তাবলিগের দুই পক্ষ ইজতেমা নিয়ে আবারও মুখোমুখি !!
বিশ্ব ইজতেমার আয়োজন নিয়ে আবারও মুখোমুখি অবস্থানে দাঁড়িয়েছে তাবলিগ জামাতের বিবদমান দু’পক্ষ। মাওলানা সাদের অনুসারীদের ইজতেমাকে ‘ইজতেমা’ বলতেই নারাজ সাদবিরোধীরা।
বৃহস্পতিবার এ নিয়ে রাজধানীর একটি রেস্টুরেন্টে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেছেন তাবলিগ জামাতের কেন্দ্রীয় মুরব্বি মাওলানা সাদ কান্ধলবির বিরোধী অংশ হিসেবে পরিচিত এ অংশটি।অপরদিকে এ বিষয়ে হস্তক্ষেপ কামনা করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের কাছে চিঠি পাঠিয়েছে মাওলানা সাদ অনুসারীরা।
গত ২৮ অক্টোবর সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠক শেষে জানানো হয়েছিল, আগামী ১০ থেকে ১২ এবং ১৭ থেকে ১৯ জানুয়ারি দু’পক্ষ আলাদাভাবে ইজতেমার আনুষ্ঠানিকতা পালন করবে।
অর্থাৎ, প্রথম পর্বে (১০-১২ জানুয়ারি) সাদবিরোধী গ্রুপ এবং দ্বিতীয় পর্বে (১৭-১৯ জানুয়ারি) সাদপন্থীদের ইজতেমা অনুষ্ঠিত হবে। তবে সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী মাওলানা সাদের অনুসারীরা ইজতেমা করলেও সেটাকে ইজতেমার দ্বিতীয় পর্ব বলতে নারাজ বিরোধী পক্ষের নেতারা।
বৃহস্পতিবার ‘তাবলিগ জামাতের চলমান পরিস্থিতি ও বিশ্ব ইজতেমা-২০২০ এর প্রস্তুতি’ শীর্ষক বৈঠকে ২০ দলীয় জোটের সাবেক শরীক দল বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব মাওলানা মাহফুজুল হক বলেন, ‘এবার তাবলিগ জামাতের ইজতেমা একপর্বেই হচ্ছে। আর সেটা ১০ জানুয়ারি শুরু হয়ে ১২ জানুয়ারি আখেরি মোনাজাতের মাধ্যমে সম্পন্ন হবে।’
তাবলিগ জামাতের উদ্যোগে এ মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হলেও এতে মাওলানা জুবায়ের বা তার সমমর্যাদার কোনো মুরব্বি উপস্থিত ছিলেন না। এছাড়া কাকরাইলের প্রথম বা মধ্যসারির কোনো দায়িত্বশীলকেও বৈঠকে অংশ নিতে দেখা যায়নি।বৈঠকে তাবলিগের ইতিহাস, তাবলিগের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা নিয়ে বিশদ আলোচনা হয়। আলোচনায় উঠে আসে তাবলিগের সংকটের বিষয়টিও।
তারা বলেন, মাওলানা সাদের ভ্রান্ত মতাদর্শের কারণেই মূলত আলেমরা তার বিরোধিতা করছেন। শুধু বাংলাদেশের আলেমরা নন, সারা বিশ্বের আলেমরাই তার বিরোধিতা করেছেন।এদিকে আসন্ন বিশ্ব ইজতেমার তারিখ সম্পর্কে অপপ্রচার ও বিভ্রান্তি ছড়ানো বন্ধ করতে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে চিঠি দিয়েছেন মাওলানা সাদ কান্ধলবির অনুসারীরা।
বৃহস্পতিবার কাকরাইলের আহলে শুরা সৈয়দ ওয়াসিফুল ইসলাম প্রেরিত ওই চিঠিতে বলা হয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয় যে, আগামী ১০ থেকে ১২ জানুয়ারি মাওলানা জুবায়ের অনুসারীরা ইজতেমা করবে আর ১৭ থেকে ১৯ জানুয়ারি মাওলানা সাদ অনুসারীরা ইজতেমা পালন করবে।কিন্তু গত ১লা জানুয়ারি একটি চিঠিতে ইজতেমার ‘সঠিক তারিখ’ হিসেবে ১০,১১ ও ১২ জানুয়ারি উল্লেখ করে তা সব মসজিদে ঘোষণার আহ্বান জানানো হয়েছে।
এ ধরণের আহ্বান সরকারের গৃহীত সিদ্ধান্তের সঙ্গে সাংঘর্ষিক এবং দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অপচেষ্টা বলে ওই চিঠিতে বলা হয়।এদিকে যতই মতবিরোধ হোক বাংলাদেশেই বিশ্ব ইজতেমা হবেই বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মো. আসাদুজ্জামান খান কামাল।
বৃহস্পতিবার বিকালে টঙ্গীর ইজতেমা ময়দান চত্বরে এবারের বিশ্ব ইজতেমার অগ্রগতি বিষয়ক অবহিতকরণ সভার প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, অত্যন্ত দুঃখজনক হলেও ইজতেমা নিয়ে তাবলীগ জামাতের লোকজন দ্বিধাবিভক্ত হয়েছে, তাদের মধ্যে মতবিরোধ হয়েছে। যতই মতবিরোধ হোক, বাংলাদেশেই বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠিত হবে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, তাদের মধ্যে মত পার্থক্য থাকলেও তারা সুন্দরভাবে এক জায়গায় ইজতেমা করবে তারা সে ব্যাপারে একমত। তারা অভিমত প্রকাশ করেছেন এবারও যেভাবে প্রস্তুতিটা হয়েছে, যেভাবে কাজ চলছে, সুন্দরভাবে ইজতেমাটা সম্পন্ন হবে।
অনুষ্ঠানে যুব ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী মো. জাহিদ আহসান রাসেল, ধর্ম প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট শেখ মো. আব্দুল্লাহ, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোস্তফা কামাল উদ্দিন, পুলিশের আইজি জাবেদ পাটোয়ারি,
র্যাব মহাপরিচালক মো. বেনজীর আহমদ, গাজীপুর মহানগর পুলিশ কমিশনার মো. আনোয়ার হোসেন, গাজীপুরের জেলা প্রশাসক এসএম তরিকুল ইসলাম, তাবলীগের দুই পক্ষের পাঁচজন করে ১০জন মুরুব্বীসহ বিভিন্ন দফতরের কর্মকর্তা ও প্রতিনিধিরা অংশ নেন।