মসজিদে নামাজ পড়তে আসলেই দেওয়া হয় চকলেট ও চুইংগাম !!
পৃথিবীতে একমাত্র শান্তির ধর্ম হচ্ছে ইসলাম। শিশুদের নামাজের প্রতি মনোযোগ সৃষ্টি করার জন্য নোয়াখালির কাড়িকান্দায় এই অভিনব ঘোষণা দেন ইমাম। ১২ বছরের নীচে যত বাচ্চারা মসজিদে আসবে প্রত্যেক ওয়াক্তে আমার পক্ষ থেকে ২ পিচ করে চকলেট পাবে।
আর আমি চকলেট দেয়ার সময় লিখে রাখবো, যে যত বেশি চকলেট পাবে সপ্তাহের শেষ দিন বৃহস্পতিবার এশার নামাজের পরে তাকে বিশেষভাবে পুরস্কৃত করা হবে। এভাবেই চলছে শিশুদের নামাজ শিক্ষার কাজ।
লেখাটি হুবহু তুলে ধারা হলো-
ইমাম সাহেবের ডাক- ‘আমি নোয়াখালী জেলার কোনো এক থানার গ্রাম মসজিদের ইমাম। বহুদিন আগে ফেসবুকে একটা পোষ্ট পড়েছিলাম বাচ্চাদের মসজিদে নিয়ে আসার বিষয়ে। সেই পোস্ট পড়ার পর আমিও চিন্তা করেছিলাম বাচ্চাদের মসজিদে নিয়ে আসার জন্য কিছু একটা করার।’
‘তারপর আমি মসজিদে জুমার নামাজে ঘোষণা করলাম, ১২ বছরের নীচে যত বাচ্চারা মসজিদে আসবে প্রত্যেক ওয়াক্তে আমার পক্ষ থেকে ২ পিচ করে চকলেট পাবে। আর আমি চকলেট দেয়ার সময় লিখে রাখবো, যে যতো বেশি চকলেট পাবে সপ্তাহের শেষ দিন বৃহস্পতিবার এশার নামাজের পরে তাকে বিশেষভাবে পুরস্কৃত করা হবে।’
‘আমি যখন এই ঘোষণা দিয়েছিলাম, তখন ভেবেছি এতে ওতো একটা আহামরি সাড়া পাবো না কিন্তু আল্লাহতালার ইচ্ছা অপরিসীম। এক সপ্তাহ দুই সপ্তাহ যেতে না যেতেই গড়ে ১০ থেকে ২০ জন বাচ্চা প্রতিনিয়ত মসজিদে আসা শুরু করলো। প্রথম সপ্তাহে সবচেয়ে বেশি ৫৮টি চকলেট পেয়েছিলো ৮ বছরের সালেহ নামে একটা ছেলে, তাকে পুরস্কৃত করেছিলাম শুধুমাত্র একটা জ্যামিতি বক্স দিয়ে।’
‘আমি বাচ্চাদের বলে দিয়েছিলাম বাচ্চারা শুধু মসজিদে নামাজ পড়তে আসবে না, তারা মসজিদে আসবে খেলবে, দৌঁড়াদৌড়ি করবে, হাসাহাসি করবে। আর এতেই কিছু মুরুব্বীদের গা জ্বালা শুরু হয়ে গেল।’
‘তারা যেমন বাচ্চাগুলোর উপর ক্ষিপ্ত হলো, তেমনি ক্ষিপ্ত হলো আমার উপরেও। আমি সোজাসুজি বলে দিলাম দরকার হলে আমি শুধু বাচ্চাদের ইমামতি করবো, আপনারা অন্য মসজিদ দেখতে পারেন। কারণ আমি এই এলাকারই সন্তান। আমি জানি, পরবর্তী প্রজন্ম নামাজি না হলে কি ভয়ঙ্কর হবে এলাকার পরিস্থিতি! আমার বড় শক্তি ছিলো আমার কমিটির অধিকাংশ লোকজন আমার এই আয়োজনে সঙ্গী ছিলো।’
‘কিন্তু দায় সাধলো এতো চকলেট দেয়ার সাধ্য আমার ছিলো না, প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৬০ থেকে ৭০ পিছ চকলেট লাগতো। আমার মসজিদের কমিটিতে কিছু যুবক ভাইয়েরা ছিলো। আমি তাদের সাথে আলোচনা করলাম। দুজন ভাই আমার সাথে একাত্মতা পোষণ করল এবং তারা চকলেটের সম্পূর্ণ খরচ বহন করবে বলে আমাকে আশ্বস্ত করল। পরের সপ্তাহে সবচেয়ে বেশি চকলেট পেয়েছিল ৬ বছরের একটা মেয়ে, অবাক করার মত বিষয়! তার বাবা সব সময় তাকে নিয়ে আসতেন মসজিদে। তাকে পুরস্কৃত করা হয়েছিল একটা ভালোমানের অ্যালার্ম ঘড়ি দিয়ে।’
‘মসজিদে এখন গড়ে প্রতিদিন ২০ থেকে ৩০ জন বাচ্চা উপস্থিত হয়। আমার সামনের কাতারের অধিকাংশ মুসুল্লি বাচ্চারা থাকে, প্রথমদিকে যেরকম হাসাহাসি দৌঁড়াদৌড়ি হতো এখন আর ওরকম হয় না। তারা এখন চুপচাপ দাঁড়িয়ে নামাজ আদায় করে।’
‘বাচ্চাদের এখন শুধু চকলেট দেয়া হয় না, আমার কমিটির লোকজনরা অনেক ভালো কিছু দেয়ার চেষ্টা করে। মাঝে মাঝে বিস্কুট দেয়া হচ্ছে, মাঝে মাঝে কলম দেয়া হচ্ছে, বিভিন্ন জিনিস বিভিন্ন জায়গা থেকে বিভিন্ন লোকজন দিচ্ছেন। সবশেষে সউদী প্রবাসী এক ভাই ফোন করে জানিয়েছেন, পরের সপ্তাহে সবচেয়ে বেশি যে চকলেট পাবে তাকে একটা বাইসাইকেল দেয়া হবে!’
‘আমার মসজিদে এখন বাচ্চাদের অভাব নেই, যদি পিছনে বাচ্চারা হাসাহাসিও করে তাহলে এখন আর আমার মসজিদে কোনো মুরুব্বী মুসল্লি বাচ্চাদের সাথে দুর্ব্যবহার করে না। তাদের মসজিদ থেকে তাড়িয়ে দেয়া হয় না। আমার মসজিদের অধিকাংশ মুসল্লী বাচ্চাদের প্রচন্ড ভালোবাসে, আসলে তাদের সাথে সুন্দর আচরণ করে।’