দেশের খবর

ফরিদপুরে ঘটনাঃ বাবার নির্যাতন থেকে বাঁচতে ভাই-বোনের সংবাদ সম্মেলন !!

বাবার নির্যাতনের হাত থেকে রক্ষা পেতে ফরিদপুরে সংবাদ সম্মেলন করেছেন তিন ভাই-বোন। অভিযোগে এ নির্যাতনে সহযোগিতা করছে মাগুরার গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। শুক্রবার (২২ নভেম্বর) দুপুরে ফরিদপুর প্রেসক্লাবে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। খাদ্য অধিদপ্তরের সাবেক পরিচালক শিকদার আবুল কালাম আজাদের বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন করেছেন তার দুই ছেলে বরকত আল আজাদ ও রহমত আল আজাদ এবং মেয়ে তাসনিম ফারজানা। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন তাসনিম ফারজানা।

উপস্থিত ছিলেন তার দুই ভাই বরকত আল আজাদ ও রহমত আল আজাদ। বক্তব্যে তাসনিম ফারজানা বলেন, তাদের বাবা সিকদার আবুল কালাম আজাদ ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলার টগরবন্দ ইউনিয়নের পানাইল গ্রামের বাসিন্দা। তিনি খাদ্য অধিদপ্তরের অবসরপ্রাপ্ত সাবেক পরিচালক। ২০১৫ সালের ৪ আগস্ট তাদের মা মাহমুদা বেগম মারা যান। মৃত্যুকালীন সময়ে তার মা নানা বাড়ি ঝিনাইদহ জেলার কোর্ট চাঁদপুরে অনেক সহায় সম্পত্তি রেখে গেছেন। বর্তমানে ওই সম্পত্তির মালিক তারা তিন ভাই-বোন। অভিযোগ করে বলা হয়, তাদের নামে মায়ের সম্পত্তি, এখন নিজের নামে লিখিয়ে নেওয়ার জন্য বাবা নানাভাবে তাদের উপর নির্যাতন চালিয়ে আসছিলেন। এ চক্রান্তের ধারবাহিকতায় গত ১৬ অক্টোবর তাদের বাবা জরুরি আলোচনার কথা বলে দুই ভাইকে কোর্ট চাঁদপুরে ডেকে আনেন। পরে মাগুরার গোয়েন্দা পুলিশের সহায়তায় দুই ভাইকে হাজিপুর পুলিশ ফাঁড়িতে আটকে রাখা হয়। পরে গত ১৮ অক্টোবর তারা মাদকাসক্ত না হওয়া সত্ত্বেও মাগুরা ডিবি পুলিশের সহায়তায় ফরিদপুর শহরের আলীপুরে রওশন খাঁ সড়কে অবস্থিত লাইফ কেয়ার মাসকাসক্ত নিরাময় কেন্দ্রে রেখে যান।

তিনি বলেন, তার বাবা ও মাগুরার পুলিশ সুপার ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলার একই ইউনিয়নের বাসিন্দা। পুলিশ দুই ভাইকে গ্রেফতার করার সময় বলেছিল তারা হত্যা মামলার আসামি। মামলা রয়েছে আলফাডাঙ্গা থানায়। পরে মাগুরার পুলিশ সুপার তাকে বলেন, মাগুরার শ্রীপুর থানায় তাদের নামে মামলা রয়েছে মাদকের। তিনি বলেন, শ্রীপুর থানায় গিয়ে যোগাযোগ করলে ওসি জানায় ওই দুই ভাইয়ের নামে কোনো মামলা নেই। তাসনিম ফারজানা বলেন, তিনি তার দুই ভাইয়ের সন্ধান না পেয়ে ২৬ অক্টোবর ধানমন্ডি থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। পরে তিনি এ ব্যাপারে হাইকোর্টে একটি রিট করেন।

গত ১৪ নভেম্বর হাইকোর্ট একটি রুলনিশি জারি করেন। তিনি বলেন, হাইকোর্টের রুলনিশির কথা শুনে তার বাবা দুই ছেলেকে তার জিম্মায় নেওয়ার জন্য মাগুরা গোয়েন্দা পুলিশের সহায়তায় গত ২০ নভেম্বর সন্ধ্যায় লাইফ কেয়ার মাসকাসক্ত নিরাময় কেন্দ্রে আসেন। কিন্তু তার দুই ভাই যেতে অস্বীকার করলে ডিবি পুলিশের সহায়তায় বাবা তার দুই ভাইকে জোর করে তুলে নেওয়ার চেষ্টা করেন। তখন নিরাময় কেন্দ্র হতে ৯৯৯ নম্বরে ফোন করে সাহায্য চাইলে ফরিদপুর কোতয়ালী থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে হাজির হলে তার বাবাসহ মাগুরার ডিবি পুলিশ সদস্যরা চলে যায়।

লাইফ কেয়ার মাসকাশক্ত নিরাময় কেন্দ্রের পরিচালক হাফিজুর রহমান গত ২০ নভেম্বর সন্ধ্যায় তার নিরাময় কেন্দ্রে সংগঠিত ঘটনার বর্ণনা দিয়ে ওই সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ডিবি পুলিশ এসে প্রথমে তাদের নিরাময় কেন্দ্রের সকল সিসি ক্যামেরা বন্ধ করে দেন। পরে দুই ভাইয়ের মোবাইল ফোন ও মানিব্যাগ ছিনিয়ে নেয়। পরে তারা জোর করে দুই ভাইকে কেন্দ্র থেকে বের করে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। এ সময় ধস্তাধস্তি ও ভাঙচুরের কারণে দুই ভাই আহত হন। এ পর্যায়ে তিনি ৯৯৯ নম্বরে ফোন করেন।

পরে দুই ভাইকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়। ফরিদপুর কোতয়ালী থানার এসআই বেলাল হোসেন বলেন, ৯৯৯ থেকে ফোন পেয়ে কোতয়ালী থানার পুলিশ ওই নিরাময় কেন্দ্রে গিয়ে মাগুরার ডিবি পুলিশকে দেখতে পান। তারা জানায় তারা সার্চ ওয়ারেন্টের ভিত্তিতে ওই দুই ভাইকে নিতে এসেছেন এবং এ বিষয়টি দুই জেলার পুলিশ সুপার অবগত। এসআই বেলাল বলেন, আমি যখন জানতে পারলাম যে, এ ব্যাপারে হাইকোর্টের রুলনিশি রয়েছে। তখন আমি মাগুরার ডিবি পুলিশদের বলি এ অবস্থায় দুই ভাইকে এই কেন্দ্র থেকে নেওয়া যাবে না। হাইকোর্টে দায়ের করা মামলার বাদী বোন তাসনিম ফারজানা। এ মামলায় বিবাদী করা হয়েছে বাবাসহ সাত জনকে।

এরা হলেন- স্বরাষ্ট্র সচিব, ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক, আইজিপি, ফরিদপুরের পুলিশ সুপার, নিরাময় কেন্দ্রের পরিচালক, বাবা সিকদার আবুল কালাম আজাদ ও ফরিদপুর কোতয়ালী থানার ওসি। গত ১৪ নভেম্বর বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি মো. মাহমুদ হাসান এ ব্যাপারে একটি রুলনিশি জারি করেন। বাদী পক্ষের কৌশলী সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী আদনান রফিক হাইকোর্টের দেওয়া রুলনিশি সম্পর্কে বলেন, হাইকোর্ট ওই দুই ভাইয়ের মাদক নিরাময় কেন্দ্রে আটক কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না মর্মে কারণ জানতে চেয়ে উল্লেখিত সাতজনের প্রতি রুল জারি করেন। পাশাপাশি দুই ভাই সুস্থ হয়ে থাকলে তাদের মুক্তির নির্দেশ দেওয়া হয়। মাগুরার পুলিশ সুপার খান মোহাম্মদ রেজোয়ান বলেন, ওই দুই ভাই মাদকসেবী। তাদের নামে শ্রীপুর থানায় একটি মামলা হয়। এজন্য তাদের গ্রেফতার করা হয়। পরে ওদের বাবার অনুরোধে তাদের মাদক নিরাময় কেন্দ্রে পাঠানোর জন্য মাগুরার ডিবি পুলিশ তাদের ফরিদপুর নিয়ে যায়।

গত ২০ নভেম্বর ওই নিরাময় কেন্দ্রে বাবার নেতৃত্বে মাগুরার ডিবি পুলিশের হামলার বিষয়ে তিনি কিছু জানেন না বলে মন্তব্য করেন। পরে তিনি বলেন, দুই ছেলের বাবা সাহায্য চাইলে ডিবি পুলিশ সাহায্য করতে যেতে পারেন। পুলিশ সুপারের অনুমতি ছাড়া এক জেলা থেকে অন্য জেলায় ডিবি পুলিশ যেতে পারে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আপনি সঠিক কথা বলেছেন, তবে কথা হলো আমি তো ওইদিন একটি অনুষ্ঠানের জন্য খুলনায় গিয়েছিলাম। তাই এ বিষয়ে ওই দুই ভাইয়ের বাবা-ই ভালো বলতে পারবেন। এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানতে তিন ভাই-বোনের বাবা সিকদার আবুল কালাম আজাদের মোবাইল ফোনে শুক্রবার বিকাল ৪টা থেকে সাড়ে ৪টা পর্যন্ত একাধিকবার কল দিলেও তিনি ফোনকলগুলো রিসিভ করেননি। ক্ষুদে বার্তা দিয়েও তার সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি।

J A Suhag

Local News: J A Suhag writes Local News articles for industries that want to see their Google search rankings surge. His articles have appeared in a number of sites. His articles focus on enlightening with informative Services sector needs. he holds the degree of Masters in Business and Marketing. Before he started writing, he experimented with various professions: computer programming, assistant marker, Digital marketing, and others. But his favorite job is writing that he is now doing full-time. Address: 44/8 - North Dhanmondi, Dhaka Email: [email protected]

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button