যেভাবে আমি ৭ দিনেই করোনা পজেটিভ থেকে নেগেটিভ হলাম- ঢাবি ছাত্র !!
করোনাভা’ইরাসের এই ভ’য়াবহ দিনগুলোতে সারাদিন এটাসেটা নিয়ে কাজ করে যাওয়া ছেলেটা গত ৮ এপ্রিল থেকে হঠাৎ বাইরে যাচ্ছেনা! মাঠে থেকে কাজগুলো করছে না।কারণ ছিল আমার কোভিড-১৯ “পজিটিভ” আসা। ৬-৭ দিনের মধ্যেই আল্লাহর রহমত আর আপনাদের দোয়ায় কোভিড-১৯ নেগেটিভ করতে পেরেছি।
ব্যাপারটা কিছুটা টের পেয়ে অনেক ভাই, বোন, বন্ধুবান্ধব নক দিয়েছেন। খোঁজ খবর নিয়েছেন। আপনাদের দোয়া আর ভালবাসায় আমি এখন পুরোপুরি সুস্থ।অসুস্থতার এই সময়টাতে বাসায় থেকে যতটুকু পেরেছি আমার প্রিয় মাতৃভূমির অসহায় মানুষগুলোর পাশে দাঁড়িয়েছি। চেষ্টা করে যাচ্ছি কিছু করার।
আমার ভিডিওটা শেয়ার করলাম এজন্য যে, আপনাদের যেন কিছুটা উপকারে আসে। পজেটিভ আসার ৬ দিনের মধ্যে আল্লাহর রহমতে নেগেটিভ করে ফেলার পেছনে কী কী করেছিলাম। সে কথায় এখানে বলেছি। দেখবেন, আশা করছি উপকৃত হবেন। সচেতন থাকুন, সুস্থ থাকুন।
যেভাবে আমি সুস্থ হলামঃ
আমার করোনাভা’ইরাস পজেটিভ এসেছিল। সেই পজেটিভ থেকে আজকে রেজাল্ট আসে নেগেটিভ। পজেটিভ হওয়ার পর থেকে গত ৬-৭দিন বাসায় ছিলাম। আজকে আল্লাহ্র রহমতে নেগেটিভ এসেছে।আমি আসলে এই জায়গাটা থেকে আমার অভিজ্ঞতা জানাতে চাইছি। পজেটিভ থেকে নেগেটিভে নিয়ে আসতে হলে আসলে আমাদের কী করণীয়। বা আমার ক্ষেত্রে কোন কোন বিষয়গুলো কাজ করেছে?
আপনারা জানেন ইতোমধ্যেই করোনাভা’ইরাস বাংলাদেশে ব্যপকহারে বিস্তার লাভ করছে। আমাদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪৩ হাজার শিক্ষার্থী রয়েছে। তাদের অধিকাংশ শিক্ষার্থী নিজ নিজ জায়গা থেকে এলাকায় জনকল্যাণমূলক কাজ করছে। সেবামূলক কাজ করছে। ত্রাণ বিতরণ করছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হিসেবে আমিও তার ব্যতিক্রম ছিলাম না। আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসেই অবস্থা করেছি। বিগত কয়েকদিনে বেশ কয়েক জায়গায় ত্রাণ বিতরণ করেছি। টিএসসিতে ত্রাণ বিতরণ কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছি। নিজের উদ্যোগে ত্রাণ বিতরণ করেছি।
তাছাড়া আপনারা জানেন, ঢাকাবিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে তিন-চার শয়ের মতো অবলা কুকুর বিড়াল রয়েছে। এইসব অবলা প্রাণীদের গত মার্চ মাসের ২১ তারিখ থেকে খাওয়ানোর কাজটা আমি করে আসছিলাম কয়েকজন ভলেন্টিয়ারসহ। এই কুকুর বিড়ালগুলোকে দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত দেখাশোনা করা। তারপর ত্রাণ বিতরণ করা। হ্যান্ড স্যানিটাইজারসহ অন্যান্য জিনিষ বিতরণ কাজে নিযুক্ত ছিলাম।
এই কাজের জন্য অধিকাংশ সময় আমার ঘরের বাইরে থাকতে হয়েছে। যে সময়ে আসলে আমার ঘরে থাকা উচিৎ ছিল।আমার বাবা মা দেশের বাড়ি থেকে প্রতিদিন ফোন দিতেন বাসায় যাবার জন্য। একটা পর্যায় সিদ্ধান্ত নিলাম বাসায় যাব। কিন্তু মনে হলো আমি টেস্ট করে তারপর যাব। টেস্ট করা ছাড়া ঢাকা থেকে আমি আমার এলাকায় যাব। একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে টেস্ট না করে জাওয়া উচিৎ হবে না।
সেই দায়বদ্ধতা থেকে টেস্ট করাতে গেলাম। অপ্রত্যাশিতভাবে আমার করোনাভা’ইরাস পজেটিভ চলে আসে। রাত ১২ টার দিকে আইইডিসিআর থেকে ফোন দিয়ে আমাকে বলে আপনার করোনাভা’ইরাস পজেটিভ।
পজেটিভ আসার পরে আমি সাথে সাথে যেটি করেছি সেটি হচ্ছে- আমার সাথে বিগত কয়েকদিন যারা ছিল তাদেরকে ফোন দিয়ে, ম্যাসেজ দিয়ে বিষয়টা জানিয়ে দেই। তাদের বলেছি সন্দেহ হলে আপনারা টেস্ট করাতে পারেন অথবা কোয়ারেন্টিনটা মানার চেষ্টা করেন। কারণ আমার জন্য কেউ আক্রান্ত হোক এটা আমি কখনই চাই না। আমার বিবেকবোধ থেকেও আমি সেটা করব না। আসা করি আপনারাও সেটা করবেন না।
আমার পজেটিভ আসে গত ৮ এপ্রিল। তারপর ১৪ এপ্রিল আবার স্যাম্পল দিয়ে আসি। আজ ১৫ এপ্রিল দুপুর বেলা আমাকে জানানো হয় করোনাভা’ইরাস নেগেটিভ।তো পজেটিভ থেকে নেগেটিভে আসলো কীভাবে সেটিই আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করতে চাই। আমি কী কী করেছি সেই অভিজ্ঞতা জানাতে চাই এই কারণে যে , অনেকেই আক্রান্ত হচ্ছেন। মৃত্যুবরণ করছেন। যারা মৃত্যুবরণ করছেন তাদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি।
আল্লাহ্ না করুক। যদি কেউ আক্রান্ত হয়ে যান, সেক্ষেত্রে কী করবেন? বা আমি কী করেছি- প্রথমে আমি নিজেকে একটি ঘরে একা আবদ্ধ করে ফেলি। আমার আশেপাশে কাউকে আসতে দেইনি। একেবারেই একা ছিলাম।
এরপর আমি প্রতিদিন যখন গোসল করতাম। তখন পানি গরম করে নিতাম। সেই পানিতে স্যাভলন মিশিয়ে গোসল করেছি। স্বাভাবিক ভাবেই স্যাভলন পানি দিয়ে গোসল করা ভালো। এই সময়টাতে অবশ্যই গরম পানিতে স্যাভলন মিশিয়ে গোসল করবেন। এটি জীবাণুনাশের জন্য অনেক ভালো কাজে দিবে।
এরপর আমি প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠেই ব্যায়াম করতাম। তার পরপরই গরম পানি দিয়ে গড়গড়া করতাম। গরম পানি যতটুকু গলায় সহ্য করা যায়। সেই পরিমান গরম পানি সাথে লবন দিয়ে গড়গড়া করতাম। প্রতিদিন দুপুরে এবং ঘুমানোর আগে করতাম। প্রতিদিন এটি ৩ বার করতাম।
আর একটি ব্যাপার যেটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ আমার কাছে মনে হয়েছে। বেশি কাজে দিয়েছে আমার মনে হয়। প্রতি ১ ঘন্টা পরপর গরম পানি খাওয়া। যতটা গরম আপনি সহ্য করতে পারেন। আমি ১ ঘন্টা পরপর এক-দুই গ্লাস করে গরম পানি খেতাম। আমার মনে হয় এটি খুব বেশি কাজে দিয়েছে আমার ভা’ইরাস দূর করার জন্য।
আর যেগুলো আমরা জানি- ১ ঘন্টা পরপর সাবান দিয়ে হাত ধোঁয়া ২০ সেকেন্ড সময় নিয়ে। যেটি আমি সব সময় করেছি। সব সময় সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে ফেলতাম। আমার কাপড়-চোপড়গুলো পরিষ্কার করে রাখতাম। রুমটা খুব ভালোভাবে স্যাভলন পানি দিয়ে প্রতিদিন পরিষ্কার করেছি।
আর খাবারের ক্ষেত্রে সব রকম খাবার খাওয়া যাবে। যেটা আইইডিসিআর থেকে আমাকে বলেছে। খাবার নিয়ে কোনো সমস্যা নেই। যেকোনো খাবার খেতে পারেন। তবে ভিটামিন সি টা বেশি রাখা ভালো। আমি ট্যাবলেট কেভিট –সি টা খেয়েছি। ১০ ট্যাবলেট থাকে। আমি ৬ টা খেয়েছি মাত্র। আর খাওয়া লাগে নি।এছাড়া কমলা লেবু, লেবুর শরবত, আপেল, মালটা, নাশপাতি। যেগুলো আমি খেয়েছি। এগুলো সবাই যে খেতে পারবে তা কিন্তু নয়। অনেক দরিদ্র লোকজনের পক্ষে সম্ভব নয়।
তো এক্ষেত্রে কোনো গরীব মানুষ যারা প্রত্যন্ত অঞ্চলের। তারা যদি কেউ আক্রান্ত হন। তাহলে তাদের বলব, আপনারা প্রতি ১ ঘন্টা পরপর সাবান পানি দিয়ে হাত ধুয়ে ফেলবেন। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকবেন। গরম পানি খাবেন। তিনবেলা গরম পানি দিয়ে গড়গড়া করবেন। যদি কারো কোনো কারণে পজেটিভ চলে আসে। ভ’য়ের কোনো কারণ নেই ইনশাআল্লাহ্ নেগেটিভ চলে আসবে।
এটা ছিল আমার অভিজ্ঞতা। আমার অভিজ্ঞতা থেকে বলতে চাই পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকুন। কারো ভা’ইরাস পজেটিভ হয়ে গেলেও ভ’য়ের কোনো কারণ নেই। একেবারেই ভেঙ্গে পড়ার কোনো কারণ নেই। শুধু সচেতন থাকুন। নিজেকে একটি রুমে আবদ্ধ করে ফেলুন। আর সবকিছু মেনে চলুন। পজেটিভ হলেও পরে নেগেটিভ চলে আসবে আল্লহর রহমতে। আমার যেমন ৫ -৬ দিন সময় লেগেছে । আপনাদেরও এমনই সময়ের ভেতরই ভালো হয়ে যাবে।
আর সবশেষে আপনাদের কাছে করজোড়ে অনুরোধ করি। দয়াকরে এই সময়টাতে ঘরে থাকুন। নিজে বাঁচুন, আপনার পরিবারকে বাঁচান। আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশকে বাঁচান।
লেখক: ইসতিয়াক আহমেদ হৃদয়, শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
অনুলিখন: শেখ সাইফ