বেড়েই চলেছে পেঁয়াজের দাম, ওজুহাতের শেষ নেই !!
বর্তমান সময়ে বাজারের প্রচলিত নিয়ম বা ব্যাকরণ মানছেন না পেঁয়াজ ব্যবসায়ীরা। কোনো একটা সুযোগ পেলেই ব্যবসায়ীরা দাম বাড়িয়ে টালমাটাল করছেন বাজার। অস্বাভাবিকভাবে পণ্যটির দাম বাড়ানোর খেলায় মেতেছেন তারা। ব্যবসায়ীদের ওজুহাতের শেষ নেই। গত তিন দিনে দ্বিগুণ দাম বাড়িয়ে সেঞ্চুরি থেকে আবার ডাবল সেঞ্চুরিতে পৌঁছেছে পেঁয়াজ। তবে এবার বাজারে সৃষ্ট অস্থিরতা বন্ধে কঠোর পথে হাঁটবে সরকার।
তাছাড়া বাজারে পেঁয়াজের বড় ধরনের কোনো ঘাটতি নেই। এর পরও এমন পরিস্থিতি সৃষ্টির জন্য দায়ীদের খুঁজে বের করতে শিগগির মাঠে নামছেন গোয়েন্দারা। অযৌক্তিকভাবে বাজারে অস্থিরতা সৃষ্টিকারীদের আইনের আওতায় আনা হবে বলে সতর্ক করেছেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. জাফর উদ্দীন। তিনি বলেন, ‘বাজার অনুসন্ধান জোরদার করা হচ্ছে। পাশাপাশি সরবরাহ আরও বাড়াতে আমদানি বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। ব্যবসায়ীদেরও পেঁয়াজ আমদানি বাড়াতে সহযোগিতা করবে মন্ত্রণালয়।’
এদিকে খুচরা বাজারে তিন দিন আগে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ ছিল ৮০ থেকে ১০০ টাকা। গতকাল তা ১৮০ থেকে ২১০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এখন আমদানি করা চীনা পেঁয়াজ ৭০ থেকে ৮০ টাকা, তুরস্কের পেঁয়াজ ১০০ থেকে ১২০ ও পাকিস্তানি পেঁয়াজ ১৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তিন দিন আগে চীনা ৪০ থেকে ৪৫ টাকা, তুরস্ক ৫০ থেকে ৬০ টাকা ও পাকিস্তানি পেঁয়াজ ৮০ টাকা ছিল। বাজারে দাম বেড়ে যাওয়ায় টিসিবির ট্রাকের সামনে পেঁয়াজ কেনার লাইন আবার দীর্ঘ হচ্ছে। বর্তমানে এ পেঁয়াজ ৩৫ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।
এ ব্যাপারে সংশ্নিষ্টরা জানান, পেঁয়াজ সরবরাহ কমে আসছে- হঠাৎ এমন গুজব ছড়িয়ে বাজারে অস্থিরতা তৈরি করে দাম বাড়ানো হয়েছে। দাম বৃদ্ধির পর শীত ও বৃষ্টিতে বাজারে পেঁয়াজ আসা কমেছে। আমদানি পেঁয়াজ বাজারে সরবরাহ কম। এসব কারণে দাম বাড়ছে বলে দাবি করে আসছেন ব্যবসায়ীরা।
বেশ কয়েকজন পাইকার ও আমদানিকারক বলেছেন, বৈরী আবহাওয়ায় কৃষকরা কম পেঁয়াজ তোলায় দাম বেড়ে গেছে। আমদানি পেঁয়াজের দামও সামান্য বেড়েছে। আবার দেশি পেঁয়াজের ব্যবসায়ীরা দাবি করছেন, আমদানিকারকরা পেঁয়াজ আনা কমিয়ে দেওয়ায় দেশি পেঁয়াজের চাহিদা বেড়ে গেছে। এতে দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। বাস্তবে বাজারে কোনো পেঁয়াজের ঘাটতি নেই।
গত তিন দিনের চেয়ে আগের সপ্তাহে কনকনে শৈত্যপ্রবাহ বয়ে গেছে। তখন সরবরাহ কিছুটা কমলেও দাম বাড়েনি। এখন বৈরী আবহাওয়াসহ নানা ছুতা দিয়ে দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। এদিকে শুক্রবারে বৃষ্টি হলেও বৃহস্পতিবার থেকে বাড়ছে দাম। আবার বৃষ্টির পরে শনিবার পাইকারি আড়তে পেঁয়াজের দাম ওঠানামার মধ্যে ছিল। ব্যবসায়ীরা নানা ছুতা দিলেও এবার দাম বৃদ্ধির যৌক্তিক কারণ নেই বলে মনে করছেন বাজারসংশ্নিষ্টরা।
এ ব্যাপারে কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি ও সাবেক বাণিজ্য সচিব গোলাম রহমান বলেন, ‘অতিমুনাফাকারীরা ছুতা দিয়েই পার পাচ্ছে। যারা এমন করছে তাদের তালিকা করা হয়েছে। কিন্তু ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরূদ্ধে ব্যবস্থা নিলে এমন হতো না।’
তিনি আরও বলেন, ‘তোষণ না করে শাসন করা উচিত। তোষণ করায় অতিমুনাফাখোর ব্যবসায়ীদের সাহস বেড়ে গেছে। ফলে নানা ছুতা দিয়ে অতিমুনাফা করে বাজার অস্থির করছেন। এতে ভোক্তারা অসহায় হয়ে পড়ছেন। এখন সরকার আইন অনুযায়ী কঠোর পদক্ষেপ নিলে বাজার স্থিতিশীল হবে।’