ঢাকার দুই সিটির তফসিল আজ !!
ঢাকার দুই (উত্তর-দক্ষিণ) সিটির ভোটের তফসিল আজ রোববার (২২ ডিসেম্বর) দেওয়ার জন্য চূড়ান্ত প্রস্তুতি নিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। আজকের কমিশন সভা শেষে তফসিল ঘোষণা করতে চায় সাংবিধানিক সংস্থাটি। ইসির উপসচিব মো. মাহেদুন্নবী বলেন, রোববার দুপুর আড়াইটায় প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সভাপতিত্বে কমিশনের ৫৭তম সভা অনুষ্ঠিত হবে। ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের তফসিল নির্ধারণসহ আরও সাতটি এজেন্ডা নিয়ে সভায় আলোচনা করা হবে।
সভার জন্য প্রস্তুত করা কার্যপত্র থেকে জানা যায়, রোববার তফসিল দিয়ে ২৬ জানুয়ারি রোববার ভোট করা যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা হলে ৩০ জানুয়ারি বৃহস্পতিবার ভোটগ্রহণের তারিখ রাখা যেতে পারে। তবে ভোটগ্রহণের তারিখ নিয়ে কমিশন চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে। এর আগে ইসির সিনিয়র সচিব মো. আলমগীর বলেছিলেন, জানুয়ারির শেষ সপ্তাহে দুই সিটির ভোট করার ব্যাপারে কমিশনের সিদ্ধান্ত আছে। তবে এখনও তারিখ চূড়ান্ত করা হয়নি। কমিশন বসে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে।
এদিকে আগের পরিকল্পনা থেকে সরে এসে ভোটের সময় কিছুটা পেছানোর বিষয়ে ইসি সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মূলত সেনাবাহিনীর শীতকালীন মহড়ার জন্য ভোটের সময় কিছুটা পেছানো হয়েছে। কেননা ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) পরিচালনায় সহায়তা করবে সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের নিয়ে গঠিত টেকনিক্যাল টিম। শীতকালীন মহড়া চলাকালে সেনাবাহিনীর সহায়তা পাওয়া যাবে না।
মহড়া শেষ হবে জানুয়ারির শেষদিকে। দুই সিটিতে ভোটকেন্দ্র রয়েছে ২ হাজার ৬০০টির মতো। এ ক্ষেত্রে প্রতিটি কেন্দ্রে একজন করে ইভিএম পরিচালনা টিমের সদস্য কাজ করলেও ২ হাজার ৬০০ জন লোকবল প্রয়োজন। নির্বাচন কমিশনের এ লোকবল নেই। মহড়ার সময় আবার সশস্ত্র বাহিনীও এ লোকবল মহড়া চলাকালে দেবে না। এ অবস্থায় জানুয়ারির শেষ সময় ছাড়া ভাবার উপায় নেই কমিশনের। অন্যথায় মার্চের দিকে যেতে হবে। সম্প্রতি দুই সিটির সম্প্রসারিত ১৮টি করে মোট ৩৬টি ওয়ার্ডের সংরক্ষিতসহ ৪৮ জন কাউন্সিলর জানুয়ারিতে নির্বাচন না করতে কমিশনে আবেদন করেছিলেন। এটি নিয়ে ভাবা হয়েছিল নির্বাচন নিয়ে জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে।
এ বিষয়ে সিনিয়র সচিব বলেন, নির্বাচন নিয়ে আইনি কোনো ধরনের জটিলতা নেই। তাদের আবেদন কমিশনে উপস্থাপন করেছিলাম। কমিশন জানিয়েছে, পরিষদ ভেঙে গেলে নির্বাচিতদের মেয়াদও শেষ হয়ে যাবে। পরিষদের মেয়াদ শেষের ১৮০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করার আইনি বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এরই মধ্যে ঢাকার দুই সিটির ভোটের ক্ষণ গণনা শুরু হয়েছে। ১৪ নভেম্বর নির্বাচন উপযোগী হয়েছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন। আর ১৮ নভেম্বর নির্বাচন ক্ষণ গণনা শুরু হয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে। স্থানীয় সরকার থেকে চিঠি পাওয়ায় ভোটগ্রহণের প্রস্তুতি শুরু করে কমিশন। প্রথমত কমিশনের চিন্তা ছিল ডিসেম্বরের শুরুতে আনুষ্ঠানিক বৈঠক করে ঢাকার দুই সিটির তফসিল ঘোষণার। মধ্য জানুয়ারির মধ্যে নির্বাচন শেষ করার। কিন্তু নানা দিক বিবেচনা করে এখন জানুয়ারির শেষ সপ্তাহে ভোটগ্রহণের সম্ভাব্য তারিখ ধরে নির্বাচনি প্রস্তুতি নিচ্ছে। বিদ্যমান ভোটার তালিকা দিয়েই ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটিতে ভোট করা হবে।
ভোটকেন্দ্রের তালিকার খসড়া প্রস্তুত : ইসির কর্মকর্তারা বলেছেন, এরই মধ্যে দুই সিটির ভোটকেন্দ্রের তালিকার খসড়া প্রস্তুত করা হয়েছে। প্রস্তুত রয়েছে ভোটার তালিকাও। আর ইসি সচিবালয় দুই সিটিতে সব কেন্দ্রে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোটগ্রহণের জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিতেও সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তারা বলছেন, দুই সিটিতে প্রায় আড়াই হাজার ভোটকেন্দ্র রয়েছে। ভোটকক্ষ রয়েছে প্রায় সাড়ে ১৩ হাজার।
ইভিএমের বিষয়ে জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের (এনআইডি) মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম বলেন, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি ভোটের জন্য প্রায় ৩০ হাজারের মতো ইভিএম প্রস্তুত রাখা হয়েছে। সেই সঙ্গে নির্বাচনি এলাকার ওয়ার্ডভিত্তিক ভোটার তালিকার সিডিও প্রস্তুত থাকছে।
ভোট কর্মকর্তাদের প্যানেল তৈরি : ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচন সামনে রেখে অর্ধ লাখ ভোটগ্রহণ কর্মকর্তার প্রাথমিক তালিকা করেছে নির্বাচন কমিশন। অন্যদিকে ঢাকা উত্তর সিটির নির্বাচনে রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ের জন্য বনানী কমিউনিটি সেন্টার ও দক্ষিণ সিটি নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ের জন্য মতিঝিল কমিউনিটি সেন্টার (বীর মুক্তিযোদ্ধা সাদেক হোসেন খোকা কমিউনিটি সেন্টার) ব্যবহারে সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করার জন্য ইসি সিদ্ধান্ত দিয়েছে।
প্রসঙ্গত, ২০১৫ সালের ২৮ এপ্রিল একসঙ্গে ঢাকা উত্তর, দক্ষিণ ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের নির্বাচন হয়। নির্বাচনের পর ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রথম সভা হয় ওই বছরের ১৪ মে, দক্ষিণ সিটিতে ১৭ মে ও চট্টগ্রাম সিটিতে প্রথম সভা হয় একই বছরের ৬ আগস্ট। এ হিসেবে ঢাকা উত্তরের মেয়াদ শেষ হবে ২০২০ সালের ১৩ মে, আর দক্ষিণে একই বছরের ১৬ মে। এছাড়া চট্টগ্রাম সিটির মেয়াদ শেষ হবে ২০২০ সালের ৫ আগস্ট। স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) আইন ২০০৯ অনুযায়ী, মেয়াদ শেষ হওয়ার আগের ১৮০ দিনের মধ্যে ভোটগ্রহণ করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
আগামী বছরের ৭ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ক্ষণ গণনা শুরু হবে। মার্চে চট্টগ্রাম সিটির ভোটগ্রহণ করতে চায় ইসি। ঢাকা উত্তর সিটিতে ভোটার সংখ্যা ৩০ লাখ ৩৫ হাজার ৬২১ জন। সাধারণ ওয়ার্ড ৫৪টি এবং সংরক্ষিত ওয়ার্ড ১৮টি। সম্ভাব্য ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা ১ হাজার ৩৪৯টি এবং ভোটকক্ষ ৭ হাজার ৫১৬টি। আর দক্ষিণ সিটিতে ভোটার রয়েছেন ২৩ লাখ ৬৭ হাজার ৪৮৮ জন। সাধারণ ওয়ার্ড ৭৫টি এবং সংরক্ষিত ওয়ার্ড ২৫টি। সম্ভাব্য ভোটকেন্দ্র ১ হাজার ১২৪ এবং ভোটকক্ষ ৫ হাজার ৯৯৮টি।
সূত্রঃ বিডি২৪লাইভ