চট্টগ্রামে আড়াই ঘণ্টার রাস্তা যাওয়া যাবে মাত্র ৩০ মিনিটে !!
যানজটের কারণে চট্টগ্রাম নগরী থেকে সড়কপথে শাহ আমানত বিমাবন্দর যেতে প্রায়ই সময় লাগে দুই থেকে আড়াই ঘণ্টা।
সময়মতো পৌঁছতে না পেরে ফ্লাইট মিসের ঘটনাও ঘটে কখনো কখনো। বিমান যাত্রীদের যানজটের এমন ধকল থেকে স্বস্তি দিতে চালু হচ্ছে ওয়াটার বাস সার্ভিস। এতে নগরী থেকে বিমানবন্দর যেতে সব মিলিয়ে সময় লাগবে মাত্র ৩০ মিনিট।কর্ণফুলী নদীর সদরঘাট থেকে পতেঙ্গা পর্যন্ত চলাচল করবে এই সার্ভিস। চলতি সপ্তাহেই ওয়াটার বাসের উদ্বোধন করার কথা রয়েছে।
ঢাকার নৌপথে এর আগে ওয়াটার বাস সার্ভিস চালু হলেও চট্টগ্রামে এটাই প্রথম। দীর্ঘদিন ধরে কর্ণফুলী নদীতে এধরনের বাস সার্ভিস চালুর দাবি জানিয়ে আসছিল বিভিন্ন মহল। তবে সাড়া মিলছিল না।শেষ পর্যন্ত চট্টগ্রামবাসীর স্বপ্নপূরণে এগিয়ে আসে বন্দর কর্তৃপক্ষ। গত বছর হাতে নেয়া হয় ওয়াটার বাস প্রকল্প।
এই প্রকল্পের আওতায় বন্দর কর্তৃপক্ষ সদরঘাট ও পতেঙ্গা এলাকায় আধুনিক সুযোগ সুবিধা সম্বলিত জেটি তৈরি করে দিয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেয়া হয় চিটাগং ড্রাই ডক লি. কর্তৃপক্ষকে।
ড্রাই ডক কর্তৃপক্ষ এসএস ট্রেডিং নামক একটি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ওয়াটার বাস সার্ভিস পরিচালনায় চুক্তিবদ্ধ হয়। প্রতিষ্ঠানটি প্রাথমিকভাবে দুটি ওয়াটার বাস দিয়ে সার্ভিস শুরু করছে। যাত্রীদের সাড়া পাওয়া গেলে বাসের সংখ্যা আরও বাড়ানো হবে।
তবে ওয়াটার বাস থেকে প্রাথমিকভাবে সুবিধা পাবেন বিমান যাত্রীরাই। যদিও বিমান যাত্রী ছাড়া অন্যদেরও এ বাসে যাতায়াতের সুযোগ রয়েছে। তবে অবকাঠামো না থাকায় সদরঘাট-পতেঙ্গা রুটের মধ্যবর্তী কোনো স্থানে যাত্রী ওঠানামা করানো যাবে না। তাই সার্ভিসটি থেকে এ মুহূর্তে বিমান যাত্রীরাই সুফল পাবেন বলে মনে করা হচ্ছে।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মো ওমর ফারুক জানান, সড়কপথে বিমান যাত্রীদের দুর্ভোগের কথা মাথায় রেখে প্রকল্পটি নেয়া হয়েছে। বন্দরের পক্ষ থেকে ড্রাই ডক কর্তৃপক্ষ এটি বাস্তবায়ন করছে। একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে তারা ওয়াটার বাস সার্ভিস পরিচালনা করবে। অল্প কয়েক দিনের মধ্যেই সার্ভিসটি চালু হয়ে যাবে।
ওয়াটার বাস পরিচালনকারী প্রতিষ্ঠান এসএস ট্রেডিংয়ের এজিএম ওসমান গণি যুগান্তরকে বলেন, ‘২৫ অথবা ২৬ নভেম্বর বাস সার্ভিসটি উদ্বোধন করা হবে। ’
তিনি জানান, দুটি ওয়াটার বাস প্রতিদিন ৫ বার করে ১০ বার চলাচল করবে। বিমান যাত্রীদের কথা মাথায় রেখে বিমানের সময়সূচির সঙ্গে সমন্বয় করে বাস ছাড়ার সময় নির্ধারণ করা হয়েছে। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত প্রতিটি ওয়াটার বাসে ২৫ জন বসে এবং ৫ জন দাঁড়িয়ে যেতে পারবেন।
তিনি বলেন, সদরঘাট থেকে পতেঙ্গা পর্যন্ত ৮ নটিক্যাল মাইল দূরত্বের জন্য ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে জনপ্রতি ৪০০ টাকা। ২০ মিনিটে সদরঘাট থেকে পতেঙ্গা পৌঁছে যেতে পারবেন যাত্রীরা। পতেঙ্গা থেকে নিজস্ব শাটল বাসে যাত্রীদের বিমানবন্দরে নিয়ে যাওয়া হবে। এজন্য সময় লাগবে আরও ১০ মিনিট। সব মিলিয়ে নগরী থেকে বিমান বন্দর যেতে সময় লাগবে ৩০ মিনিট।
তিনি জানান, প্রতিটি ওয়াটার বাসে দুটি করে শক্তিশালি জাপানী ইয়ামাহা ইঞ্জিন লাগানো হয়েছে। যা চলবে ৩৫ নটিক্যাল মাইল গতিতে। পুরো বাস থাকবে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত। যাত্রীরা আরামে বসার পাশাপশি কর্ণফুলী নদীর সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন।
তবে ওয়াটার বাস সার্ভিসের ভাড়া নিয়ে এরই মধ্যে নানা আলোচনা-সমালোচনা চলছে। অনেকেই বলছেন, ৪০০ টাকা ভাড়া অনেক বেশি হয়ে গেছে। এই ভাড়ায় যাত্রী নাও মিলতে পারে। তাই শেষ পর্যন্ত সার্ভিসটির টিকে থাকা নিয়েও শংকা প্রকাশ করেছেন তারা।
বাংলাদেশ পরিবেশ ফোরামের সাধারণ সম্পাদক আলীউর রহমান যুগান্তরকে বলেন, ‘ঢাকার রামপুরা থেকে গুলশান পর্যন্ত নৌপথে ৩ কিলোমিটার ভাড়া ১৫ টাকা। এই হিসেবে চট্টগ্রামের ওয়াটার বাস সার্ভিসের ভাড়া অনেক বেশি নির্ধারণ করা হয়েছে। ঢাকার চেয়ে ৫ গুণ বেশি নিলেও এই ভাড়া ২০০ টাকার বেশি হওয়ার কথা নয়। ভাড়া না কমালে সার্ভিসটি মুখ থুবড়ে পড়বে।’
ভাড়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে এসএস ট্রেডিংয়ের ওসমান গণি বলেন, বিমান বন্দর পৌঁছানো পর্যন্ত আমরা যাত্রীদের যেসব সুবিধা দেবো , ‘সেই অনুপাতে ভাড়া বেশি রাখা হয়নি। সড়কপথে বিমান যাত্রীদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে থাকতে হয়। আমরা মাত্র ৩০ মিনিটে তাদের পৌঁছে দেবো।’