পশ্চিমবঙ্গের তিন আসনের উপনির্বাচনে গোহারা হেরেছে বিজেপি !!
বেলা পৌনে বারোটা। তিন আসনের উপনির্বাচনের গণনা তখনও শেষ হয়নি। সবেমাত্র উত্তর দিনাজপুরের কালিয়াগঞ্জে তৃণমূলের জয়ের খবর এসেছে।
সেই সঙ্গে পশ্চিম মেদেনীপুরের খড়গপুর ও নদীয়া জেলার করিমপুর দুই আসনেই স্বসি্তজনক ব্যবধানে এগিয়ে রয়েছে পশ্চিমবঙ্গের শাসক দল।
জয়ের এমন জমজমাট মুহূর্তে প্রতিক্রিয়া জানাতেও আর দেরি করলেন না রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। বললেন, ঔদ্ধত্য আর অহঙ্কারের ফল বিজেপি। এই জয় মানুষের জয়।’ এরপরই সাবধানী মমতা বলেন, আমাদের আরও নম্র হতে হবে। মানুষের পাশে থাকতে হবে।’ শেষে মমতা বলেন, ১ ২ ৩, বিজেপিকে বিদায় দিন।’
সোজা কথায় সারা বছর লাফালাফি করে বৃহস্পতিবার পশ্চিমবঙ্গের তিন আসনের উপনির্বাচনে গোহারা হেরেছে দেশটির ক্ষমতাসীন বিজেপি দল। কয়েক মাস ধরে এই মোক্ষম সময়টারই অপেক্ষা করছিলেন ভারতের মোদিবিরোধীদের শিরোমণি মমতা ব্যানার্জি।
সকাল থেকেই বাড়িতে বসে টিভির পর্দায় চোখ রেখেছিলেন তিনি। সেই সঙ্গে টেলিফোনে প্রতিনিয়ত যোগাযোগ রাখছিলেন দুই মন্ত্রীর সঙ্গে। তিন আসনেই তৃণমূলের জয় যে অনিবার্য তা আন্দাজ করেই তার প্রতিক্রিয়া জানান দিদি।
তিনি বলেন, লোকসভা ভোটের পর থেকেই বিজেপির দম্ভ বেড়ে গিয়েছিল। এনআরসি করে দাও, একে নাগরিকত্ব দাও, ওকে দেশ থেকে বের করে দাও। যেন জমিদারি ওদের। নাগরিকত্ব দেয়ার ওরা কে!এমনিতেই তো সবাই এ দেশের নাগরিক।’ এরপরই মমতার সংযোজন, মানুষের ওপর বিশ্বাস, ভরসা রেখেছে তৃণমূল। বাংলার সমপ্রীতি, একতার জয়। মানুষে মানুষে ভেদাভেদ করেছে বিজেপি। তারই ফল পেল হাতেনাতে।’
করিমপুরে যে তৃণমূলের জয়ের সম্ভাবনা রয়েছে তা শাসক দলের নেতারা আগেই বলছিলেন। কারণ করিমপুর ২ নম্বর ব্লক সংখ্যালঘু অধু্যষিত। কিন্তু তৃণমূল স্বপ্নেও ভাবেনি যে কালিয়াগঞ্জ বিধানসভা আসনেও তারা জিততে পারেন।
ষোলো সালের বিধানসভা ভোটেও কালিয়াগঞ্জে কংগ্রেসের কাছে ৪৬ হাজার ভোটে হেরেছিল তৃণমূল। উনিশের লোকসভা ভোটে তৃণমূল সেখানে পিছিয়ে ছিল ৫৬ হাজারেরও বেশি ভোটে। সেই ব্যবধান কমিয়ে দিয়ে তৃণমূল যে কালিয়াগঞ্জে ২৩০৪ ভোটে জিতেছে তা আদতে বিপুল জয়।
একইভাবে বরাবরই খড়গপুর বিধানসভা আসন অধরা ছিল তৃণমূলের কাছে। ষোলোর ভোটে এবং উনিশের লোকসভা ভোটে খড়গপুরে জিতেছিল বিজেপি।
লোকসভায় সেখানে ৪৫ হাজারেরও বেশি ভোটের ব্যবধানে জিতেছিল গেরুয়া শিবির। কিন্তু সেই ব্যবধান মুছে দিয়ে যেভাবে খড়গপুরেও এগিয়ে গিয়েছে তৃণমূল তা ঐতিহাসিক বললে কোনো অতিশয়োক্তি হবে না।
মমতা এদিন বলেন, বিজেপি এর আগে কালিয়াগঞ্জের রাজবংশীদের ভুল বুঝিয়েছিল। কিন্তু এবার আর তারা বিজেপির ফঁাদে পা দেননি। তৃণমূলকে ভোট দিয়েছেন। খড়গপুরে আবার অবাঙালিরা আমাদের প্রচুর ভোট দিয়েছেন।
সব ধর্ম, জাতি ও ভাষাভাষী মানুষ যে তৃণমূলের পাশে রয়েছেন, আমাদের সমর্থন করছেন তা এই ভোট ফলাফলে পরিষ্কার। এই জয় তাই মানুষের জয়।সন্দেহ নেই, এই জয় মমতা ব্যানার্জিরই জয়। বিশেষ করে লোকসভা ভোটের পর যে সমালোচনা ও তির্যক মন্তব্য রাজনৈতিক মহল থেকে উড়ে আসছিল, তা কাটিয়ে এ যেন শীতের গোড়াতেই বসন্ত এনে দিয়েছে তৃণমূলে।