চিকিৎসা করতে গিয়ে দুই বাংলাদেশির টাকা ছিনতাই করল কলকাতার পুলিশ !!
দুই বাংলাদেশি ভারতে ক্যান্সারে চিকিৎসা করতে গিয়ে তাঁদের ট্যাক্সি আটকে ২০ হাজার টাকা ছিনতাইয়ের অভিযোগ উঠেছে কলকাতা পুলিশের বিরুদ্ধে। গত নভেম্বরের ২১ তারিখে মৌলালির মোড়ে এ ঘটনা ঘটেছে। পুলিশ জানিয়েছে, সোমবার পুলিশ কমিশনারের কাছে এ নিয়ে ই-মেইলে অভিযোগ করলে বিষয়টি আলোচনায় চলে আসে।
ভুক্তভোগী গোলাম সাকলাইন ও মোহাম্মদ মোশারফ নামে দুই বাংলাদেশির বরাত দিয়ে মঙ্গলবার কলকাতার প্রভাবশালী গণমাধ্যম আনন্দবাজার পত্রিকা জানায়, ওই দিন ভোররাতে ট্যাক্সিযোগে শিয়ালদহ স্টেশনে যাওয়ার পথে মৌলালির মোড়ে এ ঘটনা ঘটায় পুলিশকর্মী।
তাদের অভিযোগ, ট্যাক্সি আটকে তাদের কাছ থেকে টাকা কেড়ে নেন ওই পুলিশ সদস্য।
পুলিশ জানায়, ঘটনাটি গত মাসে ঘটলেও সোমবার বিকালে গোলাম সাকলাইন এবং মোহাম্মদ মোশারফ পুরো বিষয়টি কলকাতার পুলিশ কমিশনার অনুজ শর্মা এবং যুগ্ম-কমিশনার (অপরাধ) মুরলিধর শর্মাকে ই-মেল করে অভিযোগ জানান।
ভুক্তভোগীরা অভিযোগে জানান, চিকিৎসার জন্য তারা ভারতে এসেছিলেন। কোলন ক্যান্সারের চিকিৎসা করাতে মুম্বাইয়ের একটি বেসরকারি হাসপাতালে গিয়েছিলেন মোশারফ। সেখানে অস্ত্রোপচারের পর তিনি কলকাতায় আসেন গত ২০ নভেম্বর। পরের দিন (২১ নভেম্বর) ভোর ৪টা ২০ মিনিটের দিকে শিয়ালদহ থেকে গেদে এলাকায় যাওয়ার ট্রেন ধরার কথা ছিল মোশারফের। ফলে তিনি ওই দিন ভোর সাড়ে ৩টা নাগাদ হোটেলের ঠিক করে দেয়া একটি ট্যাক্সিতে আত্মীয় গোলাম সাকলাইনকে সঙ্গে নিয়ে শিয়ালদহের উদ্দেশে রওনা হন।
বাংলাদেশের গাইবান্দার বাসিন্দা বছর আটচল্লিশের মোশারফের অভিযোগ, ওই দিন ভোরে ট্যাক্সি মৌলালির মোড় থেকে শিয়ালদহের দিকে বাঁ দিকে ঘোরামাত্র এক পুলিশকর্মী ট্যাক্সি দাঁড় করানোর নির্দেশ দেন। ওই ব্যক্তির পেছনেই ছিল ‘পুলিশ’ লেখা ভ্যান।
অভিযোগে জানানো হয়, ওই পুলিশ সদস্য ট্যাক্সি দাঁড় করিয়ে মোশারফ এবং সাকলাইনের কাছে তাদের পরিচয় জানতে চান। মোশারফ বলেন, পরিচয় দিতেই ওই পুলিশ সদস্য আমাদের কাছে পাসপোর্ট দেখতে চান। পাসপোর্ট দেখিয়ে তাকে জানাই যে, আমি ক্যান্সার রোগী। চিকিৎসা করাতে গিয়েছিলাম মুম্বাই।
রাজশাহীর বাসিন্দা সাকলাইনের অভিযোগ, এর পরই আমাদের ভয় দেখাতে শুরু করেন ওই পুলিশ সদস্য, আমরা কলকাতায় ছিলাম তা তাদের জানাইনি কেন? মির্জা গালিব স্ট্রিটের যে হোটেলে আমরা উঠেছিলাম, সে কথাও বলি ওই পুলিশ সদস্যকে।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, এরপর ওই পুলিশ সদস্য জিজ্ঞাসা করেন তাদের সঙ্গে কত টাকা আছে? গোলাম সাকলাইন বলেন, ২৭ হাজার বাংলাদেশি টাকা ছিল আমাদের সঙ্গে। ওই পুলিশ সদস্য আমাদের কাছ থেকে ওই টাকা নিয়ে নেন।
মোশারফের অভিযোগ, টাকা এবং পাসপোর্ট ফেরত চাইলে খাকি পোশাক পরা ওই পুলিশ সদস্য আমাদের ভয় দেখান- থানায় নিয়ে গারদে আটকে রাখার।
সাকলাইন বলেন, ওই পুলিশ সদস্য মোশারফের পেটের নিচে অস্ত্রোপচারের জায়গায় ব্যান্ডেজ টিপে টিপে দেখছিলেন। আমি প্রতিবাদ করায় পাল্টা আমাদের থানায় নিয়ে মাদকের মামলা দিয়ে গ্রেফতার করার ভয় দেখান।
এ দিন মোশারফ বলেন, আমি হাত জোড় করে ওই পুলিশ সদস্যকে টাকা ফেরত দিতে বলি। তাকে বলি, টাকা বেশি না থাকায় অস্ত্রোপচারের পরে কেমোথেরাপি দিতে পারিনি। দেশে ফিরে টাকার জোগাড় করে আবার আসব।
তাদের অভিযোগ, অনেক কাকুতি-মিনতি করার পর ২৭ হাজার টাকার মধ্যে সাত হাজার টাকা আর পাসপোর্ট ফেরত দিয়ে ফের ওই পুলিশ সদস্য তাদের শাসান, কাউকে কিছু জানালে ফল ভালো হবে না। বাকি ২০ হাজার টাকা ওই পুলিশ সদস্য রেখে দেন।
সাকলাইন বলেন, আমরা সেদিন খুব ভয় পেয়েছিলাম। তাই সেদিনই গেদে সীমান্ত দিয়ে দেশে ফিরে যাই। রোববার ফের চিকিৎসার জন্য কলকাতায় আসি। এক বন্ধুকে সম্পূর্ণ ঘটনার কথা জানাই। তার পরামর্শেই ই-মেল করে জানিয়েছি কলকাতা পুলিশকে।
পত্রিকাটির প্রতিবেদনে বলা হয়, মোশারফ আজ (মঙ্গলবার) বিকালেই কেমোথেরাপির জন্য মুম্বাইতে যাবেন।
তিনি বলেন, আমরা অসংখ্য বাংলাদেশি চিকিৎসা এবং ব্যবসার প্রয়োজনে কলকাতায় আসি। এখানকার পুলিশের ভরসাতেই রাস্তাঘাটে নির্ভয়ে ঘোরাফেরা করি। আমার একটাই আবেদন, তারা যেন ওই ব্যক্তিকে চিহ্নিত করে শাস্তি দেন।