ধান চাষ করেই যেভাবে জীবন বদলে ফেলেছেন টাঙ্গাইলের তিন কৃষক !!
কৃষি নির্ভর এ দেশের কৃষি পণ্যের অন্যতম ধান। ধানসহ নানা কৃষি পণ্যের চাহিদাও রয়েছে ঢাকা বিভাগের সর্ববৃহৎ জেলা টাঙ্গাইলে। এ জেলার অন্যতম কৃষিপণ্য ধানের চাহিদা পূরণে স্বার্থক ব্যক্তিত্ব ও ব্যক্তিজীবনে সফল কৃষকের তালিকায় স্থান প্রাপ্ত বেশ কয়েকজন কৃষকের মধ্যে উল্লেখযোগ্য দেলদুয়ার উপজেলার সমেজ, জসিম আর জালাল।
এ তিন কৃষকের বর্তমান আবাদকৃত জমির পরিমাণ প্রায় সাড়ে ৪ হেক্টর। পৈতৃক যতসামান্য কৃষি জমিতে ধান উৎপাদনেই স্বার্থক নন এই তিরত্ন কৃষক। উৎপাদিত ধান বিক্রির মাধ্যমে হয়েছেন ছেলেদের বিদেশ পাঠানোসহ এক থেকে দেড় হেক্টর জমির মালিক। এ গ্রামগুলোর কৃষি জমির বর্তমান শতাংশ মূল্য সর্বনিম্ন ৫০ হাজার টাকা। এ অঞ্চলে ২৪৭ শতাংশে ১ হেক্টর। এছাড়াও বছরে দুইবার ধানের আবাদ ব্যতীত হয় সরিষা, পাট, আলু আর চিনাবাদাম।
সরেজমিন আর স্থানীয়দের তথ্যে জানা যায়, টাঙ্গাইলের দেলদুয়ার উপজেলার পাথরাইল ইউনিয়নের বকুলতলা আর কুকুরিয়া গ্রামের বাসিন্দা ও বংশ পরম্পরায় কৃষক এ তিন ব্যক্তি। পৈতৃকসূত্রে যতসামান্য কৃষি জমির উত্তরাধিকারী হলেও সর্বোচ্চ শ্রম আর প্রচেষ্টায় এসেছে তাদের সাফল্য। পরিবারের স্বচ্ছলতা ফিরিয়ে আনাসহ শত শত মণ ধান বিক্রির ফলে বসবাসরত এ তিন কৃষকের গ্রামগুলো পেয়েছে ব্যবসায়ীক অঙ্গণে সুপরিচিতি।
উপজেলার কুকুরিয়া গ্রামের মৃত. রহিম উদ্দিনের ৭০ বছর বয়সী ছেলে কৃষক জামাল উদ্দিন জানান, বাপের জমি থেকে মাত্র ৩৩ শতাংশ ধানি জমি পাইছি। ধান চাষে দিনরাত্রি খাইটা সংসারের সকল খরচ চালাইয়া দুই পুলারে বিদেশ পাঠাইছি। বড় পুলা সৌদিতে গেছে ২০ বছর আর ছোট পুলা কাতার আছে ১০ বছর। বর্তমানে আমি সাড়ে তিন’শ শতাংশ জমিনের মালিক। বছরে দুইবার ধানের আবাদ করি। চলতি মৌসুমের আমন ধান কাটা শেষ হইলেই করমু চিনার চাষ। কিছু কিছু জমিনের ধান পাঁকাসহ কাটা শুরু হইছে বইলা সাড়ে তিনশ টাকা কইরা দুইটা কামলা নিছি। এরপরও কামলার লগে লগে আমি কাম করতাছি। এ জমিন থেইকা সংসারের চালের খরচ বাদ দিয়া বছরে প্রায় পাঁচশ মণ ধান বিক্রি করি।
টাঙ্গাইলের বিভিন্নস্থান থেকে পাইকাররা আমাগো ধান কিনা লইয়া যায়। এবার আমন ধানের দাম বেশি আর কামলার দামটা কম পাইলেও ইরি ধানের দাম পাইছি কম। এছাড়া কামলার মজুরি গেছে সাতশ টাকা কইরা। চলতি আমন মৌসুমেও জমি থেকে না পেলেও তিনশ মণ ধান পাবেন বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
উপজেলার বকুলতলা গ্রামের আব্দুল শেখের ছেলে ও মধ্য বয়সী জসিম উদ্দিন জানান, ৯০ শতাংশ জমিন দিছিল বাবা। হেই জমিনে ধান আবাদ কৈইরা এখন আমার জমিন হইছে আড়াইশ শতাংশ। জমিনগুলাতে ধানের আবাদ খুবই ভালো। এছাড়া বছরে দুইবার ধান আবাদ করোন যায়। ইরি ধানের আবাদ শেষ কইরাই আমন ধান বুনছিলাম। ইরি আবাদে সাড়ে তিনশ মণ ধান পাইলেও আমন ধান পামু দুই থেইকা আড়াইশ মন। ধান বিক্রি কইরা বাড়ি দালান দিছি, পুলা পানরে স্কুলে পড়াইতাছি। টাঙ্গাইল থেইকা পাইকার আইসা আমগো ধান কি-না লইয়া যায়। এছাড়াও তিনি পাট ও সরিষা চাষ করেন বলেও জানান।
একই গ্রামের মৃত. গাজিউর রহমানের ছেলে ৬০ বছর বয়সী কৃষক সমেজ উদ্দিন জানান, বাপের জমিন থেইকা ভাগে ১০০ শতাংশ জমিন পাইছিলাম। বাপের জমিনে ধান চাষ আর বিক্রি কইরা জমিন কিনছি। এখন আমার জমিন হইছে পাঁচশ শতাংশ। আমাগো গ্রামের জমিনগুলাতে বছরে দুইবার ধান চাষ করোন যায়। ইরি ধানের আবাদ উঠবার লগে লগেই আমন ধান বুনছিলাম। জমিন থেইকা আমি ইরি ধান পাইছিলাম প্রায় সাতশ মণ আর আমন পামু না হইলেও পাঁচ থেইকা ছয়শ মণ। ধানের মৌসুম শেষ হইলে সরিষা,আলু আবার অনেক সময় পাট চাষও করেন তিনি।
ধান চাষ কইরা শুধু জমিনই কিনি নাই, চার পুলারে পড়ালেখা করাইছি, ঘর বাড়ি পাঁকা করছি। বড় দুই পুলা এখন চাকরি করতাছে আর দুই পুলা করতাছে ব্যবসা। প্রতি বছর প্রায় এক হাজার মণ ধান বিক্রি করতে পারেন বলেও জানান তিনি।