Dhaka Email: [email protected]

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button