জামায়াতের সঙ্গে কওমির ঐক্য হতে পারে না, আওয়ামী লীগ ২০০ বছর ক্ষমতায় থাকলেও আপত্তি নেই
হেফাজতে ইসলামের নবনিযুক্ত আমীর আল্লামা মহিবুল্লাহ বাবুনগরী মনে করেন, জিহাদ বা অস্ত্র হাতে নিয়ে হেফাজতে ইসলামের ১৩-দফা দাবি আদায় করা সম্ভব নয়। তিনি বলেন, অরাজনৈতিক সংগঠন হেফাজতে ইসলাম কাউকে ক্ষমতায় আনতে বা কাউকে নামিয়ে আনতে ভূমিকা রাখতে চায় না। আওয়ামী লীগ ২০০ বছর ক্ষমতায় থাকলেও তার কোন আপত্তি নেই।
নির্বাচিত হওয়ার পর বৃহস্পতিবার (১৬ সেপ্টেম্বর) দুপুরে ফটিকছড়ির বাবুনগরে নিজ বাসভবনে প্রথমবারের মতো গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলছিলেন মহিবুল্লাহ আমির।
হেফাজতে ইসলামের ১৩-দফা দাবী আন্দোলন প্রসঙ্গে মহিবুল্লাহ বাবুনগরী বলেন, সরকারের বিরুদ্ধে অস্ত্র তুলে এবং জিহাদ চালিয়ে দাবি আদায় করা সম্ভব নয়। হেফাজতে ইসলাম রক্তপাত এবং অস্ত্রের মহড়ায় বিশ্বাস করে না। আমরা সবসময় শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের মাধ্যমে ১৩ দফা বাস্তবায়নের চেষ্টা করেছি। ইতিহাসে সবচেয়ে বড় সমাবেশ সত্ত্বেও ২০১৩ সালে ঢাকা অবরোধে কোন রক্তপাত হয়নি। হেফাজতে ইসলাম রক্তপাত বিশ্বাস করে না। সরকার যদি আমাদের দাবি পূরণ করতে পারে, না পারলে তা আল্লাহর কাছে জবাব দেবে।
তিনি বলেন, হেফাজতে ইসলামের ১৩-দফা দাবি আদায়ের আন্দোলন এখনো চলছে। যে দাবিগুলো বাস্তবায়িত হতে পারে তা মেনে নেওয়ার জন্য আমরা সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। সংবিধানের কিছু অংশ আছে যা ইসলামের সাথে সাংঘর্ষিক। এই অংশগুলো বিশ্বাসের জন্য ক্ষতিকর। আমি সরকারকে অনুরোধ করছি এই অংশগুলো সংস্কার করার জন্য। এই দেশের নাগরিক হিসেবে আমরা সরকারের কাছে সাংবিধানিক সংস্কার দাবি করতে পারি।
হেফাজতে ইসলাম এবং সরকারের মধ্যে সম্পর্ক সম্পর্কে তিনি বলেন, কওমীর প্রতি বর্তমান সরকারের আন্তরিকতায় আমরা খুশি। সরকারকে উৎখাত করা বা কাউকে সিংহাসনে বসানো আমাদের আন্দোলনের উদ্দেশ্য নয়। আমরা মুসলমানদের অবশ্যই কোরআন ও হাদিস মেনে চলতে হবে। আমরা কোরানের বিরুদ্ধে যে কোন আইনের বিরোধিতা করবো। আমি আন্দোলন করব। আওয়ামী লীগ সরকার ২০০ বছর ক্ষমতায় থাকলেও আমাদের কোন সমস্যা নেই। পণ্ডিতরা গদি (ক্ষমতা) চান না। তিনি গাদিওয়ালাদের (যারা ক্ষমতায় আছেন) পণ্ডিত করতে চান।
তিনি জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে হেফাজতের যোগসাজশের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, জামায়াতের সঙ্গে হেফাজতের কোনো আদর্শিক সম্পর্ক নেই। পক্ষান্তরে কওমি আলেমরা সবসময় জামায়াতের বিরুদ্ধে সোচ্চার। দেওবন্দের অন্যতম দরবেশ আল্লামা হুসাইন আহমদ মাদানী ছিলেন জামায়াতের বিরুদ্ধে সোচ্চার। আমরা তার অনুসারী হিসেবে এখনো জামায়াতের বিরুদ্ধে কথা বলি। সুতরাং জামায়াতের সাথে কওমীর কোন ঐক্য হতে পারে না। কওমি থেকে জামায়াতের দূরত্ব ঐতিহাসিকভাবে আদর্শগত কারণে স্বীকৃত। রাজনৈতিক স্বার্থে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি জামায়াতের সঙ্গে ক্য করেছে। কিন্তু জামায়াত এখনো হেফাজতের সঙ্গে কোনো জোট গঠন করেনি। তিনি দাবি করেন, হেফাজতের কোনো রাজনৈতিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা নেই।
আল্লামা মহিবুল্লাহ বলেন, অতীতের মতো ভবিষ্যতে কাউকে হেফাজতের ব্যানারে ভোট দিতে দেয়া হবে না।