ডাক্তার বললেন স্ত্রী বেঁচে নেই, শুনেই দৌড়ে পালালেন স্বামী, এরপর…
হাসপাতালে নেয়ার পর ডাক্তার বললেন, বেঁচে নেই। স্ত্রীর মরদেহ জরুরি বিভাগে রেখেই পালালেন স্বামী। ঘটনাটি ঘটেছে শুক্রবার বিকেলে কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। নিহত গৃহবধূ জান্নাত আক্তার (১৮) দেবীদ্বার উপজেলার বরকামতা ইউনিয়নের ব্রাহ্মণখাড়া গ্রামের প্রবাসী মো. কবির হোসেনের মেয়ে। স্বামী সাখাওয়াত হোসেন একই গ্রামের আবদুল ওহাব মিয়ার ছেলে।
এর আগে দুপুরে নিহত জান্নাতকে ঘরের সিলিংয়ে ওড়না প্যাঁচানো অবস্থায় উদ্ধার করে স্বামী সাখাওয়াত ও তার বড় ভাই মো. দুলাল মিয়া। পরে হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক জান্নাতকে মৃত ঘোষণা করেন। এরপর জরুরি বিভাগে লাশ রেখেই তারা পালিয়ে যান। পরে রাত ১২টার দিকে জান্নাতের মৃতদেহ দেবীদ্বার থানায় নেওয়া হয়।
এ ব্যাপারে দেবীদ্বার থানায় আত্মহত্যায় প্ররোচণার দায়ের স্বামী সাখাওয়াত হোসেন ও তার বাবা-মাকে অভিযুক্ত করে শনিবার সকালে একটি মামলা দায়ের করেন নিহতের বড় মামা মো. শাহ আলম। শনিবার সকাল ১০টায় জান্নাতের মরদেহ কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মর্গে প্রেরণ করা হয়। অভিযোগ দায়েরের পর ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন দেবীদ্বার থানার সিনিয়র উপ-পরিদর্শক মো. ইকতিয়ার হোসেন ও উপপরিদর্শক মো. রবিউল ইসলাম।
নিহতের মা হাসিয়া বেগম জানান, জান্নাত ও সাখাওয়াত গত পাঁচ মাস আগে প্রেম করে উভয় পরিবারের কাউকে না জানিয়ে বিয়ে করে। পরে সামাজিকভাবে দেন-দরবারের পর উভয় পরিবার দুজনের বিয়ে মেনে নিয়ে জান্নাতকে শ্বশুড়বাড়িতে নেওয়া হয়। এর কিছুদিন পর সাখাওয়াতকে সৌদি আরবে পাঠাতে পাঁচ লাখ টাকা যৌতুক দেওয়ার দাবি করে সাখাওয়াতের বাবা-মা। পরে জান্নাতের মা হাসিয়া বেগম তার স্বামী প্রবাসী কবির হোসেনের সাথে পরামর্শ করে এত টাকা দিতে পারবেন না বলে মেয়ের শ্বশুড়বাড়ির লোকজনকে জানান। টাকা দেওয়ার অপরাগতা প্রকাশের পর থেকে জান্নাতের ওপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন শুরু করে স্বামী সাখাওয়াত হোসেন ও তার বাবা-মা। এ নিয়ে জান্নাত ও তার স্বামী সাখাওয়াতের মধ্যে প্রায়ই পারিবারিক কলহ দেখা দেয়। পরে শুক্রবার দুপুর ২টার দিকে জান্নাতকে গলায় উড়না প্যাঁচানো অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। তিনি অভিযোগ করে আরও বলেন, তার মেয়েকে হত্যা করে ঘরের সিলিং এ ঝুলিয়ে রাখা হয়।
এ ব্যাপারে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দেবীদ্বার থানারও উপ-পরিদর্শক মো. রবিউল ইসলাম জানান, দেবীদ্বার থানায় ৩০৬ ধারায় আত্মহত্যা প্ররোচনার দায়ে একটি মামলা দায়ের করেন নিহত জান্নাতের বড় মামা মো. শাহ আলম। ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল (কুমেক) প্রেরণ করা হয়েছে। ময়নাতদন্তের রির্পোট প্রকাশের পর প্রকৃত রহস্য জানা যাবে।
বরকামতা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. নুরুল ইসলাম জানান, ছেলে ও মেয়ে কয়েকমাস আগে পালিয়ে কোর্টে বিয়ে করে। পরে সামাজিকভাবে দরবারের পর তাদের উভয়ের পরিবারের সম্মতে তাদের আবার বিয়ে দেওয়া হয়। মেয়েকে মেরে ঘরের সিলিং এ ঝুলিয়ে রাখার যে অভিযোগ তারা করেছে সেটা অবান্তর, বিশ্বাসযোগ্য নয়। এটা প্রকৃত ঘটনা নয়। বিয়ের পর পাঁচ লাখ টাকা যৌতুক চেয়েছে এ কথাও মেয়ের অভিভাবক কাউকে জানায়নি।