নিজের টাইমলাইনে আরিফ আজাদের লেখা দিলেন আজহারী !!
করোনাভাইরাস নিয়ে বইমেলায় আলোচিত লেখক আরিফ আজাদের লেখা নিজের ফেসবুক টাইমলাইনে শেয়ার দিয়েছেন জনপ্রিয় ইসলামী বক্তা মাওলানা মিজানুর রহমান আজহারী। তার এ ফেসবুক স্ট্যাটাসটি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে।
লেখক আরিফ আজাদের দেয়া করোনা ভাইরাস নিয়ে লেখা সেই আলোচিত স্ট্যাটাসটি হুবহু তুলে ধরা হলো-
‘‘করোনা মানেই ‘মৃত্যু’ নয়, বাঁচতে হলে জানতে হয়-
দেশি-বিদেশি মিডিয়া হাউজগুলোকে গত মাস দেড়েক ধরে খুব সুক্ষ্মভাবে পর্যবেক্ষণ করে যাচ্ছি। দেশীয় মিডিয়া হাউজের কথা অবশ্য ধর্তব্যের বাইরে, কারণ এদের নিউজগুলোর মাঝে কোনো সৃজনশীলতা নেই। নেই নিজস্ব রিসার্চ, ডাটা। এরা যেখানে যা পায় তা-ই অনুবাদ করে ছেড়ে দেয়। তাই, গ্লোবাল সিরিয়াস ইস্যুতে সচেতন ব্যক্তিমাত্রই বিদেশি মিডিয়া হাউজগুলোর ওপর স’তর্ক দৃষ্টি রাখবেন, এটাই স্বাভাবিক।
কিন্তু, ‘করোনা’ ইস্যুতে এই বিদেশি মিডিয়া, বিশেষ করে আমেরিকান মিডিয়াগুলোকে বেশ ইন্টারেস্টিং লাগছে আমার কাছে। তারা সারাদিন ‘করোনা’ কে তাদের লিড নিউজ হিশেবে দেখাচ্ছে, খবরের পাতা থেকে জিনিসটা সরাচ্ছেই না একদম। বিশ্বের কোনো প্রান্ত থেকে যদি করোনাতে কোনো একটা মৃ’ত্যুর সংবাদ পাওয়া যায়, সঙ্গে সঙ্গে সেটা তুলে দিচ্ছে লিড নিউজে।
মিডিয়াগুলো করোনায় মৃ’তের সংখ্যা হাইলাইট করছে বলে আমি বি’রোধিতা করছি না। কিন্তু আশ্চর্যের ব্যাপার হলো, করোনায় আ’ক্রান্ত হাজার হাজার লোক প্রতিদিন সুস্থ হয়ে ঘরে ফিরছে, এই নিউজটা লিড নিউজ হিশেবে দেখাচ্ছে না আমেরিকান মিডিয়াগুলো, বিশেষ করে সিএনএন, ওয়াশিংটন পোস্ট, নিউইয়র্ক টাইমস।
এখন পর্যন্ত করোনায় আ’ক্রান্ত হয়ে মৃ’ত্যুহার ২% এর কাছাকাছি। এই ২% এর পাশে আমি ইচ্ছে করলে ‘মাত্র’ শব্দ যোগ করতে পারতাম, কিন্তু করিনি। আমার কাছে একটা প্রাণের মূল্যও অনেক। কিন্তু ব্যাপার হলো, এই যে হাজার হাজার মানুষ করোনা থেকে সুস্থ হয়ে ঘরে ফিরছে, এটা কেনো মানুষকে জানানো হচ্ছেনা?
আরেকটা ইন্টারেস্টিং ডাটা শেয়ার করি। করোনা নিয়ে বিশ্বে সবচেয়ে বেশি হইচই করছে আমেরিকান মিডিয়া হাউজগুলোই। মুহূর্তে মুহুর্মুহু সংবাদ ছাপাচ্ছে তারা করোনা নিয়ে। এতে করে সারা পৃথিবীতে একটা প্যানিক ছড়িয়ে পড়েছে ভালোভাবে যে, করোনা ধরলে আর বুঝি রক্ষে নেই।
অথচ, করোনায় মৃ’তের সংখ্যার পাশাপাশি আমাদের যদি সুস্থ হয়ে উঠার ডাটাও মিডিয়া জানাত, তাহলে বোধকরি মানুষ এভাবে প্যানিকড হয়ে পড়তো না। মানুষ এখন ভাবছে, করোনা মানেই মৃ’ত্যু।কিন্তু, এই ফি বছর, খোদ আমেরিকাতেই নর্মাল ফ্লু’তে মারা গেছে বিশ হাজারের মতো মানুষ। একেবারে টাটকা খবর কিন্তু। নর্মাল ফ্লু মানে বুঝেছেন তো? এই যে জ্বর, সর্দি-কাশি ইত্যাদিতে। দেখুন, এই নর্মাল ফ্লুয়ের জন্য দুনিয়ায় হাজার রকমের প্রতিষেধক মজুদ আছে। আছে বাহারি রকমের চিকিৎসা।
এতোকিছু থাকা সত্ত্বেও, আমেরিকার মতোন দেশে এই ফ্লুতেই মা’রা গেছে বিশ হাজারেরও অধিক মানুষ। পুরো বিশ্বের হিশেব যে কি, তা তো বলার বাইরে।অথচ, যে করোনাকে নিয়ে এতো হইচই মিডিয়া করছে, সেই করোনায় এখন পর্যন্ত মা’রা গেছে ২ হাজারের মতো। এই করোনার কিন্তু কোনো প্রতিষেধক আবিষ্কার হয়নি। কোনো প্রতিষেধক না থেকেও এতে মা’রা গেছে ২ হাজার, আর হাজার রকমের প্রতিষেধক মজুদ থাকার পরেও নর্মাল ফ্লুতে আমেরিকায় নাই হয়ে গেছে বিশ হাজার।
তাহলে, কোনটাকে বেশি ডেঞ্জারাস মনে হচ্ছে ডাটানুসারে? কিন্তু দেখুন, আমেরিকার মিডিয়া এটা নিয়ে কোনো বাতচিত করছে না। তারা সারাদিন ওই এক করোনা নিয়েই আছে। এখানে কি তাহলে কোন ‘গেম’ চলছে? আমি জানি না।
‘করোনা আর মৃ’ত্যু’ শব্দ দুটো শুনতে শুনতে আপনি নিশ্চয় ভয়ে কুঁকড়ে আছেন, না? তাহলে আপনাকে কয়েকটা আশার কথা শুনাই। হয়তো আপনার ভয়টা চলে যাবে। স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারবেন।
-এখন পর্যন্ত করোনাতে কোনো শিশুর মৃ’ত্যু সংবাদ পাওয়া যায়নি। শিশু মানে, করোনায় আ’ক্রান্ত হয়ে ০-৯ বছরের কোনো শিশুর মৃ’ত্যুর ঘটনা দুনিয়ার কোথাও ঘটেনি। তাই, আপনার বাচ্চার ব্যাপারে বেশি ভ’য় পাওয়ার দরকার নেই। তবে, স’তর্ক থাকতে হবে অবশ্যই।
– ১০-১৯ বছরের একজনের মৃ’ত্যু সংবাদ পাওয়া গেছে এখন পর্যন্ত, তবে অনেকের মতে, সেটাও রহস্যজনক। আদৌ করোনায় কিনা, তা পুরোপুরিভাবে নিশ্চিত না।
– করোনা আ’ক্রান্ত ৭০,০০০ মানুষের ওপরে একটা স্ট্যাডি হয়েছে, যেখানে দেখা গেছে ৮১% মানুষের সর্দি-কাশি হচ্ছে করোনার ফলে, আবার সেরেও যাচ্ছে। সুতরাং, বিশ্বাস রাখুন, আপনার-আমার যদি করোনা হয়েও থাকে, সাধারণ জ্বর-সর্দির মতো তা আবার সেরেও যাবে, ইনশা আল্লাহ। আশা নিয়ে বাঁচুন, ভালো থাকবেন।
– ডাটা অনুসারে, করোনায় যারা মা’রা গিয়েছে, তাদের ৫০ ভাগের বয়স ৭০ বছরের ঊর্ধ্বে। আর ৩০% এর বয়স ৬০-৬৯ এর মধ্যে। মানে, ৮০% লোক যারা মা’রা গেলো বা যাচ্ছে, তাদের গড় বয়স ৬০-৭০ এর উর্ধ্বে। আরো স্পষ্টভাবে, এই করোনায় বুড়োরাই মা’রা যাচ্ছে সবচেয়ে বেশি।
না, ভ’য় পাওয়ার কারণ নেই। বুড়ো হলেই যে করোনায় ধপাস করে মা’রা পড়ছে, তা কিন্তু নয়। রিসার্চে দেখা গেছে, বুড়োদের মধ্যে করোনায় যারা মা’রা যাচ্ছে, তারা প্রায় সবাই আগে থেকেই কোনো না কোনো রোগে আ’ক্রান্ত, যেমন- ডায়াবেটিস, হার্টের রোগ, অ্যাজমা, লিভার ইত্যাদি।
সব ডাটাকে একত্র করলে যা সারমর্ম দাঁড়ায় তা হলো, সুস্থ এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষ’মতা যাদের বেশি, তাদের ক্ষেত্রে করোনায় মা’রা যাওয়ার সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ। তাই, আ’শাহত হবেন না। মনে জোর রাখুন।
গত দু’দিন ধরে আমার নিজেরও হালকা হালকা গা গরম। মাঝে মাঝে মনে হলো, আমাকে বুঝি করোনাই পেয়ে গেলো। তো, আমি যদি এই ফ্যাক্টরগুলো সম্পর্কে না জানতাম, আমি কি ভাবতাম জানেন? আমি ভাবতাম, আমার যদি সত্যিই সত্যিই করোনা ধরা পড়ে, তাহলে সেদিন আমি আর বাসায় ফিরবো না। আমার মাধ্যমে আমার মা, স্ত্রী, সন্তান আক্রান্ত হবে, আমি এটা ভাবতেই পারি না। তো, কি করবো তাহলে? কক্সবাজারের দিকে চলে যাবো, কিংবা কোনো নির্জন পাহাড়ি অঞ্চলে। বাসায় কোনোভাবে ব্যাংকের কার্ডটা পাঠিয়ে বলবো, ‘বেঁচে থাকলে দেখা হবে’।
তো, বাঁচলে তো ফিরবো। যদি না বাঁচি। সম্ভবত আমার লা’শটাও খুঁজে পাবে না আমার পরিবার। এই ভাবনাগুলো কোত্থেকে আসতো জানেন? প্যানিক থেকে। প্যানিক এতো ভয়ানক জিনিস। তাই, ভাইয়েরা, প্যা’নিক হবেন না। স্বাভাবিক জীবনযাপন করুন, কিন্তু অতি অবশ্যই স’তর্কতার সঙ্গে।এই যে বিশাল একটা লেখা পড়লেন, এই লেখার সারমর্ম কি? আমি কি করোনা নিয়ে হাসি তামাশা করছি? পাত্তা না দিতে বলছি?
না, মোটেও তা নয়। করোনাকে অবশ্যই পাত্তা দিতে হবে। স’তর্ক হতে হবে। বাইরে বেরুলে মাস্ক পড়তে হবে, বারেবারে হাত ধুতে হবে, লোকারণ্য এলাকা এড়িয়ে চলতে হবে। সবই করতে হবে, কিন্তু প্যানিক হওয়া যাবে না। প্যানিক হলে স্বাভাবিক জীবনযাপন বিপর্যস্ত হবে ভীষণভাবে। তখন করোনায় আপনার মৃ’ত্যুর সম্ভাবনা না থাকলেও, প্যানিক থেকে তৈরি ডিপ্রেশানে আপনার মৃ’ত্যুর সম্ভাবনা কিন্তু হুড়মুড় করে বেড়ে যাবে।চলুন, সকাল-সন্ধ্যার যিকিরগুলো নিয়মিত করি। বেশি বেশি ইস্তিগফার করি। ভয় না পেয়ে আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল করি।’’