মুসলিম শিক্ষার্থীদের নি’র্যাতন করায় গর্জে উঠেছে ভারতের ছাত্রসমাজ !!
নাগরিত্ব আইনের বিরোধিতায় তুলকালাম চলছে ভারতজুড়ে। এর মাঝেই জামিয়া মিলিয়া ও আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওপর আক্রমণ চালিয়েছে পুলিশ।
এর প্রতিবাদে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা সোমবার কলকাতাসহ রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় দফায় দফায় মিছিল করেন। শান্তিনিকেতনে বিশ্বভারতীর শিক্ষার্থীদের মিছিলে ছিলেন অনেক শিক্ষক-শিক্ষিকাও।
রবিবার বিকেলে দিল্লির জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র-পুলিশের এই সংঘর্ষ একজোট করে দিয়েছে ভারতের নানা প্রান্তের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিকে। আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা রবিবার রাতেই জামিয়ার পাশে থাকার বার্তা দিতে রাস্তায় নেমেছিলেন। সোমবার তাতে সামিল হল লখনৌ, মুম্বই থেকে শুরু করে কর্নাটক, তামিলনাড়ু।
পড়ুয়ারা যেখানে পাশে থাকার বার্তা দিচ্ছেন, সেখানে ছাত্র প্রতিবাদে মাওবাদী, বিচ্ছিন্নতাবাদী ঢুকে গিয়েছে বলে নয়া বিতর্কে জড়ালেন অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। কথা হচ্ছিল বাজেট নিয়ে, সেখানে জামিয়া ও আলিগড়ের পরিস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন করায় নির্মলার জবাব, ‘গত রাতে জামিয়ায় কী হয়েছে, আমি জানি না।
তবে ছাত্র প্রতিবাদে জিহাদি, মাওবাদী, বিচ্ছিন্নতাবাদীদের ঢুকে পড়া নিঃসন্দেহে চিন্তার।’ তবে কি পড়ুয়াদেরই মাওবাদী বলছেন তিনি? মন্ত্রী কোনও ব্যাখ্যায় না-গেলেও সোশ্যাল মিডিয়ায় সমালোচনার বন্যা।
সোমবার সকালে সংঘর্ষের পরিস্থিতি তৈরি হয় লখনৌয়ের নাদওয়া কলেজে। সেখানে সিএএ-র বিরুদ্ধে প্রতিবাদে মিছিলের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন পড়ুয়ারা। কিন্তু পুলিশ বিশ্ববিদ্যালয়ের গেট বন্ধ করে তাঁদের আটকে দেয়।
ক্ষুব্ধ পড়ুয়ারা পুলিশকে লক্ষ করে পাথর ছোড়েন বলে অভিযোগ। পুলিশও পাল্টা কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে। কলেজ ক্যাম্পাসের যে ছবি সামনে এসেছে, তাতে দেখা যাচ্ছে ক্যাম্পাসের ভিতর থেকে শয়ে শয়ে পড়ুয়া গেট খোলার চেষ্টা চালাচ্ছেন, আর পুলিশ ব্যারিকেড তৈরি করে তা আটকে রেখেছে।
দুপুরের দিকে লখনৌয়ের পুলিশ সুপার কলানিধি নৈথানি অবশ্য জানান, শ’দেড়েক পড়ুয়া স্লোগান তুলে প্রতিবাদ জানাচ্ছিল। পুলিশি হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়েছে, পড়ুয়ারা তাঁদের ক্লাসে ফিরে গিয়েছেন।
কিন্তু বিক্ষোভে ছেদ পড়েনি। মুম্বইয়ের ‘টাটা ইনস্টিটিউট অফ সোশ্যাল সায়েন্সেস’-এর পড়ুয়া ও শিক্ষকরা এ দিন জামিয়ার পড়ুয়াদের সমর্থনে ক্লাস বয়কট করেন। একই চিত্র মুম্বই বিশ্ববিদ্যালয়েও।
তামিলনাড়ুর কলেজ পড়ুয়ারা ‘স্টুডেন্টস ফেডারেশন অফ ইন্ডিয়া’ (এসএফআই)-এর সঙ্গে মিলে চেন্নাইয়ের রেলওয়ে টার্মিনালের কাছে প্রতিবাদ জানান। মাদ্রাজ আইআইটি-র পড়ুয়ারা জামিয়ার পড়ুয়াদের সমর্থনে ক্যাম্পাসে মিছিল বের করেন। তিরুভান্নামালাইয়ে আর্টস কলেজের পড়ুয়ারা পুলিশি লাঠিচার্জের বিরুদ্ধে সোচ্চার হন।
কর্নাটকে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমেছিলেন হাজার হাজার মানুষ। টাউন হলে প্রতিবাদ সভায় সামিল হন জয় বিশ্ববিদ্যালয়, ‘ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ সায়েন্স’ এবং ‘ন্যাশনাল ল’স্কুল ইউনিভার্সিটি’র পড়ুয়ারা।
উত্তরপ্রদেশের বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয় এবং চণ্ডীগড় বিশ্ববিদ্যালয়ও সিএএ-র প্রতিবাদে সরব হয়। আইআইএম আমেদাবাদের পড়ুয়ারা মিছিল বের করেন।
রবিবার জামিয়ার পড়ুয়াদের উপর পুলিশি হামলা এবং সিএএ-র প্রতিবাদ দেখাতে গিয়ে আক্রান্ত হয়েছিলেন আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের (আমু) পড়ুয়ারাও। তাঁদের উপর পুলিশি লাঠিচার্জের অভিযোগ ওঠে। এই অবস্থায় আলিগড়ের ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল।
তা মঙ্গলবার অবধি বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। মঙ্গলবার বন্ধ থাকবে আলিগড়ের সব স্কুল-কলেজও। অশান্ত পরিস্থিতিতে ‘ইন্দিরা গান্ধী ন্যাশনাল ওপেন ইউনিভার্সিটি’ তাদের পরীক্ষা কেন্দ্র জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অন্যত্র সরিয়ে নিয়েছে।
দেশজুড়ে প্রতিবাদের মধ্যে কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়নমন্ত্রী রমেশ পোখরিয়াল নিশাঙ্ক পড়ুয়াদের হিংসা থেকে দূরে থাকতে এবং ক্যাম্পাসে শান্তি বজায় রাখতে আবেদন জানিয়েছেন। তাতে ছেদ পড়ছে না প্রতিবাদে।
এরই মাঝে সোমবার বিকেলে জামিয়াতে উপস্থিত হন বিশিষ্ট আইনজীবী প্রশান্ত ভূষণ ও তাঁর সহযোগীরা৷ মঙ্গলবার দেশের শীর্ষ আদালতে জামিয়া নিয়ে দায়ের হওয়া মামলার শুনানি৷ মামলা করা হয়েছে বিশিষ্ট আইনজীবী ইন্দিরা জয়সিং ও তাঁর সতীর্থ আইনজীবীদের তরফে৷ হাই প্রোফাইল হয়ে ওঠা মামলার শুনানির আগেই জামিয়ার পড়ুয়াদের থেকে রবিবারের পুরো পরিস্থিতিটা হাতে কলমে জেনে নেন প্রশান্ত ভূষণ৷