ভ্যানের জন্ম নেয়া সেই শিশুকে দেখতে গেলেন ডিসি – দিলেন সহায়তা !!
সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসা না পেয়ে হাসপাতাল চত্বরে ভ্যানের ওপর জন্ম নেয়া শিশুটির নাম রাখা হয়েছে রুদ্র দাস। হাসপাতাল চত্বরে ভ্যানের ওপর রুদ্রের জন্ম নেয়াকে কেন্দ্র করে তোলপাড় চলছে গোটা স্বাস্থ্য বিভাগে। সোমবার (৪ মে) ঘটনাটির ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেন সিভিল সার্জন। পৃথক আরেকটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন জেলা প্রশাসক ডিসি)।এদিকে মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে খাদ্য সামগ্রী নিয়ে শহরের ঝুঁটিতলা এলাকায় ওই গৃহবধূ ও তার নবাগত সন্তানকে দেখতে যান জেলা প্রশাসক এস এম মোস্তফা কামাল। তিনি ওই পরিবারের সার্বিক খোঁজখবর নেন।
জেলা প্রশাসক এস এম মোস্তফা কামাল বলেন, নবজাতকের জন্য শিশুখাদ্য ও তার মায়ের জন্য পুষ্টি সহযোগী খাবার ক্রয় করার জন্য খুলনা বিভাগীয় কমিশনার আনোয়ার হোসেন হাওলাদারের পক্ষ থেকে নগদ অর্থ ও প্রধানমন্ত্রীর দেয়া উপহার সামগ্রী পৌঁছে দেয়া হয়েছে। এছাড়া বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের (সার্বিক) নেতৃত্বে তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে দেয়া হয়েছে। তাছাড়া স্বাস্থ্য সেবার সার্বিক অবস্থা পর্যালোচনার জন্য জরুরি সভা আহ্বান করা হয়েছে।
এর আগে গত ১ মে (শুক্রবার) সকাল সাড়ে ৮টার দিকে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতাল চত্বরে ভ্যানের ওপর একটি ছেলে সন্তান প্রসব করেন গৃহবধূ শিমুলী রানী দাস। তিনি ঘোনা ইউনিয়নের ছনকা গ্রামের বিধান দাসের স্ত্রী। বর্তমানে বাবার বাড়ি সদর উপজেলার মাছখোলা ঝুঁটিতলা এলাকায় অবস্থান করছেন। সোমবার (৪ মে) ঘটনাটির ছবি সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
শিমুলী দাসের মা অষ্টমী রানী দাস বলেন, প্রসব বেদনা উঠলে মেয়েকে নিয়ে সদর হাসপাতালে যাই। কিন্তু জরুরি বিভাগের চিকিৎসকরা কোনো চিকিৎসা দেননি। কিছুক্ষণ পরই মেয়ের প্রচণ্ড প্রসব বেদনা ওঠে। সঙ্গে একজন ধাত্রী থাকায় হাসপাতাল চত্বরে ভ্যানের ওপর ছেলে সন্তানের জন্ম দেয় শিমুলী। পরে আমরা বাড়িতে ফিরে আসি। ছেলের নাম রাখা হয়েছে রুদ্র দাস। মা-সন্তান দুইজনই সুস্থ রয়েছে।
শিমুলী দাসের বাবা পরেশ দাস বলেন, মেয়েকে প্রথমে ভোর বেলা শহরের সিবি হাসপাতালে নিয়ে যাই। সেখান হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ওপরে উঠায় মেয়েকে। তারপর তারা বলে, ডাক্তার আসতে ৮টা থেকে সাড়ে ৮টা বেজে যাবে। তখন ওখান থেকে মেয়েকে ফিরিয়ে নিয়ে আসি। এরপর এসপি বাংলোর পেছনের ক্লিনিকে নিয়ে যাই। সেখানে তিনতলায় ওঠানোর পর কাগজপত্র দেখে মেয়েকে সদর হাসপাতালে নেয়ার কথা বলেন তারা।
তিনি আরও বলেন, সদর হাসপাতালে যাওয়ার পর দেখি দুইজন ঘুমিয়ে আছেন। তাদের ডেকে তোলার পর মেয়েকে দেখার কথা বলি। তখন তারা বলেন- ভেতরে নিয়ে আসেন। কিন্তু ভেতরে নিয়ে আসার মত অবস্থা তখন মেয়ের ছিল না। এর কিছুক্ষণ পরই সঙ্গে থাকা ধাত্রীদের মাধ্যমে ভ্যানের ওপরে নরমল ডেলিভারিতে সন্তান প্রসব করে শিমুলী। তারপর রক্ত ধুয়ে মুছে দিয়ে বাড়িতে চলে আসি।
ঘটনার দিন সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসক ডা. অসীম সরকার বলেন, কোনো কিছু বুঝে ওঠার আগেই মুহূর্তের মধ্যে নরমল ডেলিভারি হওয়ার পর তাদের হাসপাতালে ভর্তি হতে বলা হয়। তবে মা ও শিশু সুস্থ থাকায় তারা হাসপাতালে থাকতে রাজি না হয়ে বাড়িতে চলে যান।
সাতক্ষীরার সিভিল সার্জন ডা. মো. হুসাইন সাফায়াত জানান, ঘটনাটি জানার পর স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠণ করা হয়েছে। আগামী সাতদিনের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। প্রতিবেদন হাতে পেলে পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে।