দেশের খবর

ত্রাণের সেই ১৫ টন চাল চুরির রহস্য বের করলেন এমপি !!

কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলায় ত্রাণের ১৫ টন চাল চুরি নিয়ে চলছে নানা নাটকীয়তা। বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যেমন আলোচনা-সমালোচনা চলছে তেমনি প্রশাসনিক তৎপরতাও চলছে চোখে পড়ার মতো। ইতিমধ্যে এ ঘটনায় অভিযুক্ত করে পেকুয়া উপজেলার টৈটং ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়াম্যান জাহেদুল ইসলামকে তার পদ থেকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়। তার একদিন পরেই তাকে আওয়ামী লীগের পদ থেকেও বহিষ্কার করা হয়।

একই ঘটনার জেরে গত ৩০ এপ্রিল পেকুয়া থেকে প্রত্যাহার করা হয়েছিল উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাঈকা শাহাদাতকে। তবে ২৪ ঘণ্টা না যেতেই শুক্রবার বন্ধের দিনই আরেকটি প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে তার বদলির আদেশ স্থগিত করা হয়।

এদিকে, আলোচিত ত্রাণের চাল আত্মসাতের বিষয়ে নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে কক্সবাজার-১ (চকরিয়া-পেকুয়া) আসনের সংসদ সদস্য জাফর আলমের সঙ্গে প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) এবং টৈটং ইউপি সচিবের পৃথক মোবাইল কথোপকথন। এ কথোপকথনের সারমর্ম হচ্ছে, আত্মসাৎ হওয়া ওই ১৫ টন ত্রাণের আড়াই টন চাল ও বাকি সাড়ে ১২ টনের টাকা উত্তোলন করে চেয়ারম্যান ইউএনওর কাছেই দিয়ে আসেন।

ফাঁস হওয়া এ অডিও ক্লিপ বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, জাফর আলম এমপি পেকুয়ার সাবেক পিআইও সৌভ্রাত দাশের কাছে প্রকৃত ঘটনা জানতে চান। এ সময় পিআইও সৌভ্রাত দাশ বলেন, ‘প্রকৃত ঘটনা হচ্ছে ইউএনও স্যার আমাকে বলেছিলেন, বরাদ্দকৃত এ ১৫ টন চালের মধ্যে আড়াই টন চাল এবং বাকি সাড়ে ১২ টনের টাকা ক্যাশ করে শুকনো খাবার ক্রয় করে উপজেলার ৭ ইউনিয়নে বিতরণ করবেন। যেহেতু এ বরাদ্দ দেওয়ার সময় একজন চেয়ারম্যানকে পিসি করতে হয় সে কারণে রাজি হওয়ায় টৈটং ইউপি চেয়ারম্যান জাহেদ ইসলাম চৌধুরীকে পিসি করা হয়েছে।’

এ সময় এমপি জিজ্ঞেস করেন, ‘তোমরা ম্যাডামকে বলনি যে, আপনি শুকনা খাবার দেওয়ার কথা এখন দিচ্ছেন না কেন?’ তখন পিআইও বলেন, ‘পরে যখন আমি ম্যাডামকে ফোন করে জাহেদ চেয়ারম্যান চাল বিক্রি করে আসার বিষয়টি জানালাম তখন তিনি চেয়ারম্যানকে সরাসরি তার কাছে পাঠাতে বললেন।’তখন এমপি বলেন, ‘অহ, টাকা পাওয়ার পরে তোমাদের আর পাত্তা দিচ্ছেন না?’এদিকে গত ১৫ এপ্রিল সৌভ্রাত দাশ পেকুয়া থেকে বদলি হন। বর্তমানে তিনি কক্সবাজার সদরের প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত আছেন।

ফাঁস হওয়া অপর অডিও ক্লিপে জাফর আলম এমপিকে টৈটং ইউনিয়ন পরিষদের সচিব আবদুল আলিমের সঙ্গে কথা বলতে শোনা যায়। এতে এমপি জিজ্ঞেস করেন, ‘আলিম আমাকে একটা সত্য কথা বলো যে, জিআরের চাল বিক্রি করে টাকাটা কি চেয়ারম্যান খেয়েছে নাকি ইউএনও নিয়েছে?’

এ সময় সচিব আবদুল আলিম বলেন, ‘সত্য হলো, আমাকে চেয়ারম্যান ফোন করায় একটি দুই টনের জিআরের ডিওর সাথে ১৫ টনের ডিওটিও নিয়ে চকরিয়া খাদ্য গুদামে যাই। এ সময় ইউএনও আমাকে ফোন করে আড়াই টন চাল ওনার ওখানে আমার লেবার দিয়ে নামিয়ে দিতে বলেন। পরে আমার ড্রাইভার গিয়ে উপজেলা হলরুমের পাশে উপজেলা চেয়ারম্যানের বাসভবনে চালগুলো নামিয়ে দেয়। এ আড়াই টন চাল আমি নিজে গিয়ে দিয়ে এসেছি। বাকি সাড়ে ১২ টনের টাকা আমি নিজ হাতে দেইনি তবে এ টাকাগুলো ওনাকেই দেওয়া হয়েছে বলে আমি জানি।’

এদিকে এ কথোপকথনের বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে ইউপি সচিব আবদুল আলিম এমপির সঙ্গে কথোপকথনের সত্যতা স্বীকার করেন। আর সাবেক প্রকল্প কর্মকর্তা সৌভ্রাত দাশ প্রথমে এ বিষয়ে প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন। পরে তিনি বলেন, ‘এ ধরনের কোনো কথাবার্তা এমপি মহোদয়ের সাথে আমার হয়নি।’

এ বিষয়ে জানতে একাধিকবার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাঈকা শাহাদাতকে ফোন করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি। খুদে বার্তা দিলেও তিনি কোনো উত্তর দেননি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্থানীয় এমপি জাফর আলম সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমার একজন ডেডিকেটেড নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠবে আর আমি খবর নেবো না, তা তো হয় না। আমি বিভিন্নভাবে খবর নিয়েছি। এটি অস্বীকারের সুযোগ নেই। তবে বিষয়টি নিয়ে তদন্ত চলছে।’

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, করোনাভা’ইরাসের প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মধ্যে বিতরণের জন্য গত ৩১ মার্চ টৈটং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের অনুকূলে ১৫ টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়। পরে সেই চাল লোপাটের বিষয়টি জানাজানি হলে ২৫ এপ্রিল থেকে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। এরপরই বিষয়টি নিয়ে মাঠে নামে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। ২৭ এপ্রিল বিষয়টি তদন্ত করতে পেকুয়া উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয়ে অভিযান চালান তারা।

এ সময় ওই প্রকল্প ফাইলে কোনো মাস্টাররোল না থাকাসহ কাগজপত্রের নানা ঘাটতি দেখতে পেয়ে সন্দেহ আরও জোরালো হয় তদন্তকারীদের। পরে আলোচিত চেয়ারম্যান জাহেদুল ইসলামকে নিয়ে তার ইউনিয়ন পরিষদে অভিযান চালান গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা। এ সময় চেয়ারম্যান গুদামের চাবি আনতে যাওয়ার কথা বলে গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যদের পরিষদে বসিয়ে রেখে কৌশলে পালিয়ে যান। পরে ২৮ এপ্রিল রাতে চেয়ারম্যান জাহেদুল ইসলামের বিরুদ্ধে চাল আত্মসাতের অভিযোগে মামলা দায়ের করেন পেকুয়া উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম।

এদিকে ত্রাণের চাল আত্মসাতের ঘটনায় চেয়ারম্যানের বহিষ্কারের রেশ শেষ হতে না হতেই ৩০ এপ্রিল প্রত্যাহার করা হয় পেকুয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাঈকা শাহাদাতকে। ৩০ এপ্রিল চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনারের সংস্থাপন শাখার অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (সার্বিক) শংকর রঞ্জন শাহা স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনের এ বদলির কথা জানা যায়। তবে ঘটনার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই ১ মে শুক্রবার বন্ধের দিন সেই বদলির আদেশ স্থগিত করে আরেকটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।

সূত্রঃ আমাদের সময়

J A Suhag

Local News: J A Suhag writes Local News articles for industries that want to see their Google search rankings surge. His articles have appeared in a number of sites. His articles focus on enlightening with informative Services sector needs. he holds the degree of Masters in Business and Marketing. Before he started writing, he experimented with various professions: computer programming, assistant marker, Digital marketing, and others. But his favorite job is writing that he is now doing full-time. Address: 44/8 - North Dhanmondi, Dhaka Email: [email protected]

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button