‘যুদ্ধ করেও রাজাকারের তালিকায় নাম, বেঁচে থেকে লাভ কি’ !!
গেজেটভুক্ত মুক্তিযোদ্ধা হয়েও স্বাধীনতার ৪৮ বছর পর প্রকাশিত রাজাকারের তালিকায় নিজের ও তার মায়ের নাম দেখে হতাশা ব্যক্ত করেছেন অ্যাডভোকেট তপন কুমার চক্রবর্ত্তী।
এ নিয়ে আজ মঙ্গলবার বরিশালের ফকিরবাড়ি এলাকায় বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ) আয়োজিত এক প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ সমাবেশে কথা বলতে গিয়ে তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন।
অ্যাডভোকেট তপন চক্রবর্তী বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধ করেও বিজয়ের ৪৮ বছর পর রাজাকারের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছি। এখন আর বেঁচে থেকে লাভ কি? এ তালিকা বাতিল করে রাষ্ট্রকে ক্ষমা চাইতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘রাজাকারের তালিকায় আমি ও আমার মায়ের নাম অন্তর্ভুক্তির পেছনে বড় ষড়যন্ত্র রয়েছে।’
সমাবেশ শেষে মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট তপন চক্রবর্তী প্রকাশিত রাজাকারের তালিকায় অগ্নিসংযোগ করেন।
তপন চক্রবর্তীর মেয়ে ডা. মনীষা চক্রবর্তী বাসদ বরিশাল জেলা সদস্য সচিব। রাজাকারের তালিকায় বাবা এবং দাদির নাম আসার ঘটনাকে নিজের ‘রাজনীতির খেসারত’ হিসেবে আখ্যা দেন মনীষা।
বরিশাল বাসদের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে ডা. মনীষা চক্রবর্তী বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ জায়ার (স্ত্রী) নাম রাজাকারের তালিকায় অন্তর্ভুক্তি করা শুধু একটি মুক্তিযোদ্ধা শহীদ পরিবারের সাথেই নয়, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী সকল মানুষের জন্য লজ্জাজনক ঘটনা। বরিশালে গণমানুষের অধিকার নিয়ে লড়াইয়ের দল বাসদের সদস্য সচিব ডা. মনীষা চক্রবর্তীর পরিবারের সঙ্গে এমন ঘটনা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রনোদিত।’
এ সময় তিনি আরও বলেন, ‘যে মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয় তপন চক্রবর্তীকে মুক্তিযোদ্ধা গেজেটে অন্তর্ভুক্ত করেছে সেই একই মন্ত্রণালয় তাকে রাজাকারের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছে। তপন চক্রবর্তীর মা, শহীদ সুধীর চক্রবর্তীর সহধর্মীনি প্রয়াত উষা চক্রবর্তীকেও একই তালিকায় অন্তর্ভুক্তি করা হয়েছে। অথচ তিনি মৃত্যুর আগ পর্যন্ত মুক্তিযুদ্ধের আদর্শে বিশ্বাসী নারী হিসেবে সর্বমহলে সুপরিচিত ছিলেন।’
লিখিত বক্তব্যে ডা. মনীষা অভিযোগ করেন, ‘বরিশালে ক্ষমতাসীন দলের অনিয়ম দুর্নীতির বিরুদ্ধে বাসদ একমাত্র সোচ্চার কণ্ঠ হওয়ায় আমাদের ওপর দমন নিপীড়ন চালানোর চেষ্টা চলছে। আমরা মনে করি রাজাকারের তালিকায় মুক্তিযোদ্ধা তপন চক্রবর্তীর পরিবারের সদস্যদের অন্তর্ভুক্তির বিষয়টি বাসদের কণ্ঠরোধ করার নগ্ন ও ন্যাক্কাজনক রুপ। বিজয়ের মাসে মুক্তিযোদ্ধাদের নাম রাজাকারের তালিকায় নিয়ে আওয়ামী লীগ সরকার মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে কলঙ্কিত করেছে।’
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়নের জন্য রাজাকারের তালিকা করা জরুরি। কিন্তু মহান বিজয় দিবসে রাজাকারের যে তালিকা মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয় প্রকাশ করেছে তা প্রশ্নবিদ্ধ। এ সময় একজন গেজেটভুক্ত মুক্তিযোদ্ধাকে কোনো রকম যাচাই-বাছাই ছাড়াই রাজাকার বানিয়ে দেওয়ার প্রক্রিয়ার তদন্ত দাবি করা হয়।
একই সঙ্গে এই রাষ্ট্রীয় অপমানের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদেরও শাস্তির দাবি করে বলা হয়, মুক্তিযুদ্ধের বুলি আউরিয়ে রাজনৈতিক হীন উদ্দেশ্য চরিতার্থ করার জন্য এ ধরনের চক্রান্ত করা হয়েছে। বিষয়টি আইনগতভাবে মোকাবিলা করা হবে।
সূত্রঃ আমাদের সময়