জেনে নিন, কে এই কাঠুরিয়া কবিরাজ সবুজ মিয়া ??
সম্প্রতি কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া থানার সুখিয়া ইউনিয়নের চরপলাশ গ্রামের ফসলের বিস্তীর্ণ মাঠে মঞ্চ তৈরি করে ঝাড়ফুকের আসর বসায় কথিত কবিরাজ সবুজ মিয়া। তেল-পানির বোতলে ঝাড়ফুকের কাঠুরিয়া কবিরাজখ্যাত সবুজ মিয়া শনিবার প্রায় ৫০ হাজার নারী-পুরুষের উপস্থিতিতে তাদের হাতে থাকা বোতলে মাইকে ফুক দেন। এই ঘটনা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ছড়িয়ে পরে সর্বত্র। স্থানীয় সাংবাদিকরা নিউজ করেন। এরপরই সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ে এই কবিরাজের কাণ্ড। এ ঘটনার পর অনেকের মনে প্রশ্ন জেগেছে কে এই কবিরাজ। চলুন জেনে নেই এই কবিরাজের জানা-অজানা নানান তথ্য।
জানা গেছে, ময়মনসিংহ জেলার ভালুকা উপজেলার রাজৈ ইউনিয়নের পায়লা বেড় গ্রামের মৃত মোহাম্মদ সায়েদ ফকিরের ছেলে সবুজ মিয়া। তার পিতা মৃত সায়েদ ফকিরও কবিরাজি করতেন। পিতার মৃত্যুর অনেক দিন পর পর্যন্ত সবুজ মিয়া বন থেকে কাঠ কেটে জীবিকার্জন করতেন। ২০১৬ সালের দিকে হঠাৎ একদিন আধ্যাত্মিক শক্তিলাভের অবিশ্বাস্য ও অবাস্তব গল্প সাজান তিনি। আর এ ভুয়া শক্তির গল্পকে কাজে লাগিয়ে প্রতারণামূলক কবিরাজি ও ঝাড়ফুককে বাড়তি আয়-রোজগারের হাতিয়ার হিসেবে বেছে নেন সবুজ মিয়া।
কুসংস্কারাচ্ছন্ন সমাজের অন্ধবিশ্বাসী লোকজন তার ফাঁদে পা দেয়। রোগ-বালাই থেকে মুক্তি পেতে, মনোবাসনা পূর্ণ করতে কিংবা জিন-ভূতের আছর তাড়ানো, সন্তান লাভ ইত্যাদির আশায় বিনামূল্যে ঝাড়ফুক নিতে তেল-পানির বোতলের পাশাপাশি কবিরাজের জন্য মোরগ-মুরগি, হাঁস-কবুতর, মোমবাতি নিয়ে তার বাড়িতে লাইন ধরে শত শত নারী-পুরুষ। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাহীন এই কাঠুরিয়া কবিরাজ কখনও মাথায় হাত দিয়ে এবং কখনও বোতলে ফুঁক দিয়ে ও কখনও বা গান গেয়ে কবিরাজি শুরু করেন। বিনামূল্যে চিকিৎসার নামে ফাও পেতে থাকেন গবাদিপশু, মোমবাতিসহ নানা অর্থকরী সামগ্রী। দিনে দিনে তার কথিত কবিরাজি পেশার অবিশ্বাস্য প্রসার ঘটতে থাকে। আর এ সব কাজে সহায়ক হিসেবে স্থানীয় একশ্রেণির প্রভাবশালী লোকজন এগিয়ে আসে। তাদের তিনি ছত্রছায়ার ন্যায় ব্যবহার করতে থাকেন। কিছুদিনের মধ্যেই তার বাড়ি হয়ে ওঠে ঝাড়ফুকের এক বিশাল আস্তানায়।
সমাজসচেতন নাগরিক সমাজের অভিযোগের ভিত্তিতে ২০১৬ সালের শুরুতেই স্থানীয় প্রশাসন বন্ধ করে দেয় তার আস্তানা। অদৃশ্য শক্তি বলে কিছুদিনের মধ্যেই চালু হয়ে আবার সরগরম হয়ে ওঠে তার আস্তানা। সর্বশেষ চলতি বছরের ১ মে আবারও স্থানীয় প্রশাসন তার আস্তানা বন্ধ করে দেয়। তারপর থেকেই বাড়ির আস্তানায় লোকসমাগমে ভাটা পড়ে। প্রশাসন কর্তৃক বাড়ির আস্তানা বন্ধ করে দেয়ার পর ভিন্ন কৌশল অবলম্বন করেন সবুজ মিয়া। আশপাশের জেলা-উপজেলার একশ্রেণির প্রভাবশালী লোক কিংবা ক্ষমতাসীন দলের নেতার আশীর্বাদ নিয়ে বড় বড় প্রতিষ্ঠান অথবা উন্মুক্ত মাঠে ঝাড়ফুকের আসর বসানো শুরু করেন তিনি। আর এ সব আসরের সফল বাস্তবায়নে তার কতিপয় এজেন্ট ও সুবিধাভোগী ভক্ত নীরবে-নিভৃতে গ্রামে গ্রামে চালায় ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা।