ভারতে নাগরিকত্ব আইন: নতুন বছরেও মাঠে থাকবে বিরোধীরা !!
নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (সিএএ) বাতিলের দাবিতে ভারতজুড়ে বিক্ষোভের ঢেউ নতুন বছরেও অব্যাহত থাকবে- এ ঘোষণা দিয়ে একজোট হয়েছে কংগ্রেসসহ দেশটির প্রায় সব বিরোধী রাজনৈতিক দল।
বিভিন্ন রাজ্যে এখনও সাধারণ জনতা ও শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করছেন। এতে যোগ দিয়েছেন হিন্দু পুরোহিতরাও। অপরদিকে ‘বিতর্কিত’ আইনের পক্ষে থাকতে জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এটির পক্ষে অনলাইনে প্রচারও শুরু করেছেন বিজেপির এ নেতা।
আনন্দবাজার পত্রিকা বলছে, সিএএ এবং জাতীয় নাগরিক তালিকা (এনআরসি) বাতিলের দাবিতে জোটবদ্ধ হয়ে প্রতিবাদের আহ্বানে তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী ও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির চিঠিতে সাড়া দিয়েছেন রাজনীতিকরা। কংগ্রেসসহ বিরোধী প্রায় সব রাজনৈতিক দল এতে সমর্থন দিয়েছে।
ভারতের সবচেয়ে প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী দল কংগ্রেসের সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী এক চিঠিতে মমতাকে সমর্থন দিয়ে প্রতিবাদ অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছেন। ঝাড়খন্ডে রোববার জেএমএম-কংগ্রেস জোট সরকারের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে হেমন্ত সারেনের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন দেশটির প্রায় সব অ-বিজেপি দলের প্রতিনিধিরা।
পশ্চিমবঙ্গ, ছত্তিশগড় ও রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রীর পাশাপাশি তামিলনাড়ুর ডিএমকে-র সভাপতি, সিপিএম এবং সিপিআইয়ের দুই সাধারণ সম্পাদক, আরজেডি ও এলজেডির প্রধান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। বিরোধীদলীয় নেতাদের আলাপচারিতায় উঠে এসেছে, সিএএ ও এনআরসির বিরোধিতায় সব দলই প্রতিবাদ চালিয়ে যাবে।
এনডিটিভি বলছে, উত্তরপ্রদেশ রাজ্যে নাগরিকত্ব আইন বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ চলছে। রাজ্যটির মুখ্যমন্ত্রী বিক্ষোভকারীদের ওপর ‘বদলা’ নেয়ার ঘোষণা দিয়ে মামলা, ক্ষতিপূরণ দাবি অব্যাহত রেখেছেন। এ অবস্থায় সোমবার মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথকে সমালোচনায় বিদ্ধ করেছেন কংগ্রেস নেত্রী প্রিয়াংকা গান্ধী।
তিনি বলেন, ভারতে হিংসা ও প্রতিশোধের কোনো স্থান নেই। এদিকে সোমবার কলকাতার মেয়ো রোডে মহাত্মা গান্ধীর মূর্তির পাদদেশে সিএএ ও এনআরসির বাতিলের দাবিতে প্রতিবাদে শামিল হয় পশ্চিমবঙ্গের পুরোহিত ও পূজারিদের সংগঠন ‘পশ্চিমবঙ্গ সনাতন ব্রাহ্মণ পরিষদ’।
পরিষদের সাধারণ সম্পাদক শ্রীধর মিশ্র বলেন, ধর্মের ভিত্তিতে যেভাবে দেশকে বিভক্ত করার চেষ্টা হচ্ছে, তা অত্যন্ত উদ্বেগের। আজ যদি একটি সম্প্রদায়কে টার্গেট করা হয়ে থাকে, তাহলে আমাদেরও যে কোনো সময় করা হতে পারে।
সিএএ ও এনআরসি নিয়ে টালমাটাল অবস্থার মধ্যে জাতীয় আদমশুমারি (এনপিআর) করার ঘোষণা দিয়েছে বিজেপি সরকার। এর প্রতিবাদে শামিল হয়েছেন সমাজবাদী পার্টির প্রধান ও উত্তরপ্রদেশের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী অখিলেশ যাদব। ওদিকে বিক্ষোভকারীদের কটাক্ষ করে ভারতের সেনাপ্রধান বিপিত রাওয়াতের বক্তব্যের সমলোচনা করেছেন কংগ্রেস নেতা পি চিদম্বরম।
টাইমস অব ইন্ডিয়া বলছে, নাগরিকত্ব আইন ইস্যুতে দেশজুড়ে কোণঠাসা হয়ে পড়া বিজেপি সরকারের ভাবমূর্তি উদ্ধারে এবার অনলাইনে প্রচারে নেমেছেন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম টুইটারে সাধারণ মানুষকে এ আইন সমর্থনের আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
টুইটে হ্যাশট্যাগ দিয়ে সোমবার মোদি লেখেন, এটি নিপীড়িত শরণার্থীদের নাগরিকত্ব দেয়ার আইন, কারও নাগরিকত্ব কেড়ে নেয়ার জন্য নয়। অ্যাপে গিয়ে সিএএ সংক্রান্ত ভিডিও, খবর ও অন্যান্য সব কিছু কিভাবে জানা যাবে তাও জানিয়েছেন। তার দল বিজেপিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আইনটির পক্ষে প্রচার চালানো শুরু করেছে।
নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন অনুযায়ী- পাকিস্তান, আফগানিস্তান ও বাংলাদেশ থেকে ২০১৫ সালের আগে ভারতে আসা হিন্দু, শিখ, খ্রিস্টান, বৌদ্ধ, পার্সি ও জৈন শরণার্থীরা দেশটির নাগরিকত্ব পাওয়ার জন্য আবেদন করতে পারবেন। সমালোচকদের আশঙ্কা, এ আইন এবং এনআরসি প্রয়োগের মাধ্যমে মুসলিমদের ভারত থেকে তাড়ানোর চেষ্টা চলতে পারে।