মামুনুল হককে গ্রে’ফতার করার আল্টিমেটাম
আগামী ৪ এপ্রিলের মধ্যে হেফাজতের কেন্দ্রীয় নেতা মাওলানা মামুনুল হককে গ্রে’ফতার করার আল্টিমেটাম দিয়েছে জাতীয় ওলামা মাশায়েখ শেখ ঐক্য পরিষদ। ব্রাহ্মণবাড়িয়া হরতালে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের অভিযোগে এই আল্টিমেটাম দেয়া হয়। আজ সোমবার (২৮ মার্চ) রাজধানীর প্রেসক্লাবে জাতীয় ওলামা মাশায়েখ শেখ ঐক্য পরিষদ পক্ষ থেকে এক মানববন্ধনে এ আল্টিমেন্টাম দেন পরিষদের নেতাকর্মীরা।
হরতালে ভাঙচুরের কারণে ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া। লণ্ডভণ্ড হয়ে গিয়েছে বিভিন্ন স্থাপনা। পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে সরকারি বেসরকারি অন্তত অর্ধশত স্থাপনা।হেফাজতের দেওইয়া আগুনে পুড়ে গেছে রেলওয়ে স্টেশনের সার্ভার রুম। যার ফলে সেখানে ট্রেন থামছে না। রেলওয়ের স্লিপার তুলে ফেলা হয়েছে। উপজেলা ভূমি অফিসসহ বেশ কয়েকটি সরকারি দপ্তর এখন অনেকাংশেই পরিত্যক্ত।
এর আগে হেফাজতে ইসলামের ডাকা সকাল-সন্ধ্যা হরতাল চলাকালে রবিবার (২৮ মার্চ) দুপুর পৌনে ১টায় রাজধানীর বাইতুল মোকাররমের উত্তর গেটে আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তব্য দিয়েছেন হেফাজতে ইসলামের ঢাকা মহানগরের সহসভাপতি ও খেলাফত মজলিশের শায়খুল হাদিস মামুনুল হক। তিনি বলেন, আর যদি আমার কোনও ভাইকে হত্যা করা হয়, যদি গুলি চলে, আর যদি কোনও ভাইয়ের রক্ত ঝরে, তাহলে টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া পুরো বাংলাদেশ অচল করে দেওয়া হবে।
মামুনুল হক বলেন, আমার শান্তিপ্রিয় ভাইদের ওপর পুলিশ-বিজিবি নির্বিচারে গুলি ছুড়েছে। মধুগড়ের বর্ষীয়ান আলেম হেফাজতের নায়েবে আমীর মাওলানা আব্দুল হামিদ গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। এটা কলঙ্কজনক অধ্যায় রচনা করল। এভাবে গুলি করে হেফাজতকে দমানো যাবে না, বরং আপনি আপনার গদি টেকাতে পারবেন না। তিনি আরও বলেন,আমরা শান্তিশৃঙ্খলার সঙ্গে কর্মসূচি পালন করছি। রক্ত ঝড়িয়ে রাজপথ থেকে হেফাজত কর্মীদের সরানো-দমানো যাবে না।
এর আগে শুক্রবার (২৬ মার্চ) জুমার নামাজের পর চট্টগ্রামের হাটহাজারী মাদ্রাসার ছাত্রদের বিক্ষোভ মিছিলকে কেন্দ্র করে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে ঘটনা ঘটে। মাদ্রাসা ছাত্রদের অভিযোগ, শান্তিপূর্ণ মিছিলে বিনা উস্কানিতে পুলিশ তাদের ওপর চড়াও হয় এবং এলোপাথাড়ি গুলি বর্ষণ করেছে। এ সময় চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে পড়ে। প্রত্যক্ষদর্শী, থানা পুলিশ ও মাদ্রাসা শিক্ষার্থীরা জানান, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বাংলাদেশ সফরের প্রতিবাদে শুক্রবার জুমার নামাজের পর দুপুর আড়াইটার দিকে হাটহাজারী মাদ্রাসার ছাত্ররা মাদ্রাসার সামনে থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করে। মিছিলটি মাদ্রাসা এলাকা অতিক্রম করার সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের বাঁধা এড়িয়ে হাটহাজারী থানার সমানে গেলে তারা ফের বাঁধার সম্মুখীন হয়।
এ সময় উত্তেজিত মাদ্রাসাছাত্ররা থানা কার্যালয় লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করতে শুরু করে। এক পর্যায়ে পুলিশ তাদের (মাদ্রাসা ছাত্র) ছত্রভঙ্গ করতে গুলি ছুঁড়লে বেশ কয়েকজন গুলিবিদ্ধ হন। তাদের চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এদের মধ্যে তিন ছাত্র ও একজন পথচারীসহ চারজন নিহত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে চমেক হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির এএসআই আলাউদ্দীন তালুকদার। তিনি জানান, সংঘর্ষের ঘটনায় আহত অনেককে হাসপাতালে আনা হয়। এর মধ্যে বিভিন্ন ওয়ার্ডে ভর্তি হওয়া চারজনকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক।
নিহতরা হলেন- হাটহাজারী মাদ্রাসার ছাত্র কুমিল্লা জেলার মো. রবিউল ইসলাম, মাদারীপুর জেলার মো. মেহরাজুল ইসলাম, ময়মনসিংহ জেলার মো. আব্দুল্লাহ মিজান এবং পথচারী হাটহাজারী উপজেলার মো. জসিম। এমপি ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেন, এটি একটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা। এ ঘটনায় যারা মৃত্যুবরণ করেছে তাদের জন্য আমি দুঃখ প্রকাশ করছি। এছাড়া বিষয়টি নিয়ে হাটহাজারী মাদ্রাসার শিক্ষা পরিচালক ও হেফাজতে ইসলামের আমির আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী সঙ্গে কথা হয়েছে। ওনি চট্টগ্রামের পটিয়া থেকে হাটহাজারীতে আসলে আমরা এ ব্যাপারে আলোচনায় বসবো।
সূত্র- বিডি২৪লাইভ