নিজ জন্মভূমি মানিকগঞ্জে আসছেন লন্ডনের মেয়র !!
মানিকগঞ্জের সিংগাইরে তার নিজ জন্মভূমিতে আজ আসছেন লন্ডনের রামসগেট শহরের মেয়র রৌওশনারা। বুধবার সকালে হেলিকপ্টারযোগে বাড়ি পৌঁছানোর কথা রয়েছে তার। রৌওশনারা সিংগাইর উপজেলার তালেবপুর ইউনিয়নের ইরতা কাশিমপুর (কাঠাল বাগান) গ্রামের রজ্জব আলীর মেয়ে।রৌওশনারার নিকটজন জহিরুল ইসলাম মিটুল জানান, বুধবার সকাল ৮টা ১০মিনিটে বিমানবন্দরে নামবেন তিনি। এরপর সেখান থেকে হেলিকপ্টারযোগে গ্রামের বাড়িতে যাবেন। তার আগমন উপলক্ষে গ্রামের বাড়িতে আত্মীয়স্বজন স্থানীয় এলাকাবাসী উৎসুক হয়ে রয়েছেন। তাকে তিনদিন আলাদাভাবে সংবর্ধনা দেবেন বিভিন্ন সংগঠন। যে স্কুলে তিনি লেখাপড়া করেছিলেন, সেই স্কুল তালেবপুর আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় তাকে সংবর্ধনা দেবে প্রথম দিন।
দ্বিতীয় দিন বৃহস্পতিবার গ্রামবাসীর পক্ষ থেকে স্থানীয় ঈদগাঁ মাঠে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। মেয়র রওশন আরা বেগমকে তৃতীয় দিন সংবর্ধনা দেবে সুচিন্তিত নাগরিক ফোরাম নামে একটি সংগঠন। সুচিন্তিত নাগরিক ফোরামের সভাপতি জামাল উদ্দিন বিশ্বাস জানান, আমাদের গ্রামের মেয়ে রওশন আরা বেগম এখন লন্ডনের রামগেটস শহরের মেয়র। এতে আমরা খুবই গর্বিত। প্রায় প্রতি বছরই তিনি গ্রামে এলেও মেয়র হওয়ার পর প্রথমবার আসছেন। এজন্য তাকে বরণ করে নিতে আমরা নানা প্রস্তুতি নিয়েছি। এলাকার ছোট বড় সবাই এখন তার ফেরার অপেক্ষায়।স্থানীয় তালেবপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়ার পর ১৯৬৭ সালে ১৩ বছর বয়সে প্রকৌশলী বাবা রজ্জব আলীর সঙ্গে যুক্তরাজ্যে পাড়ি জমিয়েছিলেন রৌওশনারা। সেই থেকে সপরিবারে বসবাস করছেন সেখানে।
প্রবাসে জীবনযাপন করলেও প্রায় প্রতিবছরই ছুটে আসেন নিজের জন্ম স্থানে। যুক্তরাজ্যেও মেধার স্বাক্ষর রেখেছেন তিনি। সেখানে ব্যারিস্টার ডিগ্রি লাভ করেন। স্বামী রেজাউর রহমানের সঙ্গে যুক্ত হন হোটেল ব্যবসায়। এরপর আসেন রাজনীতির ময়দানে। রৌওশনারার স্বামীর বাড়ি পিরোজপুরের ভান্ডারিয়া উপজেলায়। তিন বোন ও দুই ভাইয়ের মধ্যে রৌওশনারা সবার বড়।গত বছরের মার্চ মাসে রৌওশনারার বাবা রজ্জব আলী খান মারা গেছেন। তিনি ছিলেন বুয়েটের প্রথম ব্যাচের ছাত্র। এলাকায় দানবীর হিসেবে তার খ্যাতি ছিল। তিনি নিজের জমিতে এলাকাবাসীর জন্য মসজিদ, ঈদগাহ, রাস্তা এবং বেশকিছু ঘরবাড়ি নির্মাণ করেন।
বাবার মতোই রৌওশনারাও এলাকায় দরিদ্র মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন। যুক্তরাজ্যের রামসগেট শহরের নামে নিজ গ্রামে রামস-বাংলা মহিলা উন্নয়ন সংস্থা নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন। প্রবাসে থেকেও প্রতিষ্ঠানটির মাধ্যমে তিনি প্রতিবছর বন্যার সময় ত্রাণ, শীতার্তদের মাঝে কম্বল ও ফ্রি-মেডিকেল ক্যাম্পের মাধ্যমে গ্রামের মানুষকে চিকিৎসা সেবা দেন। এছাড়া ব্যক্তিগত খরচে এলাকার অনেক মানুষের চোখের অপারেশন করিয়েছেন।উল্লেখ্য, রৌওশনারা রামসগেট শহরে ‘তন্দরি’ নামে একটি রেস্টুরেন্টের মালিক। ২০১৭ সালে যুক্তরাজ্যের লেবার পার্টির এমপি প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করেছিলেন তিনি। সামান্য ভোটে সেসময় পরাজিত হন। এর আগে লেবার পার্টি থেকে কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছিলেন। সর্বশেষ গত বছরের ১৪ মে নির্বাচনে বিপুল ভোটে যুক্তরাজ্যের রামসগেটের মেয়র নির্বাচিত হন রৌওশনারা।