বাবাকে নিয়ে ইশরাকের আবেগঘন যে স্ট্যাটাস ভাইরাল !!
অবিভক্ত ঢাকা সিটির প্রয়াত মেয়র ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সাদেক হোসেন খোকাকে নিয়ে ফেসবুকে একটি আবেগঘন স্ট্যাটাস দিয়েছেন তার ছেলে প্রকৌশলী ইশরাক হোসেন। বৃহস্পতিবার (২০ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে নিজের ভেরিফায়েড পেজে দেয়া ওই স্ট্যাটাসটি পাঠকদের জন্য হুবহু তুলে ধরা হলো-
‘ঢাকা শহরের ৪০০ বছরের ইতিহাসে দীর্ঘতম সময়ের অবিভক্ত ঢাকার মেয়র কিংবদন্তি গেরিলা মুক্তিযোদ্ধা সাদেক হোসেন খোকা। ২০০২ সালের মে মাসে মেয়র হিসেবে শপথ নেয়ার পর ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের দেনা ছিল ৬৩১ কোটি টাকা। নভেম্বর ২০১১ সালে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করার সময় সকল উন্নয়ন কর্মকাণ্ড ও অন্যান্য ব্যয় মিটিয়ে তহবিলের মজুদ ছিল ৩ কোটি ৪৭ লাখ টাকা।
বাবা খোকা ছিলেন একজন স্বপ্নদ্রষ্টা মেয়র। বাংলাদেশে প্রথম অবকাঠামো খাতে সরকারি ও বেসরকারি যৌথ উদ্যোগে দেশের দীর্ঘতম ফ্লাইওভার ৮ কিলোমিটার দূরত্বের ঢাকা-যাত্রাবাড়ী ফ্লাইওভারের নির্মাণকাজ পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন করেন।
ঢাকা সিটি কর্পোরেশন (ডিসিসি) ও দুবাইভিত্তিক বেলহাসা-একম অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটস যৌথভাবে এই ফ্লাইওভার নির্মাণ করবে। সেই সময় ৬৭০ কোটি টাকার এই ফ্লাইওভার সাড়ে তিন বছরে নির্মাণ কাজ শেষ করার পরিকল্পনা ছিল।ঢাকার দুই কান্ডারি মেয়র সাদেক হোসেন খোকা ও গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী মির্জা আব্বাসকে সঙ্গে নিয়ে ৩ জুলাই ২০০৬ সালে প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া।
[প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘২০০৪ সালে আমাদের সময় বাংলাদেশ ফ্লাইওভারের যুগে প্রবেশ করল। সরকারি উদ্যোগে আমরা ইতিমধ্যেই খিলগাঁও ও মহাখালী ফ্লাইওভারের কাজ সম্পন্ন করেছি। তিনি আরও বলেন, ‘সরকার এলিভেটেড এক্সপ্রেস হাইওয়ে এবং পাতাল রেল নির্মাণ করে শহরের যান চলাচল ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন ঘটানোর পরিকল্পনা করছে।’]
এক-এগারোর অবৈধ মঈনউদ্দিন-ফখরুদ্দিন সরকার আসার পর এর নির্মাণকাজ বন্ধ রাখে। পরবর্তীতে আওয়ামী লীগ সরকার এসে ভারতভিত্তিক এক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগ করে অহেতুক এর নকশা ব্যাপক পরিবর্তন করে এবং নির্মাণ খরচ বাড়ায়।
মেয়র খোকা একক ঢাকার নগরপিতা ছিলেন এবং এর প্রতিটি আনাচে-কানাচে অগণিত কবরস্থান, মসজিদ, এতিমখানা, স্কুল, খেলার মাঠ, ফুটপাত, রাস্তা প্রশস্ত করন। বহু এলাকায় ব্যায়ামাগারসহ কমিউনিটি সেন্টার স্থাপন করেন। আলোকিত করেন অন্ধকারাচ্ছন্ন সকল রাস্তা ঘাট। মেয়র খোকার উদ্যোগে নোংরা আবর্জনা শহরকে পরিষ্কার করার লক্ষ্যে স্বল্প খরচে সুইডেনভিত্তিক অত্যাধুনিক ভলভো ব্র্যান্ডের আবর্জনা অপসারণ ট্রাকের বহর নিয়ে আসা হয়।
ঢাকা বিউটিফিকেশন প্রজেক্ট হাতে নেন। সেই প্রজেক্টের আওতায় বিভিন্ন বেসরকারি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোকে একেকটি রাস্তা নিজ খরচে রক্ষণাবেক্ষণের জন্য দিয়ে দেয়া হয়। বিনিময়ে তাদের সেখানে সীমিত সংখ্যায় বিজ্ঞাপনযুক্ত বিলবোর্ড লাগানোর অনুমতি দেয়া হয়। পুরো ব্যাপারটিতে কর্পোরেশনের কোনো খরচ ছিল না। আমাদের মনে আছে জিয়া আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ঢাকার রাস্তাটি সৌন্দর্যবর্ধন তখন সকলের নজর কেড়েছিল।
রাস্তার মালিক সিটি কর্পোরেশন হলেও যানবাহনের রোড ট্যাক্স বিআরটিএ পুরোটা নিয়ে যেত। অনেক দর কষাকষির পর সেটার একটি বড় অংশ সিটি কর্পোরেশনের তহবিলে জমা করার নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়। গুলশান দুই নাম্বারের পার্ক ওয়ান্ডারল্যান্ড নামের একটি প্রতিষ্ঠান বহুবছর নিয়মবহির্ভূতভাবে দখল করে থিম পার্ক পরিচালনা করে আসছিল। মেয়র খোকা সেটি দখলমুক্ত করে স্থানীয়দের হাঁটাচলার পার্ক তৈরি করে দেন।
গুলশান ১ নম্বরে পুলিশ প্লাজার উল্টো পাশে সুইপার কলোনি স্থানান্তরিত করে তাদের জন্য আধুনিক আবাসন তৈরি করা হয়। খালি হওয়া জায়গায় নন্দিত হাঁটাচলার পার্ক তৈরি করেন। এর বাইরেও নগরের বিভিন্ন স্থান যেমন মোহাম্মদপুর লালমাটিয়া পুরানঢাকা এরকম আরও বহু এলাকা থেকে বেদখল হয়ে যাওয়া মাঠ দখল মুক্ত করেন মেয়র হওয়ার পর।
উল্লেখ্য মেয়র হওয়ার আগেই আওয়ামী শাসনামলে সরকারি সন্ত্রাসীদের পৃষ্ঠপোষকতায় ঐতিহ্যবাহী ঢাকেশ্বরী মন্দির ও ইসকন মন্দিরের জায়গা বেদখল হয়ে যাওয়ার হাত থেকে তিনি রক্ষা করেন। পুরান ঢাকায় অনেক বড় ছোট মন্দিরের জন্য জায়গা করে দেন এবং অর্থ বরাদ্দ করেন।
পুরান ঢাকার জুরাইনে এক কুখ্যাত সন্ত্রাসীর হাত থেকে কবরস্থানের জায়গা দখলমুক্ত করে সেখানে বাউন্ডারি ওয়াল দিয়ে কবরস্থানের জন্য স্থায়ীভাবে সংরক্ষণ করেন।
ঢাকা সিটি কর্পোরেশন তৎকালীন এবং সম্ভবত এখনও বাংলাদেশের সবচেয়ে উঁচু বিল্ডিং ‘সিটি সেন্টার’ তৈরি করেছিল একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়ে। এরকম আরও একাধিক ভবন নির্মাণ করে সিটি কর্পোরেশনের অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হয়।
ইউনাইটেড হসপিটালের নির্মাণকাজ সম্পন্ন করার জন্য লেকপাড়ে সিটি কর্পোরেশনের বিশেষ জায়গা বরাদ্দ দিয়েছিল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে। ডেঙ্গু প্রতিরোধে অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ, ইলিয়াস কাঞ্চনসহ আরও সমাজে পরিচিত গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সিটি কর্পোরেশনের ভেতর স্থায়ী অফিস করে দিয়েছিলেন। অফিসটির কাজ ছিল বছরব্যাপী ডেঙ্গুবিরোধী প্রচার কার্যক্রম চালানো।
বাংলাদেশের সবচেয়ে প্রভাবশালী চক্রের অবৈধ বিলবোর্ড অপসারণ করেছিলেন বিনা আপোষে। মেয়রের দায়িত্ব নেয়ার পর সিটি কর্পোরেশনের ভেতর আগের বিদ্যমান ফাইভ স্টার ও সেভেন স্টার সন্ত্রাসী গ্রুপ সশস্ত্র মহড়া দিয়ে টেন্ডারবাজি করতে চাইলেও তাদের কঠোর হস্তে দমন করেছিল তার পুরো মেয়াদকালে। এই সন্ত্রাসীরা সদ্যবিদায়ী কর্তৃপক্ষের ইন্ধনে গোলাগুলির চেষ্টাও করেছিল সিটি কর্পোরেশনে। কিন্তু একজন জীবিত গেরিলা মুক্তিযোদ্ধাকে চুল পরিমাণ বিচলিত করার কোনো অপশক্তি ঢাকা শহরে ছিল না।
রাস্তার ওপর চাপ কমাতে বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে সিটি কর্পোরেশনের জায়গায় মাল্টি স্টোরি কারপার্ক নির্মাণের চুক্তি করেছিলেন। তার মধ্যে অনেকগুলোই সম্পন্ন হয়। হাতিরঝিল বিশেষ প্রকল্প তার নিজ হাতে গড়া পরিকল্পনা ছিল। যা পরবর্তীতে ১/১১ সামরিক সরকার শুধু বাস্তবায়ন করে।
বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় ঢাকার সব সেবাদানকারী ও নিয়ন্ত্রক সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় করে ডিটেইল্ড এরিয়া প্ল্যান ‘DAP’ প্রণয়ন করেছিলন। মেয়র পদাধিকার বলে প্রণয়নকারী বোর্ডের চেয়ারম্যান ছিলেন মেয়র খোকা। ১৭ সেপ্টেম্বর ২০০৮ সালে ড্যাপের চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিলের সময় নগর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের উপস্থিতিতে নগরভবনে মেয়র খোকা বলেন, ২০ বছরের পরিবর্তে ১০০ বছরের মহাপরিকল্পনার করার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ‘সারা দেশ থেকে ঢাকামুখী জনসংখ্যার চাপ কমাতে পারব না আমরা। তাই ঢাকাকে বিস্তৃত করে ১০০ বছরের পরিকল্পনা এখনই হাতে নিতে হবে এবং প্রয়োজনে বিদেশ থেকে নগর পরিকল্পনাবিদ এনে এটি সম্পন্ন করা উচিত হবে।’ রেফারেন্স- ১৭ সেপ্টেম্বর ২০০৪, দ্য ডেইলি স্টার পত্রিকা।
আজো ‘ড্যাপ প্লান’ এর ওপর ভিত্তি করে ঢাকা শহর বিস্তৃত হয়েছে এবং নতুন ওয়ার্ড সংযুক্ত হয়েছে। এই প্লানে ঢাকার আশেপাশের জেলাগুলোর সঙ্গে আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থা, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থাপনা, পানি নিষ্কাশন, আবাসিক এলাকা, কমার্শিয়াল এরিয়া, ইন্ডাস্ট্রিয়াল এরিয়াসহ একটি শহরের প্রয়োজনীয় সব সুযোগ-সুবিধা ও নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়েছিল।
একটি সময় ঢাকার চার প্রান্তে জৈব বর্জ্য নিষ্কাশন করে উত্তর, দক্ষিণ, পূর্ব ও পশ্চিমে চারটি বিদ্যুৎকেন্দ্রের পরিকল্পনা ও সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ শুরু করা হয়েছিল। এই তাপভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র গুলো নিয়ন্ত্রিতভাবে বর্জ্য পুড়িয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে সক্ষম। পুরো ঢাকার বছরব্যাপী প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ সরবরাহ করার কথা ছিল এই চারটি বিদ্যুৎকেন্দ্র দিয়ে।
মেয়র খোকা দায়িত্ব নেয়ার অতি অল্প সময়ের মধ্যেই পাতাল রেলের সম্ভাব্যতা যাচাই শুরু করা হয়েছিল সম্ভবত জাইকার কারিগরি সাহায্যে। আমার বাবা মেয়র খোকা সবসময়ই নগরের সমস্যাগুলো স্থায়ী সমাধানে উন্নত শহর গুলোর আদলে নগর সরকার অথবা ‘মেট্রোপলিটন গভর্নমেন্ট’ এর পক্ষে সব সময় জোরালো অবস্থান নিয়ে এসেছেন।
২৫/৮/২০০৫ তারিখে তখন দেশে উপস্থিত ৬টি মেট্রোপলিটন সিটির মেয়রদের সঙ্গে বৈঠক করে নগর সরকারের প্রয়োজনীয়তার কথা এবং দাবি তুলে ধরেছিলেন। উল্লেখ্য সেই বৈঠকে চারজন বিএনপি সমর্থিত মেয়র ও দুই জন আওয়ামী সমর্থিত মেয়র গণসর্বসম্মতিক্রমে একমত পোষণ করেছিলেন।
এই ব্যাপক উন্নয়নমূলক কাজের মাঝেও কোনোদিন ভোলেননি তার নগরবাসীকে। একদিকে যেমন আজকের অনেক নামকরা বৃহত্তম শিল্পগোষ্ঠী ও উদ্যোক্তাদের ব্যবসা বাণিজ্য শুরু করার জন্য উদার মনে সব সহযোগিতা করেছেন। তার চিন্তাধারা ছিল যত বেশি কর্মসংস্থান তৈরি করা যায় ততো বেকারত্ব কমবে।
অন্যদিকে একেবারে হতদরিদ্র প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর চিকিৎসা, বিয়ে, পড়াশোনা, ধার্মিক অনুষ্ঠানসহ অন্যান্য বিষয় সবসময় আর্থিক সহযোগিতা প্রদান করেছেন। কোথাও কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে সবার আগে উপস্থিত হয়ে সশরীরে সেখানের উদ্ধারকর্মীদের সঙ্গে শামিল হওয়ার বহু উদাহরণ রয়েছে। মেয়র খোকার অধীনে ১০০ জন কাউন্সিলরের মধ্যে প্রায় ৩৫ জন আওয়ামী সমর্থিত হলেও একটি দিন অথবা একটি মুহূর্তের জন্যও কোনো প্রকার বিক্ষোভ অথবা মনোমালিন্যের ঘটনা ঘটেনি। দল-মতের ঊর্ধ্বে উঠে উনি বিন্দুমাত্র বৈষম্য করেনি কাউন্সিলরদের প্রতি।
এই গেরিলা বীর মুক্তিযোদ্ধা পরবর্তী প্রজন্ম যাতে মুক্তিযুদ্ধের বীরত্বগাথা ভুলে না যায় তাই দল-মতের ঊর্ধ্বে উঠে সব দলের বীর মুক্তিযোদ্ধাদের নামে রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলো নামকরণ করেছেন। যে নামফলকগুলো অবহেলিত হলেও আজও দৃশ্যমান। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার অনুপ্রেরণায় মেয়র খোকা ও পূর্তমন্ত্রী মির্জা আব্বাসের মহাপরিকল্পনা একটি বিশ্বমানের অত্যাধুনিক ঢাকার ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করে গিয়েছেন ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য। তাদেরই অবদানের অংশ হিসেবে আজকে ঢাকায় কিছু উন্নয়নের দৃশ্য দেখতে পাচ্ছি। বেড়েছে ঢাকার আয়তন যোগ হয়েছে আশেপাশের ইউনিয়নগুলো।
সাদেক হোসেন খোকা ও মির্জা আব্বাস ঢাকার দুই কিংবদন্তি ও স্বপ্নদ্রষ্টা নেতা। অতীতে কোনো দলেই এরকম সুদীর্ঘ মেয়াদে পরিকল্পনাকারী ও সুউচ্চ মাপের নগরপিতা তৈরি হয় নাই এবং আগামীতেও কোনোদিন হওয়ার সুযোগ নেই। এখন শুধু দুর্নীতির ঊর্ধ্বে উঠে তাদের করে যাওয়া পরিকল্পনাগুলো বাস্তবসম্মত খরচে বাস্তবায়ন করাটাই আগামী কয়েক দশকের মেয়রদের কাজ হতে পারে। আমরা কর্মীরা খুব গর্ব করেই বলি ঢাকায় আমাদের দুইটি বাঘ। আর কোথাও বাঘ তো দূরের কথা কিছু বিড়ালছানা থাকতে পারে।
বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে এই দুই ঢাকার রূপকারের রেখে যাওয়া পরিকল্পনাগুলো বাস্তবায়ন করলেই আর কিছু করার প্রয়োজন ছিল না।কিন্তু চরম দায়িত্ব অবহেলা, সীমাহীন দুর্নীতি, শূন্য জবাবদিহিতা আজকে পরিকল্পনামাফিক একটি বিশ্বমানের মেট্রোপলিস গড়ার বদলে এই সরকার দিয়েছে বিশ্বের অন্যতম বসবাসের অযোগ্য ও দূষিত শহর। সাদেক হোসেন খোকা সেই বীর মুক্তিযোদ্ধা যিনি ১৯৭১ সালে বারবার জীবন বাজি রেখে বহু গেরিলা অপারেশন করেছিলেন পাকিস্তানি স্থাপনাগুলো উড়িয়ে দিতে। পরিশেষে প্রতিহিংসার রাজনীতির শিকার হয়ে জীবনের শেষ সাড়ে পাঁচ বছর দেশের বাইরে কাটাতে তাকে বাধ্য করা হয়েছে।
আদালতের আদেশ নিয়ে চিকিৎসার স্বার্থে বিদেশ গেলেও অন্যায়ভাবে বিচার ব্যবস্থাকে প্রভাবিত করে তাকে জোরপূর্বক পলাতক দেখিয়ে সম্পূর্ণ মিথ্যা দুর্নীতির মামলায় সাজা দেয়া হয়। আমার দাদার জমির ওপর বিশ্বরোড রাস্তা হওয়ার কারণে আমার বাবা ক্ষতিগ্রস্ত হিসেবে যে জমি পেয়েছিল, সেটিও সরকার জবর দখল করে নেয়। কিন্তু এসব কূটকৌশলে তার পাহাড় সমান জনপ্রিয়তার টিকিটিও ছুঁতে পারেনি এই সরকার, যেটি তার মৃত্যুর পর দেশবাসী পরিষ্কারভাবে দেখেছে।
সারা জীবনই সাদেক হোসেন খোকার জনপ্রিয়তার কাছে ভীত ছিল এই সরকার। সেই জনপ্রিয়তার ভয়ে তার বিরুদ্ধে নির্বাচনে যাওয়ার সাহস পায়নি তাই ২০১১ সালে তাড়াহুড়ো করে সংসদে একটি অদ্ভুত বিল পাস করে ঢাকা সিটিকে দুই ভাগ করে ফেলা হয়। উনি বলেছিলেন ‘প্রয়োজনে আমি নির্বাচন করব না, তাও আমাদের এই ঐতিহ্যবাহী শহরকে দুইভাগ করবেন না।’ দেশে থাকা অবস্থায়ও প্রতিজ্ঞা করেছিলেন জনগণের অধিকার জনগণকে ফিরিয়ে দেয়ার লক্ষ্যে কেয়ারটেকার ব্যবস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করবেন; এবং অন্যায়ভাবে সিটিকে দুই ভাগ করা সেই কালো আইন একদিন বাতিল করবেন।
উনি নিজে হয়তো করতে পারেননি, কারণ তাকে বাধ্য করা হয়েছে বাক্সবন্দি হয়ে ফেরত আসতে। কিন্তু জনগণ তাদের অধিকার ঠিকই আদায় করে নেবে ইনশাআল্লাহ। দেশটা জানি কাদের? প্রয়োজনে নিজের জীবন রাজপথে উৎসর্গ করার মধ্যে দিয়ে দেশের মালিকানা নিজে বুঝে নেব কিন্তু কিছু লোকের জমিদারিত্বের দিবাস্বপ্ন কোনো কিছুর মূল্যেই বাস্তবায়ন হতে দেব না।’