মানিকগঞ্জের ভ্যান চালক ছেলেটি এখন সরকারি ডাক্তার !!
‘এইচএসসি পড়তে পারব কিনা, কোথায় ভর্তি হবো, কী করব? কিছুই জানি না। এর মাঝে একদিন হঠাৎ গ্রাম সম্পর্কিত এক দাদুর কাছে শুনতে পেলাম ঢাকার ক্যামব্রিয়ান কলেজে গরিব মেধাবীদের ফ্রি পড়াবে। দাদু আমাকে ঢাকা নিয়ে এলেন। সেটাই আমার প্রথম ঢাকায় আসা। ক্যামব্রিয়ান কলেজে নিয়ে গেলেন আমার গ্রাম সম্পর্কীয় এক কাকা। ভর্তি করিয়ে দিলেন। সম্পূর্ণ বিনা বেতনে ২ বছর পড়ার সুযোগ পেলাম। সেই কাকার বাসায় থেকেই আমি এইচএসসি পড়েছি। মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষা দিয়েছি। তার ঋণ আমি জীবনেও শোধ করতে পারব না’, মঙ্গলবার (১৯ নভেম্বর) জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রণীত গেজেট অনুযায়ী ৩৯তম বিসিএসে উত্তীর্ণ ৪ হাজার ৪৪৩ জন ভাগ্যবান চিকিৎসকের একজন ডা. আল মামুন। নিজের সাফল্যের পেছনের সংগ্রামের গল্প এভাবেই শুরু করলেন তিনি।
চিকিৎসক হওয়ার পেছনে শুধু নিজের সংগ্রাম ও অদম্য ইচ্ছাকেই মূল কারণ নয় বললেন ডা. আল-মামুন। নানা বিপদে স্থানীয়দের এবং কলেজের অবদানের কথাকে ভুলেননি তিনি। তাঁর বাড়ি মানিকগঞ্জের সদর থানার পুটাইয়া ইউনিয়নে। তাঁর বাবা খোরশেদ আলম একজন রিকশাচালক, মামুন নিজে চালাতেন ভ্যান।
ডাঃ মামুন বলেন, ২ ভাই ও ২ বোনের মাঝে আমিই বড়। দায়িত্বটাও তাই অনেক। বাবা রিকসাচালক হলেও আমাকে নিয়ে অনেক বড় স্বপ্ন দেখতেন। তার সেই স্বপ্ন পূরণে হাইস্কুল জীবনে কত দিন যে ভ্যান চালিয়েছি, মানুষের বাড়িতে কামলা খেটেছি তার হিসাবটা হয়তো মেলাতে পারব না আজ। বাবা আমার পড়াশোনার জন্য সাধ্যমতো কষ্ট করেছেন। মানুষ অনেক কথাই বলেছেন, তবুও বাবা দমে যাননি।
চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন ছোটবেলা থেকেই ছিল কিনা প্রশ্নে ডা. আল মামুন বলেন, ঠিক তা নয়; সে সময় চিকিৎসক হব এমনটা কল্পনা করিনি। চড়াই উতরাই করে স্বপ্ন পরিবর্তন হতে থাকে আমার। সেই যখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি, তখন চাইতাম স্কুলের প্রধান শিক্ষক হব। যখন হাইস্কুলে গেলাম তখন চেয়েছি হাইস্কুলের শিক্ষক হব। এভাবেই জীবন এগিয়েছে। নির্দিষ্ট লক্ষ্য ছিল না।
তিনি বলেন, এসএসসি পরীক্ষার পর ভ্যানে সবজি বিক্রি করে সংসারের খরচ জোগাড় করছিলাম। ফলাফলের দিন শুনলাম গোল্ডেন এ প্লাস পেয়েছি। আর আমার স্কুল হতে আমার ব্যাচই প্রথম এ + পেল। স্যাররাও খুব খুশি। কিন্তু তখন সবজি বিক্রিতেই মনযোগী।
ডা. আল মামুন আরও জানান, সেসব কথা মনে করে আবেগে সবাইকে বলি আমি রিকসাচালকের দরিদ্রপীড়িত সংসারের সন্তান হয়ে আজ এতদূর এসেছি। তাতে অনেকেই বিষয়টাকে নেতিবাচক হিসেবে নিচ্ছে। কিন্তু আমি মনে করি, এটা সমাজের অন্যসব দরিদ্র শিক্ষার্থীদের জন্য একটি বার্তা। তারাও যেন এভাবে সংগ্রাম করে সমাজে প্রতিষ্ঠা পায়। দেশের জন্য কিছু করতে পারে। সরকারিভাবে প্রায় ৫ হাজার চিকিৎসক নিয়োগের মতো এতো বড় একটি পদক্ষেপের বিষয়ে বর্তমান সরকার ও বিশেষকরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানান ডা. আল মামুন।