দেশে করোনা থাকতে পারে দেড় থেকে দু’বছর !!

করোনা ভা’ইরাসে আ’ক্রান্তের সংখ্যার ওপর ভিত্তি করে দেশের বিভিন্ন এলাকাকে তিনটি জোনে ভাগ করে (গ্রিন, ইয়েলো, রেড) জোন করার একটি প্রস্তাবনা দিয়েছে করোনা সংক্রান্ত জনস্বাস্থ্য বিষয়ক বিশেষজ্ঞ কমিটি। গত মঙ্গলবার এ প্রস্তাব স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে দাখিল করা হয়। করোনা সংক্রমণের লাগাম টানতে রেড জোন ঘোষিত এলাকাকে লকডাউন করে বেশি পরীক্ষা, কন্ট্রাক্ট ট্রেসিংসহ ১২ দফা সুপারিশ করা হয়েছে ওই প্রস্তাবনায়। এটি বর্তমানে যাচাই বাছাই চলছে। শিগগিরই এটা বাস্তবায়নে যাবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

তাদের মতে, দেশে করোনা পরিস্থিতি আরও দেড় থেকে দু’বছর চলমান থাকতে পারে। ততোদিন গোটা দেশ লকডাউন রাখা সম্ভব নয়। তাই সংক্রমণের ওপর ভিত্তি করে করোনা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করতে হবে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক প্রফেসর ডা. আবুল কালাম আজাদ বিশেষজ্ঞ কমিটির প্রস্তাবনাটি গত বুধবার স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের কাছে উপস্থাপন করেছেন। স্বাস্থ্যমন্ত্রী এই প্রস্তাবনার ওপর আরও কিছু অবজারভেশন দেন। এটি সংশোধন করে শিগগিরই মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়া হবে। স্বাস্থ্য অধিদফতর ও মন্ত্রণালয় থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

কমিটির একজন সদস্য বলেছেন, আমরা আরবান এলাকাগুলোকে বিভিন্ন জোনে ভাগ করে কার্যক্রম পরিচালানার একটি প্রস্তাবনা দিয়েছি। প্রস্তাবে আছে- যে এলাকায় ৪০ জনের বেশি করোনা আ’ক্রান্ত পাওয়া যাবে, সেটি হবে রেড জোন। এই ৪০ জন কি মহল্লা হিসেবে ধরা হবে, নাকি ক্যাচমেন্ট এরিয়া, নাকি ওয়ার্ডভিত্তিক- সে ইউনিট ঠিক করতে হবে। আমরা যে প্রস্তাবনা দিয়েছি এটাই চূড়ান্ত নয়। এ ক্ষেত্রে সরকার হয়তো সংখ্যা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিতে পারে। আমরা একটা স্ট্যাট্রেজি দিয়েছি। এই সংখ্যা একটি ওয়ার্ড বা মহল্লাভিত্তিক হবে কিনা তা ঠিক করবে স্বাস্থ্য অধিদফতর। আর সরকার এটা কীভাবে করবে সেটা সিদ্ধান্ত সরকারের। তিনি বলেন, প্রস্তাবনায় রেড জোনের জন্য কী কী কাজ করতে হবে তার বিস্তারিত তুলে ধরা হয়েছে।

একইভাবে ইয়েলো ও গ্রিন জোনের করণীয়ও বলা হয়েছে। আমরা প্রস্তাবনায় বলেছি, যেটিকে রেড জোন ঘোষণা করা হবে সেই এলাকায় রেসট্রিকশন মুভমেন্ট থাকতে হবে। যাদের পজিটিভ হবে তাদের হাসপাতাল নিতে হবে। যারা রোগীর সংস্পর্শে এসেছেন তাদের হোম কোয়ারেন্টিন কনফার্ম করতে হবে। রেড জোন থেকে কাউকে বের হতে না দেওয়ার প্রস্তাব করেছি। তার পরও যদি কারও সেখান থেকে বের হতে হয় বা ঢুকতে হয় তা হলে একটি আইনের মাধ্যমে তা করতে হবে। রেড জোনের বিষয়ে ১২টি পয়েন্ট বাস্তবায়নের প্রস্তাব দিয়েছি। এসব সঠিকভাবে মানা গেলে সংক্রমণ রোধ সম্ভব হবে। তবে এটি এখনো অফিসিয়ালি ডকুমেন্ট হয়নি, তাই বিস্তারিত বলা যাবে না।

এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক প্রফেসর ডা. আবুল কালাম আজাদ বলেন, বিশেষজ্ঞ কমিটি বলেছেন কোনো এলাকায় শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ১০ জনের মতো হয় এবং গত দুই সপ্তাহে নতুন কোনো রোগী শনাক্ত না হয়ে থাকে তা হলে সে এলাকাকে গ্রিন জোন বলা যেতে পারে। কোথায় রোগীর সংখ্যা ৩০ জনের নিচে হলে ইয়েলো জোন বলা যেতে পারে। ওনারা বলেছেন, রেড জোনে রোগীদের চিহ্নিত করতে হবে। ফ্ল্যাগ দিয়ে ওই জায়গায় সিল করতে হবে। ওই এলাকার কোনো লোককে বাইরে যেতে দেওয়া যাবে না। নজরদারি করতে হবে। কারও উগসর্গ পাওয়া গেলে টেস্ট করতে হবে।

রোগীর সংস্পর্শে যারা এসেছে তাদের খুঁজে বের করতে হবে। যদি ইয়েলো জোন হয় তা হলে রেড জোনের মতো কড়াকড়ি থাকবে না। তবে নজরদারিসহ অন্য ব্যবস্থা গ্রহণের কথা বলেছেন। গ্রিন জোনে হবে সেখানকার লোক স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করতে পারবে। এই কাজগুলো সিভিল প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি, স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ এবং কমিউনিটি ভলান্টিয়ার দেখাশোনা করবে। এটি বিশেষজ্ঞ কমিটির প্রাথমিক প্রস্তাব। এটি নিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর সাথে কথা বলেছি। মন্ত্রী আরও কিছু অবজারভেশন দিয়েছেন। এর পর ওনারা এটি বিশ্লেষণ করে প্রস্তাবনা আমাদের দেবেন। তার পরই প্রস্তাবনাটি স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে দেওয়া হবে।

 

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *