মসজিদ জ্বলে গিয়েছে জানি, ‘কিন্তু মন্দিরে আঁচ লাগতে দেব না’ !!
দিল্লিতে হিন্দুত্ববাদীদের চলা তাণ্ডবের মধ্যেই সম্প্রীতির এক উজ্জ্বল ছবি উঠে এসেছে পুরনো মুস্তাফাবাদের বাবুনগরে। লাগাতার চলা এ সহিংসতায় বেশ কয়েকটি মসজিদ পুড়লেও মুসলিম অধ্যুষিত অঞ্চলে শিব মন্দির রক্ষা করেছেন মুসলমানরাই। গত ছয়দিন দিল্লি সাম্প্রদায়িক সহিংসতা ও দাঙ্গার আগুনে জ্বলেছে। হিন্দুত্ববাদীরা মুসলমানদের রক্ত ঝরাতে বেপরোয়া হয়ে উঠলেও ওই অঞ্চলের বাসিন্দারা কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে রুখে দিয়েছেন সংঘর্ষ। তুলে ধরেছেন সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এক অনন্য নজির।
দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্গত দেশবন্ধু কলেজের ছাত্র মোহাম্মদ হাসিন এমনই এক জন। ২৪ বছরের এ ছাত্রের কথায়, ‘পরিস্থিতি যেমনই হোক, আমরা চেয়েছিলাম সব সময় ঐক্যবদ্ধ থাকতে। যাতে হিংস্র জনতার মোকাবিলা করা যায়।’ যে কোনো মূল্যে পারস্পরিক বিশ্বাস ও সম্প্রীতি অটুট রাখাই ছিল তাদের সংকল্প। সে জন্য মন্দির বাঁচাতে ওই কয়েকটা দিন পালা করে পাহারা বসিয়েছেন তারা। হাসিনের কথায়, ‘দুই ধর্মের মানুষই ছোট ছোট দল বানিয়ে করে সতর্ক থেকেছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় হাতে তুলে নিয়েছিলাম লাঠি।’
মন্দিরের খুব কাছেই থাকেন কামরুদ্দিন। স্থানীয় চায়ের দোকানে খাবার সরবরাহ করে সংসার চলে তার। এ কামরুদ্দিনের মুখেও সম্প্রীতির সুর। তিনি বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে আমরা একসঙ্গে থেকেছি। কখনও সংঘর্ষের কথা ভাবতেই পারিনি। এ কঠিন সময়ে মানবতা রক্ষা করাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। মসজিদ জ্বলে গিয়েছে জানি, কিন্তু মন্দিরে কোনো আঁচ লাগতে দেব না।’ গত ৩০-৩৫ বছর ধরে মন্দিরের তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে কাজ করছেন রীনা (৫২)। দৈনন্দিন পুজার সব দায়িত্বই তার। এই বিপদের সময়ে তিনিও ধর্ম বিচার না করে আস্থা রেখেছেন ভিন্ন ধর্মের ভাইদের উপরেই। তুলে দিয়েছেন মন্দিরের চাবি।
রীনা বলেন, ‘ওরা তো নিজেদেরই লোক। গত কয়েক দিন মন্দিরে যেতে পারিনি। কিন্তু আমি নিশ্চিত ছিলাম, ওরা থাকতে মন্দিরের কোনও ক্ষতি হবে না। এত দিন একসঙ্গে রয়েছি। পরিস্থিতি খারাপ বলে কি সব বদলে যাবে? আমরা পৃথকভাবে ধর্মপালন করলেও ঈশ্বর তো একই।’ সূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা