দেশের খবর

বাবার সংসার চলে গাড়ি ভাড়ায়, আর মেয়ে শত শত কোটি টাকার মালিক !!

নরসিংদী জেলা যুব মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক শামিমা নূর পাপিয়া। বাবা ছিলেন অটো গ্যারেজের মালিক। এক সময় তেমন কিছুই ছিল না তাদের। কিন্তু গত পাঁচ বছরে অর্থবিত্ত অর্জন করে আঙুল ফুলে কলা গাছ বনে গেছেন। গাড়ি, বাড়ি, ফ্ল্যাট কিনে হয়েছেন শত কোটি টাকার মালিক। দেশে গাড়ির ব্যবসার পাশাপাশি বিদেশে দিয়েছেন বার। সবই করেছেন অন্যায় ও অপকর্মের ওপর ভর করে। ধনাঢ্য ব্যবসায়ীদের ব্লাকমেইল, চাঁদাবাজি, মাদক ব্যবসা ও দেহ ব্যবসাই তাদের মূল পেশা।

জানা যায়, নরসিংদী জেলা যুব মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক শামিমা নূর পাপিয়া ওরফে পিউ। নরসিংদীর বাগদী এলাকায় পেট্রোবাংলার অবসরপ্রাপ্ত গাড়িচালক সাইফুল বারীর মেয়ে। বর্তমানে তার বাবার নিজ এলাকায় একটি অটোর গ্যারেজ রয়েছে। সেখানে বেশ কয়েকটি অটো গাড়ি ভাড়া দিয়ে চলে তাদের সংসার।

সম্প্রতি পাপিয়া দোতলাবিশিষ্ট আধুনিক একটি বাড়ি করেছেন। তার স্বামী মফিজুর রহমান চৌধুরী সুমন গানের শিক্ষক মতিউর রহমান চৌধুরীর বড় ছেলে। মতিউর রহমান স্থানীয় নজরুল একাডেমির অধ্যক্ষের দায়িত্বে রয়েছেন। একসময় সুমনেরও তেমন কিছুই ছিল না। আধাপাকা টিনশেড ঘরেই কেটেছে তার শৈশব। এসএসসির গণ্ডি পার হওয়ার পর থেকেই তার অপকর্মের সূত্রপাত।

২০০০ সালের দিকে নরসিংদী শহর ছাত্রলীগের সাবেক আহ্বায়ক মফিজুর রহমান চৌধুরী সুমনের উত্থান শুরু। শৈশব থেকেই চাঁদাবাজি সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ও ব্ল্যাকমেইল ছিল সুমনের প্রধান পেশা। দূরদর্শী, চতুর ও মাস্টারমাইন্ড সুমন রাজনীতিবিদদের সঙ্গে সখ্য গড়ে তোলেন। ২০০১ সালে পৌরসভার কমিশনার মানিক মিয়াকে যাত্রা প্যান্ডেলে গিয়ে হত্যার পর তিনি আলোচনায় আসেন। এরই মধ্যে পাপিয়া চৌধুরীকে বিয়ে করেন সুমন। এরপর তার স্ত্রী পাপিয়াকে রাজনীতিতে কাজে লাগান।

papia55

প্রয়াত মেয়র লোকমান হোসেন হত্যাকাণ্ডের পর দুর্বৃত্তায়ন রোধকল্পে বর্তমান মেয়র কামরুজ্জামান কামরুল সন্ত্রাসী সুমন ও তার স্ত্রী পাপিয়া চৌধুরীকে আওয়ামী লীগের কর্মকাণ্ডে আসতে নিষেধ করেন। পরে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতৃত্বের বিভাজনকে কেন্দ্র করে পাপিয়া চৌধুরী ও তার স্বামী মফিজুর রহমান চৌধুরী সুমন সদর আসনের এমপি লে. কর্নেল (অব.) মো. নজরুল ইসলামের (বীরপ্রতীক) বলয়ে যোগ দেন। পাশাপাশি তাদের সংরক্ষিত আসনের মহিলা এমপি সাবিনা আক্তার তুহিনের সঙ্গে সখ্য গড়ে ওঠে।

ওই এমপির সঙ্গে তার গাড়ির ব্যবসা আছে বলে জানা গেছে। এরই মধ্যে পাপিয়া ও সুমনের অস্বাভাবিক উত্থান হয়। ২০১৪ সালের ১৩ ডিসেম্বর জেলা যুব মহিলা লীগের সম্মেলনে তৌহিদা সরকার রুনা সভাপতি ও পাপিয়া চৌধুরী সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। এরপর আর তাকে পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। শুরু হয় অস্বাভাবিক উত্থান। এ সবই করেছেন রাজধানী ঢাকায় বসে। মাঝে মধ্যেই স্থানীয় আওয়ামী লীগের মিটিং মিছিলে যোগ দেন দলবল নিয়ে।

সুমন শহর ছাত্রলীগের সাবেক আহ্বায়ক ও তার স্ত্রী পাপিয়া যুব মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক হওয়ায় এলাকায় তাদের বিশাল কর্মী বাহিনী রয়েছে। বিশাল শোডাউন আর শত শত লোকজন নিয়ে আওয়ামী লীগের মিছিল ও জন সভায় যোগ দেন। নরসিংদী কলেজ শাখা ছাত্রলীগ ও জেলা ছাত্রলীগের অনেক নেতাকর্মী যারা তার অনুসারী, তারা ‘কিউ অ্যান্ড সি’ ট্যাটু ব্যবহার করেন। মাঝে মধ্যেই তারা বিশাল শোডাউন দেন আওয়ামী লীগের মিছিল-মিটিংয়ে।

papia55

যত সম্পদ : নরসিংদী জেলা শহরে বাগদী মারকাজ মসজিদ এলাকায় দোতলাবিশিষ্ট বাড়ি রয়েছে পাপিয়ার। সম্প্রতি পৌর শহরের ব্রাহ্মন্দী এলাকায় তার স্বামী মতি সুমন বিলাশবহুল ছয়তলা বাড়ি করেছেন। বিলাদী মোড়ে প্রায় ২ কোটি টাকা মূল্যের ১০ শতাংশ এবং আরেকটি ৬ শতাংশের দুটি প্লট রয়েছে। তার শ্বশুরবাড়ি ব্রাহ্মন্দীতে স্বামীর দোতলা একটি বাড়ি আছে।

রাজধানীর ফার্মগেট ইন্দিরা রোডে ‘রওশন ডমিনো রিলিভ’ বিলাসবহুল ভবনে তার ও তার স্বামীর নামে দুটি ফ্ল্যাট রয়েছে। এ ছাড়া তার কালো ও সাদা রঙের দুটি মাইক্রোবাস, একটি হ্যারিয়ার, একটি নোয়া ও একটি ভিজেল কার আছে।

নরসিংদী শহরে পাঁচটি মোটরসাইকেল রয়েছে বলে জানা গেছে। মোটরসাইকেলগুলো তার অনুসারীরা ব্যবহার করেন। নরসিংদী জেলা শহরে সুমন চৌধুরীর কেএমসি কার ওয়াশ নামে একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আছে। কার ওয়াশ ব্যবসার আড়ালে এখানে মাদক ব্যবসাসহ বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চলে। তার স্বামীর মালিকানায় থাইল্যান্ডে একটি বারও আছে।

নরসিংদীর এসএমই শাখায় গত বছরের জুন পর্যন্ত ১ লাখ ২৩ হাজার ৮২৯ টাকা জমা ছিল। শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকের নরসিংদী শাখায় পাপিয়ার হিসাবে ১ লাখ ৯৯ হাজার ৭৭০ টাকা ছিল। সিটি ব্যাংকে তার তিনটি হিসাব নম্বরের খোঁজ পাওয়া গেছে। এর একটিতে ১ লাখ, অন্য দুটিতে ৫০ হাজার ও ১ লাখ ২০ হাজার টাকার ডিপোজিট পাওয়া যায়। তার সিটি ব্যাংকের একটি এমেক্স গোল্ড ক্রেডিট কার্ড ও একটি এমেক্স গ্রিন ক্রেডিট কার্ড রয়েছে।

রাজধানীর এফডিসি গেটের সামনে ‘কার এক্সচেঞ্জ’ নামে তার একটি গাড়ির শোরুম আছে। নরসিংদীর শালিদা এলাকায় আর এসএম কার ওয়াশ নামে একটি গাড়ির সার্ভিস সেন্টার রয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যবসায়ী জানান, ব্ল্যাকমেইলই তাদের প্রধান পেশা। তারা প্রথমে সুন্দরী নারীদের পাঠায়। তারপর কৌশলে ধনাঢ্য ব্যক্তির ছবি তোলে এবং ভিডিও করে। পরে তাদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেয়।

papia55

শহর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি শ্যামল কুমার সাহা জাগো নিউজকে বলেন, এত অল্প সময়ে কেউ বিপুল পরিমাণ অর্থ সম্পদের মালিক হতে পারে না। তারা অনৈতিক কাজ করেই এসব অর্জন করেছেন। অসহায় ও দরিদ্র মেয়েদের চাকরি দেয়ার কথা বলে তাদের দেহ ব্যবসায় বাধ্য করতেন তারা। প্রতিবাদে তাদের ওপর নির্যাতন চালানো হতো।

নরসিংদী শ্রমিক লীগের আহ্বায়ক আবুল কালাম আজাদ জাগো নিউজকে বলেন, পাপিয়া ও তার স্বামীর চালচলন দেখে প্রথম থেকেই আমাদের সন্দেহ ছিল। তার চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যও সন্দেহের বাইরে ছিল না। তার আয়ের উৎস সর্ম্পকে সবসময় ধোঁয়াশা ছিল।

জেলা ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হাসিবুল ইসলাম মিন্টু বলেন, পাপিয়া ও সুমনের সঙ্গে জেলা ছাত্রলীগের কোনো সম্পর্ক নেই। তবে তাদের সঙ্গে কারও ব্যক্তিগত সম্পর্ক থাকতে পারে। এ ব্যাপারে আমার ধারণা নেই।

নরসিংদী জেলা যুব মহিলা লীগের সভাপতি তৌহিদা সরকার রুনা বলেন, মহিলা যুবলীগের কমিটিতে ছয় বছর ধরে পাপিয়া ও আমি একসঙ্গে রয়েছি। আমরা একসঙ্গে বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশ নিয়েছি। কিন্তু কোনোভাবেই জানতে পারিনি পাপিয়া এত বড় অপরাধের সঙ্গে জড়িত। শনিবার তাদের গ্রেফতারের পর আমরা এ বিষয়ে জানতে পারি।

নরসিংদী জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল মতিন ভুঁইয়া বলেন, খারাপ লোকের অপকর্মের দায় আওয়ামী লীগ বহন করবে না। তারা ক্ষমতার অপব্যবহার করে অন্যায়মূলক কাজ করেছে, যা দলের ভাবমূর্তি নষ্ট করেছে। তাদের বিরুদ্ধে দল ও আইন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

সূত্রঃ জাগো নিউজ

J A Suhag

Local News: J A Suhag writes Local News articles for industries that want to see their Google search rankings surge. His articles have appeared in a number of sites. His articles focus on enlightening with informative Services sector needs. he holds the degree of Masters in Business and Marketing. Before he started writing, he experimented with various professions: computer programming, assistant marker, Digital marketing, and others. But his favorite job is writing that he is now doing full-time. Address: 44/8 - North Dhanmondi, Dhaka Email: [email protected]

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button