রাতে নদীতে আটকে পড়ে ৯৯৯- এ ফোন, যা ঘটল…
চারদিকে ঘুটঘুটে অন্ধকার। বন্ধ হয়ে গেছে নৌকার ইঞ্জিন। বিপদগ্রস্ত তিন যুবক কি করবে বুঝে উঠতে পারছিলেন না। অগ্যতা ফোন করলেন জরুরি সেবার ৯৯৯ নম্বরে। তাদের উদ্ধার করে নৌ-পুলিশ। যার যার বাড়িতে ফেরত পাঠানো হয়েছে তাদের।
নৌ-পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ফরিদা পারভীন এসব কথা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘গতকাল (শুক্রবার) ঘড়ির কাঁটায় তখন রাত ৮টা ২০ মিনিট। হঠাৎ আইসি চামটাঘাটের মোবাইল ফোন বেজে ওঠে। বাংলাদেশ পুলিশের জরুরি সেবায় নিয়োজিত হট লাইন ৯৯৯ থেকে একটি কল। দ্রুত রিসিভ করতেই মুঠোফোনের অপর প্রান্ত থেকে জানায়, কিছু যুবক নদীতে বিপদগ্রস্ত। তাদের সাহায্য প্রয়োজন। এরপর ডিআইজি নৌ-পুলিশের সার্বিক নির্দেশনায় সদস্যরা সময়ক্ষেপণ না করে দ্রুত বিপদ আক্রান্ত যুবকদের উদ্ধার করতে বেরিয়ে পড়ে।’
পুলিশ সুপার বলেন, ‘যে নম্বরটি নৌ-পুলিশকে দেওয়া হয়েছিল তাতে ফোন করে শুনতে পায় কাঁদো কাঁদো কণ্ঠ। ভয় আর বিপদের আশঙ্কায় ঠিকভাবে কথা বলতে পারছিল না মোখলেস নামে এক তরুণ। তিনি ফোনে জানা, তারা নদী মধ্যে আছে এবং তীর কোন দিকে বুঝতে পারছে না। এদিকে নৌকার ইঞ্জিনটাও নষ্ট হয়েছে। ওদিকে ডাকাতির ভয়ে তাদের প্রাণ যায় যায় অবস্থা!’
ফরিদা পারভীন বলেন, ‘তরুণ্যকে ঘরে বেঁধে রাখতে পারেনি ফিরোজা মেডিকেলে পড়া কিছু ছাত্রকে। করোনাভাইরাসেও সময়ও নদী এবং নদীর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখতে তারা নৌকা নিয়ে বেরিয়েছিল। তাদের প্রস্তুতি ছিল সিংপুর যাওয়ার। কিন্তু বিপত্তি ঘটে তখনই, যখন মাঝ নদীতে নৌকা নষ্ট হয়ে যায় এবং পথও হারিয়ে ফেলে এসব যুবক। তারা যাত্রা করেছিল ধনু নদীতে সিংপুর হয়ে। কিন্তু ঘুরে ফেরার পথ এলোমেলো হয়ে যায়।’
যেভাবে উদ্ধার হলেন তিন যুবক : নৌ-পুলিশ অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বলেন, ‘উদ্ধাকারী পুলিশ সদস্যদের কোনো ভাবেই সঠিক জায়গা বলতে পারছিল না ওই যুবকরা। তাদের জিজ্ঞেস করা হয়েছিল তারা কি কিছু দেখতে পাচ্ছে, যা বেশ দূর থেকে দেখা যায়? উত্তরে যুবকেরা জানালো-একটি ব্রিজ। চামটাঘাট নৌ-পুলিশ স্টেশনের টিম আন্দাজ করে নেয় বরহাটি হাওড়ের ব্রিজ হবে হয়তো। কিন্তু ব্রিজের কাছাকাছি পৌঁছে কিছু দেখতে পায় না পুলিশ সদস্যরা। চারদিকে অন্ধকার। রাত যত গভীর হচ্ছে ডাকাতের ভয়ও তত বেড়ে যাচ্ছে। এদিকে ওই মোবাইল ফোনে কল করে এবার সেটি বন্ধ পায়। তাহলে এখন খুঁজে বের করবে কি করে?’
পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘সিগন্যাল লাইট দিয়ে ইশারা করে এবার নৌ-পুলিশ সদস্যরা। তবুও কোনো সাড়া নেই। বাঁশি ফুঁকে এবং হুইসেল দেয়। তবুও কোনো উত্তর পায়নি নৌ-পুলিশ সদস্যরা। পরে আরও কাছে যায় ব্রিজের, হেলার দিয়ে বলতে থাকে, “আমরা নৌ পুলিশ। আপনাদের বন্ধু। যদি আমাদের শুনতে পান তাহলে দয়া করে সাড়া দিন।” এবার হালকা চিৎকার শুনতে পায় পুলিশ সদস্যরা। কাছে গিয়ে দেখতে পায় যুবক ছেলেদের। পরে তাদের উদ্ধার করে আনা হয়।’
উদ্ধার হওয়া ওই তিন যুবক হলেন-মোখলেস (২১), শিপন মিয়া (২১) ও ইয়াসীন (১৯)। পরে নৌ-পুলিশ সদস্যরা তাদের বাবা মা ও আত্মীয় স্বজনদের কাছে নিরাপদে ফিরিয়ে দেয়। উৎস: দৈনিক আমাদের সময়।