জেনে নিন, জাহান্নাম থেকে মুক্তির সহজ উপায় !!
সৃষ্টির সেরা জীব হিসেবে মানুষের একটা খ্যাতি রয়েছে, রয়েছে জন্মগত, সৃষ্টিগত প্রাপ্তি। কিন্তু এই সম্মানজনক অর্জন আর প্রাপ্তি কি মানুষ ধরে রাখতে পেরেছে?মোটেও না। অন্যায়, পাপাচার,অনাচার, অত্যাচার করতে করতে সাদা জীবনটাকে কয়লার মত কালো বানিয়ে ফেলেছে।পাপের পথে দিবানিশি চলতে চলতে জাহান্নামের পথে এক পা অগ্রিম বরাদ্দ রেখে দিয়েছে। শ্রেষ্ঠ জীব থেকে নিকৃষ্ট থেকেও নিকৃষ্টতর স্তরে নেমে এসেছে।
এতদসত্ত্বেও মহান আল্লাহ মানুষকে সুযোগ দিলেন কয়লা ধুয়ে পরিষ্কার করার, জাহান্নামে বরাদ্দ রাখা আসন বাতিল করার। পাঠালেন নবী, জানালেন সুসংবাদ। অন্যায় যদি সমুদ্রের ফেনা সমপরিমাণ ও হয় আমি আল্লাহ মাফ করে দিব। সুবহানাল্লাহ!আল্লাহ বলেন, তোমরা শুধু কৃত অপরাধ আর গুনাহ থেকে তওবা করে আমারই পথে ফিরে এসো, আর আমার দেয়া বিধান মতো মূল্যবান জীবনটাকে পরিচালিত কর।
এমন দয়ালু, মেহেরবান মাওলা তিনি আল্লাহ ছাড়া আর আছে কেউ? না, কেউ নেই তিনি ছাড়া।ক্ষমা কত প্রকার ও কি কি এটা শুধু আল্লাহর অভিধানেই মিলবে।ইতিহাসের অন্যতম এক নবী হচ্ছেন হযরত ইউনুস (আ.)। পবিত্র কোরআনের একাধিক স্থানে আল্লাহ পাক তাকে উল্লেখ করেছেন। তিনি লাগাতার ৪০ দিন পর্যন্ত একটি বিশাল মাছের উদরে ছিলেন। কিন্তু কারণ কি?
কারণ হচ্ছে আল্লাহ তাআলা তাকে বর্তমানের ফিলিস্তিনের কোন এলাকায় (নিনওয়ায়) নবী হিসেবে প্রেরণ করেছিলেন সেখানকার লোকদেরকে দ্বীনের পথে ডাকতে, আল্লাহর পরিচয় তুলে ধরতে। কারণ তার কওম গুনাহ করতে করতে জীবনটাকে শেষ করে ফেলেছিল।তিনি দীর্ঘ একটা সময় ধরে তার কওমকে আল্লাহর দিকে ডাকলেন। আল্লাহর পক্ষ থেকে নানাবিধ সুসংবাদ দিলেন। আর আল্লাহর বিধান প্রত্যাখ্যান করা যে বিরাট বড় অন্যায় ও জাহান্নামে যাওয়ার কারণ তা ও ভালো করে তার জাতীকে বুঝিয়ে দিলেন।
কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হলোনা। বহু বছর দাওয়াত দেয়া সত্ত্বেও তারা ঈমান আনলো না। একরাশ মনোবেদনা আর অভিমান নিয়ে হযরত ইউনুস (আ.) নিনওয়া অঞ্চল ছেড়ে অন্য কোন এলাকায় যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে পরিবার পরিজনের সাথে হিজরত শুরু করলেন।
এদিকে পয়গম্বর ইউনুস (আ.) তার এলাকা ছাড়তেই আল্লাহর আজাব এসে পড়ল। প্রথমে আসমানের কোণে এক টুকরো মেঘ জমলো। এটা দেখে নিনওয়াবাসী আনন্দে নাচতে লাগল যে, বহুদিন যাবত বৃষ্টি হয়না। আজ আমরা বৃষ্টিস্নানে মনের সুখে নাচব গাইব।
এক টুকরো মেঘ ধীরে ধীরে বহু টুকরো হয়ে আসমানকে গ্রাস করে নিল। অন্ধকারে তলিয়ে ফেলল নিনওয়া। জনগনের আর বুঝতে বাকী রইলনা যে, এতো নবী ইউনুসের দেয়া আজাবের সত্য রূপ!পড়িমরি করে পুরো জনপদের আবাল,বৃদ্ধা,বনিতা নারী- পুরুষ, শিশু সবাই এক বিশাল বিস্তৃত মাঠে জড়ো হয়ে খাটি দিলে তওবা করে আসমানে হাত তুলে অঝোর ধারায় অশ্রু বিসর্জন দিতে লাগল। হাউমাউ করে গণ কান্নার রোল বয়ে গেল চতুর্দিকে।
মাওলায়ে কারিমের কাছে তাদের এ কাজটা খুব পছন্দ হলো। তাদের তওবাকে কবুল করে নিলেন। যুগযুগ ধরে করে আসে সকল পাপ তাপ তওবার এক ধাক্কায় মুছে ফেললেন। আসমান থেকে আজাবের মেঘ সরিয়ে নিলেন। প্রভাতের স্নিগ্ধ সমীরণ বইতে শুরু করল চারিদিকে।
এবার তারা হন্য হয়ে চারিদিকে তাদের পয়গম্বর ইউনুসকে (আ.) খুঁজতে লাগলো। ওদিকে নবী ইউনুস (আ.) আল্লাহর পরিক্ষা শেষে তারই হুকুমে নিজ এলাকা নিনওয়া ফিরলেন। এবার চারিদিকে মিষ্টি উৎসব শুরু হলো। এ যেন এক পবিত্র পুনর্মিলনী।প্রিয় পাঠক! উল্লেখিত ঘটনা থেকে আমরা শেষ ফলাফল কি পেলাম? ‘সবার ওপর তওবা সত্য তাহার উপর নাই’।সুতরাং আসুন, হযরত ইউনুসের (আ.) জাতীর মত একটি স্মরণীয় তওবা করি। এক তওবায় রাঙিয়ে দিই দুনিয়া ও আখেরাত।