দেশের খবর

প্রথমবারের মতো ওসির উদ্যোগে দৌলতদিয়ায় যৌ’নকর্মীর জানাজা অনুষ্ঠিত !!

পল্লী রাজবাড়ী গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া। যেখানে প্রায় দুই থেকে আড়াই হাজার বাসিন্দার বসবাস। কিন্তু যৌ’নকর্মী হওয়ায় মৃত্যুর পর ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী তাদের জানাজা বা দাফন ছাড়াই মরদেহ নদীতে ভাসিয়ে দেয়া হতো অথবা মাটিচাপা দেয়া হতো।

দীর্ঘদিনের প্রাচীন সেই প্রথা ভেঙে চলতি মাসের ২ ফেব্রুয়ারি (রোববার) রাতে দৌলতদিয়া পতিতাপল্লীর প্রবীণ যৌ’নকর্মী হামিদা বেগমের (৬৫) নামাজে জানাজা শেষে দাফন করা হয়। প্রথমবারের মতো এমন উদ্যোগ নেয়ায় স্থানীয়ভাবে বিষয়টি বেশ প্রশংসা পায়। এর পেছনে বিশাল অবদান রাখেন গোয়ালন্দঘাট থানার ওসি আশিকুর রহমান।

সম্প্রতি গোয়ালন্দ ঘাট থানায় যোগ দেন ওসি আশিকুর রহমান। যোগদানের সঙ্গে সঙ্গে এমন উদ্যোগ গ্রহণ প্রসঙ্গে জাগো নিউজকে তিনি বলেন, ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী সবারই ধর্মীয় বিধান অনুসরণ করা উচিত। আমরা যতই পাপী হই না কেন, বিচার করার মালিক একজন (আল্লাহ)। সে দৃষ্টিকোণ থেকে এবং মুসলমান হিসেবে নিজ দায়িত্ববোধের জায়গা থেকে ওই যৌ’নকর্মীর নামাজে জানাজার ব্যবস্থা করি। আগামীতে এ রেওয়াজ অব্যাহত থাকবে।

তিনি বলেন, আগে কোনো যৌ’নকর্মীর মৃত্যু হলে অমানবিকভাবে নদীতে ভাসিয়ে দেয়া হতো বা মাটিচাপা দেয়া হতো। এটা তো কোনো ধর্মে নেই। তবে কেন ওটা করা হতো? এছাড়া যৌ’নকর্মীদের মৃত্যু হলে কোনো মৌলভী জানাজা পড়াতে রাজি হতেন না। কিন্তু ধর্মে তো এটাও নেই যে, পাপী ব্যক্তিদের জানাজা পড়ানো যাবে না। এ বিষয়ে মৌলভীদের কাছে সুনির্দিষ্ট মাসালা জানতে চাইলে তিনি অনেকটা বাধ্য হয়েই জানাজা পড়াতে রাজি হন। ওই দিন রাতেই জানাজা নামাজ পড়ানো হয়। কাজটি সফলভাবে করতে পেরে নিজেকে অনেক ভাগ্যবান মনে করছি।

যৌ’নকর্মী শব্দটি ভদ্র ও সভ্য সমাজে একটি ঘৃণিত পেশা হিসেবে বিবেচিত হয়। কিন্তু এদের সৃষ্টি করেছেন সমাজের মুখোশধারী ও ভদ্রবেশীরা। তবে কেন তারা ধর্মীয় সম্মান পাবে না? তারা তো এ দেশেরই নাগরিক। দায়িত্ববোধের জায়গা থেকেই এমন উদ্যোগ নিয়েছি- জানান ওসি।

পৃথিবীর আদিমতম পেশা পতিতাবৃত্তি। অসম্মানজনক এ পেশা আজও পৃথিবীতে টিকে আছে। নানারকম ছলচাতুরি করে কিংবা ফাঁদে ফেলে পতিতাবৃত্তিতে নিয়ে আসা হয় অবলা নারীদের। তবে দৌলতদিয়া যৌ’নপল্লীতে সম্প্রতি বিভিন্ন অপরাধ ও জোরপূর্বক পতিতাবৃত্তিতে বাধ্য করার বিরুদ্ধে পুলিশ কড়া নজরদারি রাখছে। এরই ধারাবাহিকতায় সেখানে মাদক, জোরপূর্বক দেহব্যবসাসহ বিভিন্ন অপরাধ নিয়ন্ত্রণে পল্লীর বাসিন্দাদের সঙ্গে নিয়মিত বসেন গোয়ালন্দ ঘাট থানা পুলিশ।

এরই অংশ হিসেবে গত ২ ফেব্রুয়ারি বিকেলে যৌ’নকর্মীদের ‘অবহেলিত নারী ঐক্য’ নামের সংগঠনের সঙ্গে মতবিনিময়কালে হামিদা বেগম নামের এক প্রবীণ যৌ’নকর্মীর মৃত্যুর খবর আসে। সে সময় পল্লীর বাসিন্দারা হামিদা বেগমের জানাজাসহ দাফনের দাবি তোলেন। এ সময় গোয়ালন্দ ঘাট থানার ওসি আশিকুর রহমান তাদের দাবির প্রতি সম্মান জানিয়ে ওই নারীর জানাজা, দাফন-কাফনের ব্যবস্থা করেন। পরে রাত ৯টার দিকে ওই নারীর জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় থানার ওসি ছাড়াও দৌলতদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুর রহমান মণ্ডল, স্থানীয় ইউপি সদস্য আব্দুল জলিল ফকীরসহ অনেকে জানাজায় অংশ নেন। জানাজা নামাজে ইমামতি করেন দৌলতদিয়া রেল মসজিদের ইমাম মৌলভী গোলাম মোস্তফা।

দেশের বৃহত্তম এ যৌ’নপল্লীতে প্রায় এক হাজার ২০০ যৌ’নকর্মীসহ অন্তত দুই থেকে আড়াই হাজার বাসিন্দার বসবাস। এখানকার বাসিন্দাদের মধ্যে কারও মৃত্যু হলে প্রথমদিকে নদীতে মরদেহ ভাসিয়ে দেয়া হতো। কয়েক বছর আগে পল্লীর পাশে একটি কবরস্থান করা হয়। সেখানে মৃত ব্যক্তির জানাজা ও দাফন ছাড়াই দেয়া হতো মাটিচাপা। চলতি মাসের ২ ফেব্রুয়ারি রাতে দৌলতদিয়া পল্লীর ওই নারীর নামাজে জানাজা সম্পন্নের মাধ্যমে দেশে প্রথমবারের মতো কোনো যৌ’নকর্মীর দাফন কার্যক্রম সম্পন্ন হয়। এ বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন সম্প্রতি গোয়ালন্দ ঘাট থানায় যোগ দেয়া ওসি আশিকুর রহমান।

 

স্থানীয় ইউপি সদস্য আব্দুল জলিল ফকীর জানান, অতীতে দৌলতদিয়া যৌ’নপল্লীর বাসিন্দা কেউ মারা গেলে জানাজা হতো না। আসল কথা হলো, কোনো মৌলভী জানাজা নামাজ পড়াতে রাজিই হতেন না। তাই বাধ্য হয়ে মৃত ব্যক্তিকে মাটিচাপা দেয়া হতো।‘গোয়ালন্দ ঘাট থানার ওসি সাহেব উদ্যোগ নেয়ায় প্রথমবারের মতো কোনো যৌ’নকর্মীর জানাজা এবং ধর্মীয় বিধান অনুযায়ী দাফন করা হলো।’

J A Suhag

Local News: J A Suhag writes Local News articles for industries that want to see their Google search rankings surge. His articles have appeared in a number of sites. His articles focus on enlightening with informative Services sector needs. he holds the degree of Masters in Business and Marketing. Before he started writing, he experimented with various professions: computer programming, assistant marker, Digital marketing, and others. But his favorite job is writing that he is now doing full-time. Address: 44/8 - North Dhanmondi, Dhaka Email: [email protected]

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button