প্রবাসী রুবিনার গোয়েন্দাগিরীর গল্প শুনে পুরাই হ্যাং হয়ে গিয়েছিলেন ম্যাজিস্ট্রেট !!
‘চোরের দশ দিন, গৃহস্থের এক দিন’! হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এমনই এক ঘটনায় প্রবাসী নারী রুবিনার জালে ধরা পড়ে তাজুল নামের একজন প্রতারক। অতঃপর ভ্রাম্যমাণ আদালতের রায়ে দুই বছরের জন্য তার জায়গা হলো কেরানীগঞ্জের কেন্দ্রীয় কারাগারে।
প্রতারক পাকড়াওয়ের ঘটনাটি ঘটেছিল বছর-তিনেক আগে।অসুস্থ বাচ্চাকে চিকিৎসা করাতে ২০১৭ সালের ১৬ মার্চ বৃহস্পতিবার দেশে আসেন সৌদি প্রবাসী রুবিনা। কিন্তু বিমানবন্দরে নেমেই খপ্পরে পড়েন প্রতারকের। পরে ‘ভাই’ পাতানো তাজুল নামের প্রতারক রুবিনাকে অচেতন করে লুটে নেয় সব। তবে প্রাণে বেঁচে যাওয়া রুবিনা হাল ছেড়ে না দিয়ে কয়েক দিন বিমানবন্দরে সতর্ক নজরদারি করেন। অবশেষে আজ মঙ্গলবার পাকড়াও করেন শিকার। লুট হওয়া অর্থ উদ্ধার আর তাজুলকে কারাগারে পাঠানোর ব্যবস্থা করে বাড়ি ফেরেন রুবিনা।
সেই সময়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ‘Magistrates All Airports Bangladesh’-এর নিজস্ব পেইজে প্রতারণার এমন ঘটনার বিস্তারিত তুলে ধরা হয়েছিলো। এতে রুবিনার হাতে আটক তাজুলের একটি ছবিও যুক্ত ছিল।
ঘটনাটি সবার জন্য নিচে দেয়া হলো-
সৌদি প্রবাসী রুবিনা। দেশে রেখে যাওয়া অসুস্থ বাচ্চার অপারেশন করাতে বৃহস্পতিবার সকাল ঢাকায় পৌঁছান। এয়ারপোর্ট থেকে বের হয়ে পার্কিং এরিয়ায় ঢুকতেই…‘বইন কই যাবা?’- জয়পুরহাট- ‘আরে কও কি বইন! আমার বাড়ি দিনাজপুরের হিলি! আমিও ঐ দিক যামু।
একমাত্র বইনকে এট্টু আগে দুবাইতে পাঠাইয়া দিলাম। পরানডা ছিঁড়া যাইতাছে বইন (কাছাকাছি এলাকার অপরিচিত তাজুলকে পেয়ে রুবিনা মনে জোর পেলেন। একসাথে বাসে উঠে গাবতলীর উদ্দেশে রওয়ানা হলেন। পথিমধ্যে ভাই-বোন অনেক সুখ-দুঃখের গল্পও করলেন। স্বামীর সাথে ডিভোর্স, একমাত্র বাচ্চার মায়া ছেড়ে বাচ্চার ভবিষ্যৎ গড়তেই বিদেশ গমন, আরও কত কী!)
ফার্মগেটে বাস পরিবর্তন। রুবিনার ক্ষুধা পেয়েছে। ভাই তাজুল চট করে পাউরুটি আর পানি কিনে নিয়ে আসলেন। রুবিনা টাকা দিতে চাইলে তাজুল দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললেন, “তুমি সত্যই আমার বোন হলে আজ এমন করে টাকা দিতে চাইতে না। আসলে পর কখনো আপন হয় না।বাস গাবতলীর পথে। রুবিনা পাউরুটি খেয়ে বোতলের মুখে পানি খেতে গিয়ে একটু পানি মুখ বেয়ে পড়ছিল। ভাই তাজুল নিজের রুমাল বের করে সযত্নে পানি মুছে দিলেন।
রুবিনা বুঝতে পারছেন, রুমালের ছোঁয়ায় তার সেন্স কমে আসছে, চোখ বন্ধ হয়ে আসছে। ভাই সাহেব রুবিনার ভ্যানিটি ব্যাগ খুলে সবগুলো টাকা পকেটে ঢুকাচ্ছেন। রুবিনা চেয়ে চেয়ে দেখছেন, কিন্তু কিছুই বলতে পারছেন না। রুমালের জাদুতে হ্যাং হয়ে স্ট্যাচু বনে গেছেন।
তাজুল টাকা, মোবাইলসহ দামী জিনিসপত্র নিয়ে ভাইয়ের আদরে রুবিনার মাথায় হাত বুলিয়ে নেমে পড়লেন। মিনিট পাঁচেক পর রুবিনার হাতমুখ সচল হলেও কান্না ছাড়া কোনো গতি নেই।বাচ্চার হার্নিয়ার অপারেশন করতে আনা সবগুলো টাকা উধাও। বাস ভাড়া দেয়ার টাকাও নেই। পাশের এক ভদ্রলোক ১০০ টাকা দিয়ে সাহায্য করলেন।
রুবিনা ঘুরে দাঁড়ালেন। বাস থেকে নেমে ভ্যানিটি ব্যাগ ঘেঁটে ঢাকায় শম্পার বাসার ঠিকানা লেখা কাগজটা বের করলেন। শম্পা তার সাথে সৌদিতে কাজ করে। সাত আট দিন আগে দেশে এসেছে।শম্পার বাসা থেকে রুবিনা পরপর তিন দিন এয়ারপোর্ট এলাকায় চিরুনি অভিযানে আসেন। আজ চতুর্থ দিন তিনি সফল, ভাই তাজুল তার চোখ এড়াতে পারেননি।
ঠিক একই জায়গায় আজ তাজুল আরেক বিদেশফেরত পুরুষ যাত্রিকে বলছিলেন, ‘একটু আগে ছোট ভাইটারে বিদেশ পাঠাইলাম (পরানডা…‘পরানডা ছিঁড়ার’ আগেই বাঘিনীর মতো ক্ষীপ্র বেগে রুবিনা তার কলার ধরে উত্তম-মধ্যম দেয়া শুরু করেন এবং পরে এপিবিএনে সোপর্দ করেন।
রুবিনা টাকা উদ্ধার করে জয়পুরহাট চলে গেছেন। তাজুল দুই বছরের জন্য কেরানীগঞ্জে বেড়াতে গেছেন।রুবিনার জবানবন্দিতে শোনা গল্পটা হুবহু শেয়ার করলাম। আপনারা ভাবছেন, আমি নিশ্চয় রুবিনাকে স্যালুট দিয়া গল্প শেষ করব। না ভাই, ঘোরের মধ্যে আছি। পুরো ঘটনা শুনে মনে হলো, এবার আমার নাকেই কেউ ক্লোরোফর্মযুক্ত রুমাল ধরছে, পুরাই হ্যাং হয়ে গেছি!
সূত্র-ঢাকাটাইমস