দুবাইগামী ভিজিট ভিসার লোকদের ঢাকা বিমানবন্দরে ঘুষের অভিযোগ !!
সংযুক্ত আরব আমিরাতে ৮ বছর ধরে বাংলাদেশিদের জন্য শ্রমিক ভিসা বন্ধ আছে। দেশের শীর্ষ রেমিটেন্স হাব আরব আমিরাতে এত ঝড় ঝঞ্ঝার পরও দেশে বৈধ পথে টাকা পাঠাতে আরব আমিরাত প্রবাসীদের জুড়ি নেই।
চলমান বছরে বৈধ পথে শীর্ষ রেমিটেন্স প্রেরণকারী বিশ্বের নানা দেশের ৪২ জন সি আই পি নির্বাচিত করেছে বাংলাদেশ সরকার। তার মধ্যে ৯ জনই আরব আমিরাত প্রবাসী। প্রতিবারের মত রেমিটেন্স প্রেরণকারীর তালিকায় দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে এ দেশ।
বিগত ২ বছর ধরে আরব আমিরাত সরকার বাংলাদেশিদের জন্য ভিজিট ভিসা চালু করে। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশি অনেক ব্যবসায়ী নিজেদের ব্যবসা পরিচালনা করার জন্য আত্মীয় স্বজনদের ভিজিট ভিসায় এনে নিজের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে পার্টনার বা ইনভেস্টর ভিসা লাগিয়ে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছিলেন।
অনেকে আবার ক্ষুদ্র বিনিয়োগ করে ব্যবসা খুলে নিজেদের লোককে ভিজিট ভিসায় এনে পার্টনার বা ইনভেস্টর ভিসা লাগান। জানা যায়, বিগত ২ বছরে প্রায় ২ লাখ বাংলাদেশি ভিজিট ভিসায় এসেছেন। তবে অনেকে এ সুযোগের অপব্যবহার করে ভিজিটে এসে অবৈধ হওয়ার অভিযোগ বাংলাদেশ সরকারের কাছে গেলে সরকার ঢাকা বিমানবন্দরে কড়াকড়ি শুরু করেন। চলিত বছরের অক্টোবরের শুরুর দিকে ঢাকা বিমানবন্দরে ভিজিটে আসা লোকদের আটকানো শুরু করে। শুরু হয় প্রবাসীদের যন্ত্রণা। বিপাকে পড়েন হাজার হাজার প্রবাসী। যারা তাদের নিজেদের লোককে এনে চালিয়ে নিচ্ছিলেন সংসারের চাকা। সেইসঙ্গে সচল রাখছিলেন দেশের রেমিটেন্স প্রবাহ।
মৌলভীবাজারের বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া নাহিদ আনোয়ার শাওন। তার বাবার আতর ব্যবসা দুবাই শহরে। ২ বছর পর শাওনের আমেরিকায় যাওয়ার কথা। মাঝখানের এই সময়টা বাবার ব্যবসা দেখতে শাওন আসছিলেন দুবাইতে। তাকে সে সময় ঢাকা বিমানবন্দরে অফলোড করে দেয়া হয়। দুবাই তো আসা তার হলোই না সঙ্গে থেমে গেল আমেরিকা যাওয়ার স্বপ্ন। শাওনের মত হাজার হাজার লোক এই অফলোডের বলি হয়েছেন।
এমন অবস্থায় অক্টোবরের মাঝামাঝি সময়ে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ এমপি দুবাই সফরে এলে বাংলাদেশ কনস্যুলেট জেনারেল দুবাইয়ের একটি অনুষ্ঠানে তিনি বলেছিলেন – ভিজিটে এসে যারা অবৈধ হয় দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করছে তাদের বিমানবন্দরে আটকানো হচ্ছে আর হবে তবে যারা সত্যিকার ভাবে ভিজিটে এসে ব্যবসা করবেন বা নিজেদের বাবা ভাইয়ের প্রতিষ্ঠান আছে তারা দূতাবাসের মাধ্যমে উপযুক্ত প্রমাণাদিসহ সত্যায়িত কাগজ বিমানবন্দরে পাঠানো হলে তাদের ছাড় দেয়া হবে। এরপর থেকে প্রবাসীরা এ পথ অনুসরণ করলে অনেকে আসতে পারেন। বিগত কয়েকদিন ধরে ইমিগ্রেশন পুলিশ আবার তাদেরকেও ছাড় দিচ্ছে না। উল্টা ঘুষ দাবি করছে বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রামের একজন প্রবাসী কামাল আহমদ। তিনি জানান সব কিছু ঠিক ঠাক থাকার পরও বিমানবন্দরের পুলিশ তার কাছে ২০ হাজার টাকা ঘুষ দাবি করেন।
নিরুপায় হয়ে তিনি এ টাকা দিলে তাকে ছাড় দেয়া হয়। কিন্তু যারা টাকা দেয়নি তাদেরকে অফলোড সীল মেরে ফেরত পাঠানো হয়। আরব আমিরাত সরকারের পক্ষ থেকে ভিজিট ভিসায় আগত বাংলাদেশিদের জন্য কোন বাধা নেই। সেই সঙ্গে বাংলাদেশ সরকার উপযুক্ত প্রমাণে আসার সুযোগ দিলেও ইমিগ্রেশনের অসাধু পুলিশ কর্মকর্তাদের কারণে বিপাকে আছেন প্রবাসীরা। এ নিয়ে তারা ক্ষোভ জানিয়েছেন। শারজাহ প্রবাসী বেলাল আহমদ জানান- এটা কেমন আইন? সব ঠিক থাকার পরও ছাড় দেয়া হয় না। আবার এক লাখ বিশ হাজার টাকা বা দেড় লাখ টাকা দালালকে দিলে তারা পুলিশকে ম্যানেজ করে ছাড় দিচ্ছে।
বিষয়টি অনেক প্রবাসী স্থানীয় দূতাবাসে জানিয়েছেন। তাদের কষ্ট দেখার যেন কেউ নেই। বাংলাদেশি ট্রাভেলস আল মামুরা গ্রুপের চেয়ারম্যান মীর্জা আবু সুফিয়ান বলেন, আমরা সকল দেশের ভিজিট ভিসা বিক্রি করি। অন্য কোনো দেশে পুলিশের এমন অব্যবস্থাপনা নেই। প্রয়োজনে যে লোক আসবে সে এখানে আসার পর নিশ্চিত ভিসা লাগাবে এমন নিশ্চয়তার জন্য দূতাবাস এর মাধ্যমে বা বাংলাদেশে কিছু জামানত রাখার ব্যবস্থা করা যেতে পারে। কিন্তু ঘুষ দিলে ছাড়বে আবার বৈধ সব কাগজ থাকার পরও ছাড়বে না, এমন মানা যায় না। এ ব্যাপারে সরকারের দ্রুত পদক্ষেপ নিতে সকল প্রবাসী আহ্বান করেছেন। এদিকে জানা গেছে, ভারতের ভিসা লাগিয়ে অনেকে ভারত হয়ে দুবাই এসেছেন। দেশ এগিয়ে যাচ্ছে দ্রুত গতিতে। এ এগিয়ে যাওয়াতে আরব আমিরাত প্রবাসীদের ভূমিকা অগ্রণী।
বিমানবন্দরে এ রকম হয়রানি বন্ধ করে সঠিক লোকদের আসার সুযোগ দিতে সরকারের কাছে আকুল আবেদন জানিয়েছেন প্রবাসীরা। এ ব্যাপারে তারা যথাযথ মহলের দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের অনুরোধ করেছেন।
সূত্রঃ যুগান্তর