পারলে বরখাস্ত করেন, এনআরসি হতে দেব না: পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপালকে মমতা !!
এনআরসি এবং সিএএ বিরোধী আ’ন্দোলনে নেতৃত্ব দিতে গতকাল থেকে রাস্তায় নেমেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী। এদিকে পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড় স্বতঃপ্রবৃত্ত হয়ে এদিনও মমতা ব্যানার্জীর নেতৃত্বে এই বি’ক্ষো*ভের সমালোচনা করেছেন। তিনি টুইট করেছেন— ‘‘আমি অ’ত্যন্ত বিচলিত, যে দেশের আইনের বিরোধিতা করছেন মুখ্যমন্ত্রী এবং তাঁর মন্ত্রীরা। এটা অসাংবিধানিক। আমি মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আবেদন জানাচ্ছি, এই অসাংবিধানিক এবং প্র’রোচনাদায়ী আচরণ যেন তিনি বন্ধ করেন। পরিস্থিতির উন্নতির দিকে নজর দেন।”
রাজ্যপালের এই টুইটের প্রতিক্রিয়ায় রীতিমত ফুঁসে উঠেছেন মমতা ব্যানার্জী। বলেছেন, ‘‘‘যদি উনি মনে করেন আমি এবং আমা’র সরকার অসাংবিধানিক কাজ করছি, তা হলে উনি পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে বরখাস্তের সাহস দেখান! কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে এনআরসি চালু হতে দেব না!’
সন্ধ্যায় মুখ্যমন্ত্রীর দপ্তরের সরাসরি নির্দেশে ন্যাশনাল পপুলেশন রেজিস্ট্রেশন-এনপিআর বা জনগণনার কাজও অনির্দিষ্ট’কালের জন্য স্থগিত করা হয়েছে পশ্চিমবঙ্গে৷ যদিও এই কেন্দ্রীয় কর্মসূচিতে রাজ্যগুলো সহযোগিতা করতে আইনত বাধ্য৷ কিন্তু রাজ্য সরকারের আগাম অনুমতি ছাড়া এনপিআর-এর কোনও কাজ না করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে সংশ্লিষ্ট সব দপ্তরকে৷
কলকাতার রেড রোডে বাবাসাহেব আম্বেদকরের মূর্তির সামনে থেকে শুরু করে মেয়ো রোডে মহাত্মা গান্ধীর মূর্তি ছুঁয়ে জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়ি। ভারতীয় সংবিধানের প্রণেতা আম্বেদকর, অহিংস অসহযোগ আ’ন্দোলনের জনক গান্ধী এবং বাংলার সাম্প্রদায়িকতাবিরোধী, বঙ্গভঙ্গ বিরোধী চেতনার মুখ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর-প্রতিবাদে এই তিন মনীষীর হাত ধরে থেকে কেন্দ্রের বিজেপি সরকারকে বার্তা দিলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী। আবারও জানালেন, বিভাজনকামী জাতীয় নাগরিক পঞ্জিকরণ এবং নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন তিনি মানবেন না, ভারতীয় সংবিধানের প্রতিই দায়বদ্ধ থাকবেন।
বিতর্কিত নাগরিকত্ব আইন সংসদে পাশ হওয়ার পর সারা ভারতের পাশাপাশি পশ্চিমবঙ্গেও যে বি’ক্ষো*ভ শুরু হয়েছে, তা অনেক ক্ষেত্রেই হিং’সাত্মক নাশকতার চেহারা নিয়েছে। রেলস্টেশনে ভাঙচুর, রেল, বাস, গাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া, রেলপথ এবং জাতীয় সড়ক অবরোধ হচ্ছে লাগাতার। মমতা ব্যানার্জি এদিন সেই বি’ক্ষো*ভকারীদের উদ্দেশ্যেও বার্তা দিলেন-প্রতিবাদ হোক, তবে শান্তিপূর্ণভাবে। ভাঙচুর, অ’গ্নিসংযোগ এবং সাধারণ জনজীবন বিপর্যস্ত না করার মতো ঘটনা যাতে না ঘটে, সেজন্য এদিন আবারও আবেদন জানান মমতা। একইসঙ্গে তিনি জানান, যে হিন্দু-মু’সলিম বিভাজনের লক্ষ্যে বিজেপি সরকারের এই নাগরিকত্ব আইন সংশোধনী, পশ্চিমবঙ্গ সেই বিভেদের রাজনীতি প্রতিহত করবে।
আসামের ছাত্ররা প্রায় এক সপ্তাহ ধরে বি’ক্ষো*ভ দেখাচ্ছিল৷ রবিবার যন্তরমন্তরের প্রতিবাদে তাদের স্লোগান– আইন প্রত্যাহার না করলে স্বতন্ত্র রাষ্ট্রের দাবি উঠবে আসামের ভিতরে৷
সোমবারের এই মিছিলের পর, মঙ্গল এবং বুধবার, পরপর আরও দুদিন বি’ক্ষো*ভ মিছিলের নেতৃত্ব দেবেন মুখ্যমন্ত্রী। মঙ্গলবার তিনি দক্ষিণ কলকাতা শহরতলীর যাদবপুর অঞ্চলে মিছিল করবেন, যেখানে দক্ষিণ ২৪ পরগণা ও অন্যান্য জে’লা থেকে সমবেত হবেন তৃণমূল কর্মী-সম’র্থকেরা। আর বুধবার তিনি মিছিল করবেন হাওড়ায়। এদিন রেড রোড থেকে মিছিল শুরুর আগে এক বি’ক্ষো*ভ মঞ্চ থেকে মুখ্যমন্ত্রী সমবেত সবাইকে দিয়ে একটি শপথবাক্য পড়ান। যাতে বলা হল, পশ্চিমবঙ্গে এনআরসি অথবা সিএএ, কোনও কালা কানুনই চালু হতে দেওয়া হবে না। এই রাজ্যে একজন বাসিন্দাকেও উদ্বাস্তু হতে দেওয়া হবে না। সে তিনি হিন্দু হন, বা মু’সলিম। সূত্র: ডয়চে ভেলের।