যেভাবে দেড় যুগ পর মাকে খুঁজে পেলেন হাসি !!
দাদির সঙ্গে ট্রেনে ওঠে পাঁচ বছরের হাসি। রাজবাড়ীর খানখানাপুর রেলস্টেশন থেকে তারা যাচ্ছিল রাজশাহী। সেখানে হাসির দাদাবাড়ি। বিপত্তি বাধল ট্রেনেই। ঘুম ভেঙে হাসি দেখে, পাশে দাদি নেই। শুরু করে কান্নাকাটি। আশপাশের লোকজন তাকে নিয়ে যায় সরকারি আশ্রয়কেন্দ্র রাজশাহীর ছোটমনি নিবাসে। এ ঘটনা ১৮ বছর আগের। ঠিকানা বলতে না পারায় এরপর আর কখনোই মায়ের মুখ দেখতে পায়নি হাসি।
বর্তমানে সরকারি চাকুরে হাসির পরিবারকে কিছুদিন ধরে হন্য হয়ে খুঁজছিলেন স্বামী রায়হান। অবশেষে সন্ধান পাওয়া গেছে হাসির পরিবারের। হাসি ফিরে পেয়েছেন জন্মদাতা মাকে। গতকাল শনিবার (২২ নভেম্বর) এক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে হাসিকে স্বজনদের কাছে তুলে দেন শুভসংঘের সদস্যরা। অনুষ্ঠানে হাসির পরিবারের হাতে উপহার তুলে দেন রাজবাড়ীর জেলা প্রশাসক দিলসাদ বেগম ও পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমানসহ আগত অতিথিরা। পরে সন্ধ্যায় রাজবাড়ীর মল্লিকপাড়া গ্রামে মায়ের দেখা পান হাসি। এ সময় একে অন্যকে জড়িয়ে ধরে আনন্দের অশ্রুজল ফেলেন তাঁরা। সেই সময় সেখানে উপস্থিত শত শত মানুষও কেঁদে ফেলে।
হাসি বর্তমানে গাইবান্ধা সরকারি শিশু পরিবারে (বালক) অফিস সহকারী হিসেবে কর্মরত আছেন। মাসখানেক আগে নাটোরের নলডাঙ্গা উপজেলার চেঁওখালী গ্রামের রায়হান হাসান তুষারের সঙ্গে তিনি ঘর বেঁধেছেন। বিয়ের পর থেকে রায়হান তাঁর স্ত্রীর পরিবার খোঁজার চেষ্টা শুরু করেন। হাসি তাঁর মা-বাবা-নানা-মামার নাম বলতে পারলেও ঠিকানা বলতে পারছিলেন না। তবে নানাবাড়ি রাজবাড়ীর খানখানাপুর হতে পারে বলে ধারণা করেন।
আর স্বামীর হাতে তুলে দেন ছোটবেলার দুটি ছবি। সপ্তাহ দুয়েক আগে হাসির পরিবারের খোঁজে দেশের একটি জাতীয় দৈনিকের রাজবাড়ী প্রতিনিধিকে ফোন দেন রায়হান। সেই সময় হাসির হারিয়ে যাওয়ার ঘটনাটি ফেসবুক পেজে প্রকাশ করা হয়। এ খবরে এগিয়ে আসেন রাজবাড়ী শহরের গৃহবধূ পারভীন বেগম।
তাঁর বাড়ি রাজবাড়ী সদর উপজেলার খানখানাপুর ইউনিয়নের মল্লিকপাড়া গ্রামে। তিনি ছোটবেলায় শোনা হাসির হারিয়ে যাওয়ার ঘটনা শুভসংঘের সদস্যদের জানান। তাঁর তথ্যের ভিত্তিতে মল্লিকপাড়া গ্রামে হাসির নানাবাড়ি খুঁজে বের করা হয়। সেখানে ডেকে আনা হয় হাসির মা খাদিজা বেগমকে। হাসি বেঁচে আছে—এ খবর শুনে হাসির মা ও নানি ফেলেন আনন্দ অশ্রু, জড়ো হয় এলাকার লোকজন। তখনই মায়ের সঙ্গে কথা বলিয়ে দেওয়া হয় হাসিকে।