তোকে কিনে এনেছি, যা ইচ্ছা তা-ই করব, বলেই চলত সুমির ওপর নি’র্যাতন !!
সৌদি থেকে দেশে ফেরা নারী শ্রমিক সুমি আক্তার বলেন, ‘প্রতি রাতেই শরীরের ওপর চলত নি’র্যাতন। প্রতিবাদ করলেই মারধর। একপর্যায়ে অজ্ঞান হয়ে পড়তাম। কিন্তু তাতে তারা থেমে যেত না। ওই অবস্থায়ই শরীরের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ত। জ্ঞান ফিরলে বুঝতে পারতাম সেটা। আমি প্রথমে যেই বাসায় ছিলাম, সেই বাসার মালিক চালাত এমন নি’র্যাতন।’
‘একপর্যায়ে ওই মালিক আমাকে বিক্রি করে দেয় আরেক বাসায়। ওই বাসায় গিয়ে পড়ি আরেক বিপদে। সেখানেও শারীরিক নি’র্যাতন। নতুন মালিক বলল, বাংলাদেশি প্রায় ৪ লাখ টাকায় আমাকে কিনেছে সে। আত্মরক্ষায় প্রতিবাদ করলে নতুন মালিক বলে, তোকে কিনে এনেছি। তোর সঙ্গে যা ইচ্ছা তা-ই করব। এভাবে প্রতি রাতে আমার ওপর চলত নি’র্যাতন।’
গতকাল শুক্রবার দেশে ফিরে এভাবেই নি’র্যাতনের বর্ণনা দিয়েছেন সৌদিতে যাওয়া নারী শ্রমিক সুমি আক্তার। তার বাড়ি পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার পাঁচপীর ইউনিয়নের বৈরাতী গ্রামে। গতকাল সকাল ৭টা ১৫ মিনিটে এয়ার অ্যারাবিয়ার একটি ফ্লাইটে তিনি হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে পৌঁছান। তার সঙ্গে দেশে ফিরেছেন নি’র্যাতনের শিকার আরও ৯১ নারী গৃহকর্মী।
এ সময় ওয়েজ আর্নার্স ওয়েলফেয়ার বোর্ডের পরিচালক ও উপসচিব মো. জহিরুল ইসলাম বিমানবন্দরে উপস্থিত ছিলেন। প্রবাসী কল্যাণ ডেস্কের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা উপস্থিত থেকে বিমানবন্দরের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্নে সহযোগিতা করেন।
এদিকে বিমানবন্দরের আনুষ্ঠানিকতা শেষে সুমিকে ভিআইপি টার্মিনাল দিয়ে বের করে নিয়ে আসা হয়। এরপর বোর্ডের নিজস্ব গাড়িতে সুমিকে তার বাড়ি পঞ্চগড়ের উদ্দেশে পাঠানো হয়। স্বামী নুরুল ইসলাম বিমানবন্দরে উপস্থিত থাকলেও তার কাছে সুমিকে হস্তান্তর করা হয়নি। পঞ্চগড়ের বোদায় তার বাবা-মায়ের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান হুমায়ূন কবীর প্রধানের উপস্থিতিতে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের প্রবাসী কল্যাণ ডেস্কের সহকারী পরিচালক আবু হেনা মোস্তফা কামাল এবং বোদা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ মাহমুদ হাসান সুমিকে তার বাবা রফিকুল ইসলাম ও মা মলিকা বেগমের কাছে হস্তান্তর করেন। এ সময় সুমির স্বজন ও স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীরা সেখানে উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে মেয়ের ওপর নি’র্যাতনের কথা জানতে পেরে নাওয়া-খাওয়া ভুলে দুশ্চিন্তায় দিন কাটিয়েছেন মা মলিকা বেগম। মেয়েকে দেশে ফিরিয়ে এনে দেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন তিনি।
এ সময় বাবা রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘অভাব-অনটনের সংসারে কিছু টাকা আয়ের জন্য বিদেশে গিয়েছিল মেয়েটা। কোনোদিন ভাবতে পারিনি এমন অবস্থার শিকার হবে আমার এই মেয়েটি।’
এ সময় সুমির স্বামী নুরুল ইসলাম জানান, স্ত্রীর ওপর নি’র্যাতনের খবর জানতে পেরে তাকে দেশে ফিরিয়ে আনতে তিনি বাদী হয়ে সুমিকে সৌদিতে পাঠানো রিক্রুটিং প্রতিষ্ঠান ‘রূপসী বাংলা ওভারসিজের’ মালিক আক্তার হোসেনের নামে পল্টন থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন।