নির্বাচনের সং’ঘর্ষে ছেলের মৃত্যুর, খবর শুনেই হার্ট অ্যাটাকে মায়ের মৃত্যু !!
করোনার বাধা পেরিয়ে নতুন নেতৃত্ব বেছে নিতে ভোট দিচ্ছেন বন্দরনগরীর বাসিন্দারা। আজ বুধবার (২৭ জানুয়ারি) সকাল আটটা থেকে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) মাধ্যমে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে। আর এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ও বিদ্রোহী কাউন্সিলর প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সং’ঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এসময় গুলিতে আলাউদ্দিন নামের এক যুবক নিহত হন। আর এ খবর শোনার পরপরই হৃদরোগে আ’ক্রান্ত হয়ে তার মা আছিয়া বেগম (৬০) মারা যান। আজ বুধবার (২৭ জানুয়ারি) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ভোট কেন্দ্রে ছেলের নিহতের সংবাদ শুনে হৃদরোগে আ’ক্রান্ত হয়ে মারা যান তিনি।
পাহাড়তলী আমবাগান আবহাওয়া অফিসের পাশে তার নিজ বাড়িতেই তার মৃত্যু ঘটে বলে জানান খুলশি থানার ওসি (তদন্ত) আফতাব আহমেদ। তিনি বলেন, সকাল সাড়ে ৯টার দিকে ঝাউতলার ইউসেফ আমবাগান স্কুল কেন্দ্রে আধিপত্য বিস্তারের জেরে আওয়ামী লীগের কাউন্সিলর প্রার্থী ওয়াসিম চৌধুরীর অনুসারী সোলাইমান নামে এক কর্মীর ছোঁড়া গুলিতে প্রাণ হারান আলাউদ্দিন। এই খবর শুনে হৃদরোগে আ’ক্রান্ত হয়ে মারা যান আছিয়া খাতুন।আলাউদ্দিন পাহাড়তলী ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী মাহমুদুর রহমানের অনুসারী। তার হ’ত্যার পর ঝাউতলা এলাকায় রেল লাইন অবরোধ করে রেখেছেন মাহমুদুরের সমর্থকরা। এসময় কেন্দ্রের বাইরে একটি মোটর সাইকেলে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়। পুলিশ এ ঘটনায় পাঁচজনকে আটক করেছে।
এর আগে, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নগরের পাহাড়তলীতে আপন ভাইয়ের ছুরিকাঘাতে আরেক ভাই নিহত হয়েছেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন পাহাড়তলী থানার ওসি (তদন্ত) রাশেদুল হক। নিহত ব্যক্তি ১২ নম্বর ওয়ার্ডের (সরাইপাড়া) আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী কাউন্সিলর প্রার্থী সাবের আহম্মদের কর্মী বলে জানা গেছে। তার নাম নিজামউদ্দীন। ঘাতক ব্যক্তির নাম সালাউদ্দিন কামরুল। তিনি ১২ নম্বর সরাইপাড়া ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগ সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী নুরুল আমিনের কর্মী।
এর আগে আজ চট্টগ্রামের আসাদগঞ্জে দুই বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থকদের সং’ঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। আজ সকাল সাড়ে ৮টার দিকে ৩৪ নং ওয়ার্ড আসাদগনজ ছোবাহানীয়া আলীয়া মাদ্রাসা কেন্দ্রে এ ঘটনা ঘটে। এতে ২জন আহত হয়েছে। এসময় গোলাগুলির ঘটনাও ঘটে।প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, সকালে ৩৪ নম্বর ওয়ার্ড আসাদগনজ ছোবাহানীয়া আলীয়া মাদ্রাসা কেন্দ্রে সং’ঘর্ষের ঘটনাটি ঘটে। এতে দুজন আহত হয়েছে। এ সময় ব্যাপক গোলাগুলির ঘটনাও ঘটে। তবে এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি বলে গণমাধ্যমকে কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ নেজাম উদ্দিন। তিনি বলেন, পরিস্থিতি সকাল থেকে ভালো। এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি। তারপরও দেখছি।
চট্টগ্রাম নগরীর ৪১ ওয়ার্ডে মেয়র ও সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে লড়ছেন ২২৬ জন কাউন্সিলর প্রার্থী। এর মধ্যে ৩৯ ওয়ার্ডে সাধারণ কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আছেন ১৬৯ জন। বাকি দুই ওয়ার্ডে ওই পদে নির্বাচন হচ্ছে না। সংরক্ষিত ১৪টি ওয়ার্ডে নারী কাউন্সিলর পদে নির্বাচন করছেন ৫৭ জন।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ৪১ ওয়ার্ডে ৭৩৫টি ভোট কেন্দ্রে তৈরি করা হয়েছে ৪ হাজার ৮৮৬টি বুথ। এসব কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন ৭৭৫ প্রিসাইডিং অফিসার, ৪ হাজার ৮৮৬ সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার ও ৯ হাজার ৭৭২ পোলিং অফিসার। চসিক নির্বাচনে মেয়র পদে মোট সাত জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তারা হলেন- নৌকা প্রতীকে আওয়ামী লীগের রেজাউল করিম চৌধুরী, ধানের শীষ প্রতীকে বিএনপির ডা. শাহাদাত হোসেন, আম প্রতীকে ন্যাশনাল পিপলস পার্টির আবুল মনজুর, মোমবাতি প্রতীকে বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের এম এ মতিন, স্বতন্ত্র প্রার্থী হাতি প্রতীকে খোকন চৌধুরী, চেয়ার প্রতীকে ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশের মুহাম্মদ ওয়াহেদ মুরাদ এবং হাতপাখা প্রতীকে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মো. জান্নাতুল ইসলাম।
এবার চসিক নির্বাচনে ভোটার ১৯ লাখ ১৭ হাজার ৯৭৮ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৯ লাখ ৯৮ হাজার ৭২৩ ও নারী ভোটার ৯ লাখ ৫২ হাজার ৩২৯ জন। নির্বাচনী বিধি অনুযায়ী, ভোটগ্রহণের দিন সকাল ৮টা থেকে রাত ১২টা এবং ভোটের দিন রাত ১২টা থেকে পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টা পর্যন্ত কোনো ব্যক্তি কোনো জনসভা আহ্বান, অনুষ্ঠান বা তাতে যোগদান এবং কোনো মিছিল বা শোভাযাত্রা করা যাবে না।এবারের সিটি করপোরেশন নির্বাচন ঘিরে উৎসব-উত্তাপ থাকা সত্ত্বেও প্রার্থীদের প্রচারণার কারণে নগরবাসীকে কোনো ধরনের ভোগান্তি পোহাতে হয়নি। সড়ক বন্ধ করে মিছিল-মিটিংয়ে যেমন জনদুর্ভোগ হয়নি তেমনি মাইকের প্রচারণায় কান ঝালাপালাও হয়নি।