নানা মানুষের ধ’র্ষণে অসহ্য জীবন – স্বামীকে শেষ করে প্রতিশোধ নিলেন স্ত্রী !!
চতুর্থ স্ত্রী সামিরাকে নিয়ে গাজীপুরের শ্রীপুর পৌরসভার কেওয়া পশ্চিমখণ্ড (প্রশিকার মোড়) এলাকার একটি বাসার তিনতলার ফ্ল্যাটে ভাড়া থাকতেন জমি ব্যবসায়ী আব্দুর রহমান (৫২)।
গত ১০ ফেব্রুয়ারি আব্দুর রহমানের ব্যবসায়িক অংশীদারের সঙ্গে স্ত্রী সামিরাকে যৌন কাজে লিপ্ত হতে বাধ্য করান আব্দুর রহমান। এই ক্ষোভে ঘটনার দিন রাত ৩টার দিকে ধারাল দা দিয়ে স্বামীকে ঘুমন্ত অবস্থায় গলা কেটে হ’ত্যার পর মরদেহ অ্যাসিড দিয়ে ঝলসে তোশকে মুড়িয়ে রাখেন সামিরা। হ’ত্যার পর তিনদিন সামিরা মরদেহ নিয়ে একই বাসায় অবস্থান করেন। এরপর মরদেহ সরিয়ে ফেলতে ব্যর্থ হয়ে মা-বাবার সহায়তায় বাসা থেকে পালিয়ে যান সামিরা।
সোমবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) রাত সাড়ে ১০টার দিকে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে রাজধানীর দক্ষিণখান এলাকায় অভিযান চালিয়ে সামিরা ও তার বাবাকে গ্রেফতার করে র্যাব-১ পোড়াবাড়ি ক্যাম্পের একটি দল।গ্রেফতারকৃতরা হলেন নিহত আব্দুর রহমানের চতুর্থ স্ত্রী সামিরা আক্তার (২৬) এবং তার বাবা গাজীপুরের জয়দেবপুর এলাকার ছামিদুলের বাড়ির ভাড়াটিয়া বরিশালের উজিরপুর উপজেলার মৃৃত ফজলুল হকের ছেলে আলী হোসেন (৫৫)।
সামিরার বরাত দিয়ে র্যাব জানায়, জমি ব্যবসায়ী আব্দুর রহমানের চতুর্থ স্ত্রী সামিরা। ১০ ফেব্রুয়ারি ব্যবসায়িক অংশীদার রতনের সঙ্গে স্ত্রী সামিরাকে যৌন কাজে লিপ্ত হতে বাধ্য করান স্বামী আব্দুর রহমান। ওই দিন রাত ১১টার দিকে রতন তাদের বাসা থেকে চলে যান। পরিকল্পনা করে রাত ৩টার দিকে বাসায় থাকা ধারাল দা দিয়ে আব্দুর রহমানকে ঘুমন্ত অবস্থায় গলা কেটে হ’ত্যা করেন সামিরা। মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার পর আব্দুর রহমানের মরদেহ তোশকে মুড়িয়ে ঘরের ভেতর রেখে দেন। মৃত্যুর পর যাতে মরদেহ চিহ্নিত করতে না পারে সেজন্য মুখমণ্ডল অ্যাসিড দিয়ে ঝলসে দেন সামিরা।
হ’ত্যার পর তিনদিন সামিরা মরদেহ নিয়ে একই বাসায় থাকেন। মরদেহ সরিয়ে ফেলতে ব্যর্থ হয়ে মা-বাবার সহায়তায় বাসা থেকে পালিয়ে যান। কালিয়াকৈর থানাধীন ফুলবাড়ী এলাকার এক বান্ধবীর বাসায় দুইদিন আত্মগোপন করার পর ১৫ ফেব্রুয়ারি নওগাঁয় মামার বাসায় যান সামিরা। সেখানে কিছুদিন অবস্থান করে ২৩ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর দক্ষিণখান এলাকায় চাচার বাসায় আত্মগোপন করেন তিনি। অবশেষে রাজধানীর দক্ষিণখান এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। র্যাবের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সামিরা খুনের ঘটনার সরাসরি জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে ঘটনার মর্মান্তিক বর্ণনা দেন।
র্যাব জানায়, আব্দুর রহমান ও সামিরার বাড়ি একই এলাকায় হওয়ায় পূর্বপরিচিত ছিলেন। ২০১৬ সালে আব্দুর রহমান দ্বিতীয় স্ত্রীকে নিয়ে গাজীপুর মহানগরীর টঙ্গীতে বসবাস করতেন। সামিরা টঙ্গী সরকারি কলেজ থেকে ডিগ্রি পরীক্ষার্থী ছিলেন। দুজন পূর্বপরিচিত হওয়ায় আব্দুর রহমানের বাসায় থেকে পরীক্ষা দিতেন সামিরা। এরই মধ্যে সামিরাকে বিভিন্নভাবে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ধ’র্ষণের চেষ্টা করে ব্যর্থ হন আব্দুর রহমান।
এরপর কৌশলে খাবারের সঙ্গে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে অজ্ঞান করে সামিরাকে একাধিকবার ধ’র্ষণ করেন আব্দুর রহমান। একই সঙ্গে ধ’র্ষণের ভিডিও ধারণ করা হয়। পরে ধ’র্ষণের ভিডিও এবং হ’ত্যার ভয় দেখিয়ে দিনের পর দিন চলে ধ’র্ষণ।
ওই ধ’র্ষণের ভিডিও প্রকাশ পেলে সামিরাকে ডিভোর্স দেন স্বামী। পরে সামিরা উপজেলার নয়নপুর এলাকায় একটি ফার্মেসি পরিচালনা করতেন। ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর মাসে সামিরাকে বিয়ে করে কেওয়া পশ্চিমখণ্ড গ্রামের ভাড়া বাসায় সংসার শুরু করেন আব্দুর রহমান।
র্যাব আরও জানায়, তাদের বিয়ের পর থেকে ঘটনার দিন পর্যন্ত আব্দুর রহমান তার ব্যবসায়িক স্বার্থে আবার কখনও টাকার বিনিময়ে ব্যবসায়িক অংশীদারদের সঙ্গে স্ত্রী সামিরাকে যৌন কাজে লিপ্ত হতে বাধ্য করতেন। যৌন নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে ডিভোর্স চাইলে সামিরাসহ তার মা-ভাইকে হ’ত্যার হুমকি দেন। এসব ঘটনায় প্রতিশোধপরায়ণ হয়ে আব্দুর রহমানকে খুন করে সামিরা।
র্যাব-১-এর কোম্পানি কমান্ডার আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, মূলত যৌন নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে প্রতিশোধপরায়ণ হয়ে আব্দুর রহমানকে খুন করেছেন সামিরা। তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার জন্য শ্রীপুর থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।এর আগে গত ১৮ ফেব্রুয়ারি মঙ্গলবার রাত আড়াইটার দিকে আব্দুর রহমানের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। ঘটনার পর থেকে স্ত্রী সামিরা পলাতক ছিলেন।
ভবন মালিক চান মিয়ার ছেলে মজনু বলেন, মাস খানেক আগে তিনতলার একটি ফ্ল্যাট স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে ভাড়া নেন সামিরা ও আব্দুর রহমান। ভাড়া নেয়ার পর তারা বসবাস করে আসছিলেন। চার-পাঁচদিন ধরে ঘরের দরজা তালাবদ্ধ থাকায় সোমবার বিকেলে বারান্দা দিয়ে ফ্ল্যাটের ভেতর তোশকে মোড়ানো মরদেহ দেখে পুলিশে খবর দেয়া হয়। পরে ঘরের দরজা ভেঙে আব্দুর রহমানের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এ সময় তার স্ত্রী সামিরা পলাতক ছিলেন।