রিমা’ন্ড চলাকালে ব্যবসায়ীকে হুমকি দিলেন পাপিয়া-সুমন !!
রিমান্ড চলাকালে থানায় বসেই যুব মহিলা লীগের বহিষ্কৃত নেত্রী শামীমা নূর পাপিয়া ও তার স্বামী সুমন চৌধুরীর প্রতারণার শিকার এক ব্যবসায়ীকে হুমকি দেয়ার কথা জানা গেছে। তপন তালুকদার টুকু নামের ও ব্যবসায়ী কাছ থেকে প্রতারণতার মাধ্যমে প্রায় তিন লাখ টাকা হাতিয়ে নেন পাপিয়া। বিমানবন্দর থানায় গিয়ে তিনি পাপিয়ার স্বামী সুমনের বিরুদ্ধে মামলা করা হবে জানালে সুমন হুমকি দিয়ে বলেন, ‘টাকা দেব না, আপনি প্রতারণার মামলা দেবেন তো, ওই মামলায় দুই মাসের বেশি জেল হবে না। অস্ত্র মামলাই খেয়েছি, তাতেই ভয় পাচ্ছি না। আর প্রতারণার মামলায় কি হবে?’ সূত্র জানায়, গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এমপি হওয়ার চেষ্টায় বড় অংকের টাকা বিনিয়োগ করেন পাপিয়া। কিন্তু যারা এ দায়িত্ব নিয়েছিলেন তারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে পাপিয়ার বিষয়টি উপস্থাপন করতে সাহস পাননি।
এ কারণে ওই বিনিয়োগটি বিফলে যায়। শুধু তাই নয়, জেলা যুব মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক হতে খরচ করেছিলেন এক কোটি টাকা। এছাড়া উপঢৌকন হিসেবে কতিপয় প্রভাবশালী কয়েকজন রাজনৈতিক নেতাকে দিয়েছিলেন বিশেষ উপহার। তদন্তের অগ্রগতি জানতে চাইলে বুধবার বিকালে বিমানবন্দর থানার ওসি বিএম ফরমান আলী এক জাতীয় দৈনিককে বলেন, ‘রাজধানীর বিমানবন্দর থানার এক মামলার রিমান্ডের দ্বিতীয় দিনে তদন্ত কর্মকর্তাদের নানা তথ্য দিয়েছেন পাপিয়া। আমরা যেসব তথ্য পাচ্ছি তাতে অবাক হচ্ছি। যাচাই করা ছাড়া এ বিষয়ে কিছু বলা যাবে না।’ তিনি বলেন, ‘তাদের প্রতারণার শিকার কয়েক ব্যক্তি থানায় এসে আমাদের কাছে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়ে গেছেন। আমরা সবকিছুই তদন্ত করছি। এই মুহূর্তে অনেক তথ্য প্রকাশ করা যাচ্ছে না।’ ওসি বলেন, ‘পাপিয়া ও তার স্বামী এবং দুই সহযোগীর বিরুদ্ধে বিদেশি মুদ্রা ও জাল টাকার মামলা হয়েছে। অস্ত্র ও মাদকের পৃথক মামলা হয়েছে শেরেবাংলানগর থানায়।’ নরসিংদীতে আরও একটি মামলা হয়েছে। এখন পর্যন্ত বিমানবন্দর থানার একটি এবং শেরেবাংলানগর থানার ২ টি মামলায় ৫ দিন করে মোট ১৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।
পাপিয়ার অপকর্মের সঙ্গে কোনো রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা আছে কিনা জানতে চাইলে বিমানবন্দর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) কায়কোবাদ কাজী বলেন, ‘তিনি যুব মহিলা লীগ কেন্দ্রীয় সভাপতি নাজমা আক্তার, সাধারণ সম্পাদক অপু উকিল এবং যুব মহিলা লীগ ঢাকা উত্তরের সভাপতি সাবেক এমপি সাবিনা আক্তার তুহিনের নাম বলেছেন। সব অভিযোগ যাচাই করা যায়নি।’ সব কিছুই খতিয়ে দেখা হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘পাপিয়া নিজে বাঁচার জন্যও উপর মহলের সংশ্লিষ্টতার কথা বলতে পারেন। তাই তার দেয়া তথ্য যাচাই করতে এরই মধ্যে হোটেলের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ জব্দ করা হয়েছে। এখনও ফুটেজ বিশ্লেষণ করার সুযোগ হয়নি। যেসব রাজনৈতিক নেতা, আমলা বা ব্যবসায়ীর নাম এসেছে প্রয়োজনে তাদেরও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।’ পাপিয়া দম্পতির প্রতারণার শিকার ব্যবসায়ী তপন তালুকদার টুকু জাতীয় দৈনিককে বলেন, ‘পাঁচ মাস আগে আমি ঢাকা থেকে নরসিংদী বন্ধুর বাড়ি যাই। সেখানে দেখা হয় পাপিয়ার সঙ্গে। অনুষ্ঠান শেষে পাপিয়া আমাকে তার বাড়িতে নিয়ে যায়। সেখানে ৪জন সুন্দরী তরুণীকে আমার সামনে নিয়ে আসে। জোর করে অশ্লীল ভিডিও ধারণ করে। আমাকে হুমকি দিয়ে বলেন, আপনাকে ১০ লাখ টাকা দিতে হবে। নইলে এই ভিডিও সামাজিকযোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল করে দেব। ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেব। আপনার নামে মানব পাচারের মামলা দেয়া হবে। পরে মারধর শুরু করে। মান-সম্মানের ভয়ে আমি তাৎক্ষণিকভাবে ২০ হাজার টাকা দিই। তাতেও মন গলেনি। পরে আমাকে বাড়ির ছাদে তিনদিন আটকে রাখে। এক পর্যায়ে ব্যাংকের মাধ্যমে দুই লাখ ৬০ হাজার টাকা দেয়ার পর ছাড়া পাই।’
তিনি বলেন, ‘পাপিয়ার গ্রেফতারের খবর শুনে আমি বিমানবন্দর থানায় যাই। ওসিকে ঘটনা খুলে বলি। পরে ওসি পাপিয়াকে থানা হাজত থেকে তার রুমে ডেকে আনেন। এ সময় পাপিয়াকে সালাম দিয়ে আমার ওপর নির্যাতনের ঘটনা বলি। তখন সে হাত জোর করে আমার কাছে ক্ষমা চায়। থানার ওসির সামনে বলেন, আমার ভুল হয়ে গেছে। একজনের নির্দেশে আমি ওটা করেছিলাম। তোমার টাকাটা ফেরত দেব। তুমি আইনের আশ্রয় নিও না। কিন্তু টাকা পাইনি। বুধবার ফের থানায় গিয়ে ওসিকে বলি, আমার টাকা না দিলে আমি পাপিয়ার বিরুদ্ধে মামলা করবো। তখন ওসি বলেন, আপনি মামলা দিলে নরসিংদীতে দিতে হবে। কারণ আপনার সঙ্গে ঘটনাটি সেখানে ঘটেছে। পরে ওসির রুমে পাপিয়ার স্বামী সুমনকে ডাকা হলে সুমন হুমকি দিয়ে বলেন, আপনার টাকা দেবো না। আমাদের নামে আপনি কী মামলা দেবেন? বড়জোর প্রতারণার মামলা দেবেন। এ মামলায় দুই মাসের বেশি জেল হবে না। অস্ত্র মামলা খেয়েছি। তাতেই ভয় পাচ্ছি না। আর প্রতারণার মামলায় কী হবে?’ জানতে চাইলে র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক লে. কর্নেল সারওয়ার-বিন-কাশেম বলেন, ‘মামলাটি এখন থানা পুলিশ তদন্ত করছে। র্যাবের পক্ষ থেকে তদন্তের জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমতি চাওয়া হয়েছে। অনুমতি পাওয়ার পর র্যাব আনুষ্ঠানিকভাবে তদন্ত করবে।’ তিনি বলেন, ‘পাপিয়া ও তার স্বামী অস্ত্র, জাল টাকা এবং ইয়াবা ব্যববসায় জড়িত বলে সুনির্দিষ্ট তথ্য রয়েছে।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘কেবল মাদক ব্যবসাই নয়, পাপিয়া দম্পতি প্রচুর পরিমাণে মাদক দ্রব্য সেবন করতেন বলে আমাদের কাছে মনে হয়েছে।’
র্যাব কর্মকর্তা সারওয়ার-বিন-কাশেম বলেন, ‘ভিআইপিদের ব্ল্যাকমেইলিংয়ের জন্য বিদেশি তরুণীদের ব্যবহারের বিষয়ে যে তথ্য এসেছে তা যাচাই করে দেখা হচ্ছে। তবে পাপিয়া যে সুন্দরী তরুণীদের দিয়ে যৌন ব্যবসা চালাতেন সে বিষয়টি এরই মধ্যে নিশ্চিত হওয়া গেছে।’ উল্লেখ্য, গত ২২ ফেব্রুয়ারি ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে দেশত্যাগের সময় পাপিয়াসহ চারজনকে গ্রেফতার করে র্যাব। গ্রেফতার অন্যরা হলেন, পাপিয়ার স্বামী মফিজুর রহমান ওরফে সুমন চৌধুরী ওরফে মতি সুমন (৩৮), সাব্বির খন্দকার (২৯) ও শেখ তায়্যিবা (২২)। এরপর তাদেরকে নিয়ে ফার্মগেট ও নরসিংদীর বাসায় অভিযান চালানো হয়। র্যাব অভিযান চালিয়ে ১টি বিদেশি পিস্তল, ২টি পিস্তলের ম্যাগাজিন, ২০টি পিস্তলের গু’লি, ৫ বোতল দামি বিদেশি মদ, ৫৮ লাখ ৪১ হাজার টাকা, ৫টি পাসপোর্ট, ৩টি চেকবই, বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা, বিভিন্ন ব্যাংকের ১০টি ভিসা ও এটিএম কার্ড উদ্ধার করে।
সূত্রঃ বিডি২৪লাইভ