মালয়েশিয়ায় অবৈধদের সাধারণ ক্ষমার শেষ তারিখ ঘোষণা !!
মালয়েশিয়ার সরকারের নেয়া অবৈধ প্রবাসীদের সাধারণ ক্ষমা সংক্রান্ত ‘ব্যাক ফর গুড’ কর্মসূচি শেষ হচ্ছে আজ। এ কর্মসূচির আওতায় দেশে ফিরে আসছেন ৫০ হাজারের বেশি বাংলাদেশী। তবে ফিরতে চাইলেও এখন পর্যন্ত বিশেষ পাস সংগ্রহ করতে পারেননি অন্তত আরো ১০ হাজারের বেশি বাংলাদেশী।
মূলত শেষ সময়ে উড়োজাহাজের টিকিট সংগ্রহ করতে না পারায় মালয়েশীয় ইমিগ্রেশনে বিশেষ পাসের জন্য আবেদনই করতে পারেননি তারা।
প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, গত ১ আগস্ট থেকে ‘ব্যাক ফর গুড’ কর্মসূচি চালু করে মালয়েশিয়া সরকার। কিন্তু সেখানে অবৈধভাবে বাস করা বাংলাদেশীদের বড় একটা অংশ শেষ সময়ে এ সুযোগ নেয়ার অপেক্ষায় ছিলেন।
এতে ডিসেম্বরে হঠাৎ করে বেড়ে যায় উড়োজাহাজের টিকিটের চাহিদা। এ কারণে টিকিটের দামও বেড়ে যায় অনেক। ফলে টিকিটের উচ্চমূল্যের কারণে ‘ব্যাক ফর গুড’ কর্মসূচির আওতায় আসতে চেয়েও মালয়েশীয় ইমিগ্রেশন থেকে বিশেষ পাস নিতে ব্যর্থ হবেন অন্তত ১০ হাজার বাংলাদেশী।
মন্ত্রণালয়ের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, মালয়েশীয় ইমিগ্রেশনে বিশেষ পাসের জন্য আবেদন করতে হলে উড়োজাহাজের টিকিটসহ সশরীরে প্রার্থীকে ইমিগ্রেশন সেন্টারে উপস্থিত হতে হয়। টিকিটের মূল্য কমাতে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ১০ হাজার টাকা করে জনপ্রতি ভর্তুকি দেয়ার উদ্যোগ নেয়া হলেও সে সুবিধা নিতে পারেনি অধিকাংশই।
কেবল বিমানের কুয়ালালামপুর অফিস থেকে ভর্তুকির এ টিকিট সংগ্রহের বাধ্যবাধকতা থাকায় এ পর্যন্ত পাঁচশর কিছু বেশি শ্রমিক এ সুযোগ নিতে পেরেছেন। বাকিরা উচ্চমূল্যেই টিকিট সংগ্রহ করতে বাধ্য হয়েছেন। অন্যদিকে সামর্থ্য না থাকায় যারা টিকিট কাটতে পারছেন না, তারাই বিশেষ পাস নিতে ব্যর্থ হচ্ছেন।
বর্তমানে বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার মধ্যে সরাসরি ফ্লাইট পরিচালনা করছে পাঁচটি এয়ারলাইনস। দেশীয় এয়ারলাইনসগুলোর মধ্যে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস সপ্তাহে ১৪টি ও ইউএস-বাংলা এয়ারলাইনস সপ্তাহে সাতটি ফ্লাইট পরিচালনা করছে। অন্যদিকে বিদেশী এয়ারলাইনসের মধ্যে মালয়েশিয়া এয়ারলাইনসের ১৪টি, মালিন্দো এয়ার ১৩টি ও এয়ার এশিয়ার সপ্তাহে সাতটি ফ্লাইট রয়েছে।
মালয়েশিয়া থেকে অবৈধ শ্রমিকদের দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য ১৪ ডিসেম্বর থেকে কুয়ালালামপুর-ঢাকা রুটে ১৬টি অতিরিক্ত ফ্লাইট দিয়েছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস। একই সঙ্গে এ ১৬টি ফ্লাইটে বাংলাদেশ সরকার টিকিটপ্রতি ১২ হাজার টাকা করে ভর্তুকি দিয়েছে। এর মধ্যে বাংলাদেশী কর্মীদের প্রতিটি টিকিটে বাংলাদেশ বিমান ২ হাজার টাকা ছাড় দিয়েছে। আর ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের তহবিল থেকে ভর্তুকি দেয়া হয় ১০ হাজার টাকা করে। তবে এ ভর্তুকি পাওয়ার শর্ত হলো, অবশ্যই ট্রাভেল পারমিট থাকতে হবে। এছাড়া ভর্তুকির টিকিট বিমানের কুয়ালালামপুরের অফিস থেকে সরাসরি কিনতে হচ্ছে। এজেন্টের কাছ থেকে কেনার সুযোগ দেয়নি বিমান।
শুধু টিকিট সংকটের কারণে অবৈধ বাংলাদেশীরা বিশেষ পাস নিতে ব্যর্থ হচ্ছেন বলে মানতে রাজি নয় কুয়ালালামপুরে বাংলাদেশ হাইকমিশন। হাইকমিশনের শ্রম কাউন্সেলর মো. জহিরুল ইসলাম গতকাল সন্ধ্যায় বণিক বার্তাকে বলেন, ৩১ ডিসেম্বর ( আজ) ‘ব্যাক ফর গুড’ কর্মসূচি শেষ হচ্ছে। তবে যারা এরই মধ্যে বিশেষ পাস সংগ্রহ করেছেন, তারা যেতে পারবেন। ধারণা করা হচ্ছে, এ সংখ্যা ৫০ হাজার ছাড়িয়ে যাবে। আর কতজন এখনো পাস নিতে পারেননি, তার সঠিক পরিসংখ্যান এখনই বলা সম্ভব না।
তিনি বলেন, মালয়েশিয়া সরকার পাঁচ মাস আগে এ কর্মসূচি শুরু করেছে। নানা প্রচারণা সত্ত্বেও শুরুর কয়েক মাস অবৈধ হয়ে যাওয়া প্রবাসীরা বিষয়টিকে গুরুত্ব দেননি। শেষ মুহূর্তে সবাই একসঙ্গে ভিড় করেছেন। চাহিদা বাড়ায় স্বাভাবিকভাবেই টিকিটের মূল্য বেড়েছে। এটি এয়ারলাইনসগুলোর বিশ্বব্যাপী চর্চা। অন্যদিকে ইমিগ্রেশন কাউন্টারগুলোতে ১৫টি দেশের হাজার হাজার অবৈধ অভিবাসী লাইনে দাঁড়াচ্ছেন। কিন্তু ইমিগ্রেশন অফিসগুলোরও নির্দিষ্ট ক্যাপাসিটি রয়েছে। একটি ইমিগ্রেশন অফিস থেকে দৈনিক ইস্যু করা হয় গড়ে ৪০০টি বিশেষ পাস। এ কারণে অনেকেরই পাস পেতে সমস্যা হচ্ছে।
ভিন্ন পন্থায় মালয়েশিয়ায় যাওয়ার পাশাপাশি বৈধ পথে গেলেও ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ায় অবৈধ হয়েছেন এমন প্রবাসীদের বিনা হয়রানিতে দেশে ফেরার সুযোগ দিয়েছে মালয়েশিয়া সরকার। ‘ব্যাক ফর গুড’ শীর্ষক এ কর্মসূচির আওতায় ইমিগ্রেশন কাউন্টার থেকে অবৈধ শ্রমিকদের দেয়া হচ্ছে দেশ ত্যাগের বিশেষ পাস। তবে এজন্য আবেদনকারীকে সশরীরে উপস্থিত হয়ে মালয়েশিয়ার ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষের কাছে পাসপোর্ট বা ট্রাভেল ডকুমেন্ট এবং নিশ্চিত ফ্লাইট টিকিটসহ আবেদন করতে হয়।
জরিমানা ও বিশেষ পাস বাবদ জমা দিতে হয় মোট ৭০০ রিঙ্গিত। আবেদনের এক কর্মদিবসের মধ্যেই বহির্গমনের অনুমতি হাতে পান আবেদনকারীরা। এক্ষেত্রে আবেদনকারীর অনুমতি পাওয়ার সাতদিনের মধ্যেই মালয়েশিয়া ত্যাগের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এ কর্মসূচি মালয়েশিয়ার সাবা, সারাওয়াক ও লাবুয়ান ছাড়া অন্য ১১টি প্রদেশে কার্যকর করা হয়। এজন্য মালয়েশিয়ায় সব মিলিয়ে ৮০টি কাউন্টার খোলা হয়। অবৈধ অভিবাসীরা প্রতিদিন এসব কাউন্টারে উপস্থিত হয়ে আউটপাস সংগ্রহ করছেন।
মালয়েশিয়া ইমিগ্রেশন সূত্রে জানা গেছে, গত আগস্টে শুরু হওয়া সাধারণ ক্ষমার সুযোগ নিয়ে ১২ ডিসেম্বর পর্যন্ত নিজ নিজ দেশে ফিরেছেন বিভিন্ন দেশের ১ লাখ ৩৮ হাজার ৯০১ জন অবৈধ অভিবাসী। এর মধ্যে বাংলাদেশীর সংখ্যা ৩৮ হাজার ৭৩৪। এছাড়া ভারতের ২২ হাজার ৯৬৪, মিয়ানমারের ৬ হাজার ৯২৩ ও ইন্দোনেশিয়ার ৫৩ হাজার ৩২৮ জন।